খবর৭১ঃ সন্ত্রাস-জঙ্গি দমনে পুলিশের ভূমিকার প্রশংসা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে বাহিনীটির কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন সরকারপ্রধান।
পুলিশ সপ্তাহ-২০১৯ উপলক্ষে মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক সম্মেলনে তিনি এই নির্দেশ দেন।
পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, আপনাদের বেতন-ভাতা বাড়িয়েছি। যা যা দাবি করেছেন সবই মেনে নিয়েছি। মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে আপনাদেরকে শক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। সব সময় লক্ষ রাখতে হবে, দুর্নীতি একটা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করে। আর মাদক একটা পরিবার না, একটা দেশকে ধ্বংস করে। এই ধরনের কাজ যেন বাংলাদেশে আর না হয়। বাংলাদেশের প্রত্যেকটা মানুষ শান্তি পাবে, নিরাপত্তা পাবে। সেভাবেই আমরা দেশটাকে গড়ে তুলব। এই লক্ষ্য অর্জন এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও মানুষের শান্তি রক্ষায় পুলিশকে জনবান্ধব হয়ে কাজ করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার নিজের ব্যক্তিগত কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই। আমি শুধু দেশের মানুষের কল্যাণের জন্যই কাজ করে যেতে চাই। বাংলাদেশকে একটা উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলাই আমার লক্ষ্য। জাতির পিতারও একই লক্ষ্য ছিল। স্বাধীনতার পর তিনি (বঙ্গবন্ধু) কিন্তু এই কথাই বলে গেছেন যে, এখন আর ঔপনিবেশিক শক্তি না, সেই ব্রিটিশ আমলও না, পাকিস্তান আমলও না। এটা বাংলাদেশ। আর এই দেশের গ্রামেগঞ্জে ছড়িয়ে আছে এই পুলিশেরই বাবা, মা, ভাইবোন সব। দেশের মানুষ নিরাপদে, শান্তিতে থাকলে পুলিশ সদস্যদের পরিবারও শান্তিতে থাকবে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি হলে নিজের পরিবারেরও উন্নতি হবে। প্রত্যেক পুলিশ সদস্যকে এই কথাটাই মেনে চলতে হবে। সবাইকে দেশেপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দায়িত্ব পালন করতে হবে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য যে পরিবেশ দরকার, সেই পরিবেশ তৈরিতে পুলিশ বাহিনীকেই সবচেয়ে বেশি শ্রম দিতে হয়। এ শ্রমটা আপনারা দক্ষতার সঙ্গে দিয়েছেন। এ কারণে অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। এখানেই শেষ নয়। আমাদের আরও অনেক দূর যেতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদেরকে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ ও আগুন সন্ত্রাসের মতো অনেক ‘চড়াই-উতরাই’ পার হতে হয়েছে। পুলিশ বাহিনী অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে সব অবস্থার মোকাবিলা করেছে। এ জন্য পুলিশ বাহিনীকে সাধুবাদ জানাই, ধন্যবাদ জানাই।
সম্মেলনে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ-ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া পুলিশের বর্তমান জনবল প্রায় সোয়া দুই লাখ থেকে আরও অন্তত ৫০ হাজার বাড়ানোর অনুরোধ করেন।
প্রধানমন্ত্রী পুলিশের জনবল বাড়ানোরও ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে আমরা লোকবল বৃদ্ধি করেছিলাম। গত ১০ বছরে প্রায় ৮০ হাজার লোকবল বৃদ্ধি করা হয়েছে। ভৌগোলিক অবস্থা এবং মানুষ যেন পুলিশের সেবা পায় সেটা বিবেচনা করেই পুলিশের সংখ্যা বাড়ানো হয়।
পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট গড়ে তোলার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের লক্ষ্যে শিল্পাঞ্চলগুলোর নিরাপত্তার জন্য আরও শিল্প পুলিশ দরকার। মেগা প্রকল্পের নিরাপত্তার জন্যও পুলিশের প্রয়োজন। পুলিশের সংখ্যা বাড়াতে হবে।
