আসাদুল ইসলাম সবুজ, লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় মৌলিক স্বাক্ষরতা (গণশিক্ষা) প্রকল্পে সীমাহীন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। বাস্তবায়নকারী এনজিও আরশিনগর বাংলাদেশের বিরুদ্ধে শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম ও কেন্দ্রগুলোতে নিন্মমানে উপকরণ বিতরণের অভিযোগে তোলপাড় শুরু হয়। এরপর থেকেই বের হতে থাকে একের পর এক আরশিনগর বাংলাদেশ নামক ওই এনজিওর নানা অনিয়ম। রান্ন ঘর, গরু রাখা গোয়াল ও খড়ি রাখার ঘরে গড়ে উঠেছে মৌলিক স্বাক্ষরতা (গণশিক্ষা) প্রকল্পের স্কুল। এ ঘটনায় ৪টি অভিযোগ আমলে নিয়ে এনজিও আরশিনগর বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক বাদশা আলমকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে ৭ কর্ম দিবসের মধ্যে জবাব চেয়েছেন উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো। উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর মৌলিক স্বাক্ষরতা প্রকল্পের হাতীবান্ধা উপজেলা প্রোগ্রাম অফিসার রাশেদুল ইসলাম এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, পুরো বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন এবং প্রকল্প পরিচালন আব্দুর রহমান নির্দেশ দিয়েছেন।
জানা গেছে, হাতীবান্ধা উপজেলায় মৌলিক সাক্ষরতা (গণশিক্ষা) প্রকল্প নামে একটি কর্মসুচী চালু করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো। ওই প্রকল্পের আওতায় হাতীবান্ধায় ৩ শত শিক্ষা কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। যা বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায় আরশিনগর বাংলাদেশ নামক একটি স্থানীয় এনজিও। শুরুতেই এনজিও টির বিরুদ্ধে শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ উঠে। পরে শিক্ষা উপকরণ বাবদ ওই এনজিওটির নামে প্রায় ১৭ লক্ষ টাকা বরাদ্দ আসলেও নাম মাত্র নিন্মমানের উপকরণ সরবরাহ করে বাকি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠে এনজিও টির বিরুদ্ধে। এ সংক্রান্ত একটি সংবাদ বিভিন্ন গণ মাধ্যমে প্রকাশ হলে তা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন এবং উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর প্রকল্প পরিচালন আব্দুর রহমানের নজরে আসে। পরে ওই প্রকল্পের হাতীবান্ধা প্রোগ্রাম অফিসার রাশেদুল ইসলাম গত ৪ ফেব্রুয়ারী এনজিও আরশিনগর বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক বাদশা আলমকে কারণ দর্শানোর নেটিশ প্রদান করেন। ওই নোটিশে তিনি উলেখ করেন, কিছু মহিলা কেন্দ্র চালু থাকলে দেড় মাস অতিবাহিত হলেও কোনো পুরুষ কেন্দ্র চালু হয়নি। কেন্দ্র গুলোতে তালাচাবি, হারিকেন, তেলসহ বিভিন্ন উপকরণ দেয়া হয়নি। এ ছাড়া জরিপের ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা দীর্ঘ দিন আগে উত্তোলন করা হলেও তা জরিপকারীদের মাঝে বিতরণ করা হয়নি।
দেখা গেছে, ৩ শত কেন্দ্রের মধ্যে বেশি ভাগ কেন্দ্রের কোনো অস্তিত্ব নেই। এ ছাড়া এমন কিছু কেন্দ্র আছে যা খুজে পাওয়া যায়নি। তালিকায় সিঙ্গিমারী আলিমের ডাঙ্গা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ক্লিনিকপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে দুইটি কেন্দ্র থাকলেও ওই নামে কোনো সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই। দুই একটি কেন্দ্র খুজে পাওয়া গেলেও তা রান্না ঘর ও গরু রাখার ঘরে অবস্থিত। হাতীবান্ধার উপজেলার সিঙ্গিমারী ইউনিয়নের নছিমুদ্দিনের বাড়ি মৌলিক সাক্ষরতা (গণশিক্ষা) প্রকল্পের কেন্দ্রটি পাশ্ববর্তী মৃত আজিজের বাড়িতে রান্না ঘরে অবস্থিত।
আরশিনগর বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক বাদশা আলম এনজিও’র বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ গুলো মিথ্যা ও ভিত্তিহীন উল্লেখ্য করে বলেন, শিক্ষক নিয়োগে এনজিও’র কোনো হাত ছিলো না। স্থানীয় প্রশাসন আমাকে সহযোগিতা করছে না এবং স্থানীয় কিছু সমস্যার কারণে আমি সঠিক ভাবে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারছি না।
উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর মৌলিক সাক্ষরতা প্রকল্পের পরিচালক আব্দুর রহমান বলেন, আমরা প্রাথমিক তদন্তে অনিয়মের সত্যতা পেয়েছি। ওই এনজিওকে কারণ দর্শানোর নেটিশ দেয়া হয়েছে। তদন্ত কমিটি গঠন করা হচ্ছে, অভিযোগ প্রমাণিত হলে ওই এনজিও’র বিরুদ্ধে প্রয়োজনে মামলা দায়ের করা হবে।
এ ব্যাপারে হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সামিউল আমিন জানান, মৌলিক সাক্ষরতা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী এনজিও আরশিনগর বাংলাদেশের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ উঠেছে। এনজিওটি কর্মসুচী বাস্তবায়নে স্থানীয় প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করছে না। যা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
খবর৭১/এসঃ