খবর ৭১ঃ নির্জন কারাগারে এক বছর পূর্ণ হলো সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার। পুরানো ঢাকার নাজিমউদ্দীন রোডের পুরানো কেন্দ্রীয় কারাগারের একমাত্র কয়েদী খালেদা জিয়া। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায়ের প্রেক্ষিতে কারাগারে প্রেরণ করা হয় তাকে। সেই থেকে তিনি বন্দি জীবন কাটাচ্ছেন।
তার বিরুদ্ধে করা ৩৬টি মামলার মধ্যে চারটির জামিন এখনও বাকি। ৭৩ বছর বয়সী সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর হৃদযন্ত্র, চোখ ও হাঁটুসহ নানা শারীরিক সমস্যা ভুগছেন। কারাগারে খালেদা জিয়া সকালে ঘুম থেকে উঠে পত্রিকা পড়েন, ইবাদত-বন্দেগি ও বই পড়ে দিনের বেশিরভাগ সময় কাটান।
গত বছর ৩০ অক্টোবর অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় হাইকোর্ট খালেদা জিয়ার নিম্ন আদালতের দেয়া ৫ বছরের সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করেন। সম্প্রতি এ মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে। আর গত বছরের ২৯ অক্টোবর চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে ৭ বছরের কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত। সব মিলিয়ে ১৭ বছরের কারাদণ্ড হয় বিএনপি প্রধানের। এ মামলায় খালেদা জিয়ার খালাস চেয়ে হাইকোর্টে আপিল আবেদন করেন আইনজীবীরা। আপিলটি এখনও হাইকোর্টের কোনো বেঞ্চে উপস্থাপন করা হয়নি।
একা চলতে পারেন না। আদালতে বা হাসপাতালে আনতে গেলে হুইল চেয়ারই ভরসা। বয়স্ক এই নারীর জীবনের নিয়তি সেটিই এখন অনেকের প্রশ্ন। দেশের এতো বড় একজন রাজনীতিবিদ, দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী তিনি। কিন্তু পুরনো ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে যে তিনি বন্দি আছেন তা যেন ভুলেই গেছে দেশের মানুষ।
যে মামলায় খালেদা জিয়া এক বছর আগে কারাগারে গেছেন, সেই মামলায় গ্রেফতারের দেড় মাসের মাথায় জামিন পেলেও তাঁর মুক্তি মেলেনি। এই মুক্তির পথে বাদ সেধেছে আরো ৩৬ মামলা। একটি মামলায় জামিন হলে, সামনে এসে দাঁড়াচ্ছে অন্য মামলা। আর এভাবেই কেটে গেছে পুরান ঢাকার পরিত্যক্ত কারাগারে একমাত্র বন্দি হিসেবে বেগম জিয়ার একটি বছর। তার কারাবাস কি আরো দীর্ঘায়িত হবে, নাকি নাটকীয় কোন পথে তার মুক্তি প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হবে, সে বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন মত থাকলেও নিশ্চিত করে কেউ কিছু বলতে পারছেন না।
বিএনপির চেয়ারপারসনের মুক্তি কি কেবলই আইনি জটিলতা, নাকি রাজনৈতিক? বিএনপির নেতারা বলছেন, কেবলমাত্র রাজনৈতিক কারণে খালেদা জিয়া মুক্তি পাচ্ছেন না। সরকারই তাকে আটকে রেখেছে, আর সরকারের ‘মর্জি’র উপরই নির্ভর করছে বন্দী থাকা অবস্থায় দলীয় নেতাকর্মীদের কাছে গণতন্ত্রের ‘মা’ উপাধি পাওয়া খালেদার কাক্সিক্ষত মুক্তি।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি সভাপতি ও খালেদা জিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, সরকার বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে জেলে আটক করে রেখেছে। তার বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত ৩৭টি মামলা করা হয়েছে। এসব মামলার মধ্যে তিনটি বাদে সব মামলায় তিনি জামিনে আছেন। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ও কুমিল্লার একটি হত্যা মামলায় তার জামিন নেয়া বাকি আছে। এ ছাড়া অন্য মামলায় তিনি জামিনে আছেন।
জয়নুল আবেদীন বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আমরা আইনগতভাবে লড়ে যাচ্ছি। তাকে মুক্ত করার জন্য আইনগতভাবে যা যা করার আমরা করব। ইনশাআল্লাহ আমরা তাকে কারাগার থেকে মুক্ত করে আনব।