পুলিশের প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, আলাদা, আলাদা ইউনিট গড়ে তুলে তাদের প্রশিক্ষণটাও সেভাবে হওয়া উচিত যে, কোথায় কোন মানুষের সঙ্গে কীভাবে আচরণ করতে হবে। অশান্ত পরিবেশ এলে কীভাবে সেটা দমন করতে হবে সে প্রশিক্ষণও দরকার। দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনরত অবস্থায় কোথায় কোন ধরনের পুলিশের আচার-আচরণ, ব্যবহার বা কার্যক্রম অথবা তাৎক্ষণিক অ্যাকশনে যেতে হবে, এর ওপর বিশেষ প্রশিক্ষণ দরকার।
মামলার অভিযোগপত্র, সাক্ষ্য ঠিকমতো করাসহ মামলাগুলো যাতে সময়মতো শেষ হয় সেদিকে নজর দিতেও পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, অনেক সময় দেখা যায়, এফআইআর করে ফেলে রাখা হয়েছে। সেগুলোকে চার্জশিট দেয়া, সাক্ষী নিয়ে আসার কাজগুলো অনেক সময় ঠিকমতো করা হয় না। আর কোর্টে গেলেও সেটা বছরের পর বছর আটকে থাকে। সেখানে আবার আইনজীবী লাগে, অথবা সরকার পক্ষ থেকেও লোক লাগে। এই বিষয়গুলোর জন্য আমার মনে হয়, একটা আলাদা ব্যবস্থা নেয়া দরকার। কীভাবে মামলাগুলো যথাযথভাবে চলবে এবং সময়মতো মামলাগুলো সম্পন্ন হবে, সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশে আমরা জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম, আমরা করতেও পেরেছি। এটা আমাদের অব্যাহত রাখতে হবে। আপনাদের একটা স্ট্র্যাটেজি থাকতে হবে। গোয়েন্দা নজরদারি বাড়াতে হবে।
সাইবার অপরাধ দমন আইনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, যারা নিরীহ-সাধারণ মানুষ তাদের মানবাধিকার রক্ষার জন্যই আমরা এটা করেছি।
পুলিশ বাহিনীর উন্নয়নে সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপগুলো তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, এরই মধ্যে বাজেটও বৃদ্ধি করেছি। সার্বিকভাবে বাংলাদেশের বাজেট যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে, সেই সঙ্গে পুলিশ বাহিনীর বাজেটও আমরা বৃদ্ধি করে দিয়েছি।
২০০৮ সালের নির্বাচনে সরকার গঠন থেকে সরকারের ধারাবাহিকতার দিকটি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার গঠন করা মানে হলো- আমার কাছে দেশের সেবা করার একটা সুযোগ পাওয়া। সরকারে এসে নিজের ভাগ্য গড়া নয়। দেশের মানুষের ভাগ্য কীভাবে গড়ব, তার ওপর গুরুত্ব দিয়েছি এবং সেভাবেই কাজ করে গেছি। যার ফলাফল দেশের মানুষ পেয়েছে। আজকে তৃণমূল পর্যায়ে যাতে মানুষের ভাগ্য উন্নত হয়, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। বারবার অনেক বাধা এসেছে। অনেক সমস্যা এসেছে। সেগুলো আমাদের মোকাবিলা করতে হয়েছে।
বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের দূতাবাস, মিশনগুলোতে পুলিশের পদায়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানানো হয়। বিষয়টি দেখার আশ্বাস দেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করার পর আমরা বিজয়ী জাতি হিসেবে বিশ্বে যে সম্মান পেয়েছিলাম, সেই সস্মান নস্যাৎ হয়ে গিয়েছিল ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর। কাজেই আমার চেষ্টাই ছিল, দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাবার জন্য আমাদেরকে কাজ করতে হবে। আমরা সেই চেষ্টাই করে যাচ্ছি, এ যুদ্ধে পুলিশ বাহিনীকে পাশে চাই। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে আমরা দারিদ্র্যমুক্ত করব, আর ৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। এ জন্য রাজনৈতিক পরিস্থিতি শান্ত ও স্থিতিশীল থাকতে হবে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, পুলিশের মহাপরিদর্শক ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দিন, অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন) মোখলেসুর রহমান, ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া,পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) (হাইওয়ে) আতিকুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মনিরুল ইসলাম, ঢাকা তেজগাঁও জোনের উপকমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার এবং রাজবাড়ী পুলিশ সুপার আসমা সিদ্দিকা মিলি প্রমুখ।
খবর৭১/এস;