খবর৭১ঃসিলেট সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মুহ. হায়াতুল ইসলাম আকঞ্জি বলেছেন, কবি আফজাল চৌধুরী শাশ্বত সুন্দর জীবনদর্শনে আলোকিত এক নির্ভীক, অকুতোভয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তাঁর সাহিত্য সাধনায় সার্বজনীন বিশ্বাস এবং কর্মের ছিল অপূর্ব সম্মিলন। নতুন প্রজন্ম তাঁকে যতই জানবে, ততই সমৃদ্ধ হবে। তাদের মন ও মনন সত্যের আলোয় উদ্ভাসিত হবে। একজন আলোকিত শিক্ষক হিসেবেও আলোর দ্যুতি ছড়িয়ে নিজেই স্মরণীয় হয়ে আছেন।
কবি আফজাল চৌধুরী ফাউন্ডেশন, সিলেট-এর উদ্যোগে কল্যাণব্রতের কবি আফজাল চৌধুরীর ১৫তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ফাউন্ডেশনের সভাপতি শিক্ষাবিদ কবি কালাম আজাদের সভাপতিত্বে গত সোমবার সন্ধ্যায় সিলেট কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের সাহিত্য সংসদের সাহিত্য আসর কক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
ফাউন্ডেশনের সদস্য সচিব কবি মুকুল চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন কবি ও শিক্ষাবিদ লে. কর্নেল (অব.) সৈয়দ আলী আহমদ, বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ইংরেজি দৈনিক দ্যা ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস-এর ডাইরেক্টর কবি আব্দুল হান্নান সেলিম, আলোচনায় অংশ নেন কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের সহ সভাপতি গল্পকার সেলিম আউয়াল, সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান মাহমুদ রাজা চৌধুরী, শাবিপ্রবি’র সহকারী রেজিস্ট্রার আহমদ মাহবুব ফেরদৌস, প্রবাসী সাংবাদিক সাঈদ চৌধুরী, কলামিস্ট বেলাল আহমদ চৌধুরী, অধ্যাপক কবি বাছিত ইবনে হাবীব, সাবেক এপিপি এডভোকেট শাহ আলম মহিউদ্দিন, ছড়াকার এখলাসুর রহমান।
ফাউন্ডেশনের সদস্য প্রাবন্ধিক জাহেদুর রহমান চৌধুরীর স্বাগত বক্তব্যে স্মরণসভার শেষে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন কবি আফজাল চৌধুরীর পুত্র, মদনমোহন কলেজের প্রভাষক মুহাম্মদ জিন্নুরাইন চৌধুরী. মোনাজাত পরিচালনা করেন হাফিজ মাওলানা আবিদ হাসান, আফজাল চৌধুরীর কবিতা আবৃত্তি করেন কবি নাজমুল আনসারী। শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন হিফজুর রহমান মারুফ, সংগীত পরিবেশন করেন ইমরান আনসারী, মিসবাহ উদ্দিন এবং আব্দুল আলী। এছাড়া স্মরণসভায় সিলেটের সাহিত্য-সংস্কৃতি অঙ্গনের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। প্রধান আলোচকের বক্তব্যে কবি শিক্ষাবিদ লে. কর্নেল (অব.) সৈয়দ আলী আহমদ বলেন, কবি আফজাল চৌধুরী ছিলেন এক সুবিশাল প্রতিভার অধিকারী এক ব্যক্তিত্ব। তাঁর চিন্তা-চেতনা, ধ্যান-ধারণা, কণ্ঠের নিজস্ব স্বর ছিল। নিজস্ব শব্দভান্ডার দিয়ে তিনি বলিষ্ঠ কণ্ঠে সত্য ও সুন্দরের আহবানকে প্রচার করতেন। প্যান ইসলামিজমে উদ্বুদ্ধ আফজাল চৌধুরী সাহিত্য সাধনার মাধ্যমে বিশ্বমানবতার জয়গানকেই উচ্চকিত করেছেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কবি আব্দুল হান্নান সেলিম বলেন, বিশ্বাস এবং কর্মের প্রতি তাঁর অবিচল ভালোবাসা ছিল বলেই সারাজীবন সত্যের পথে চলেছেন। কলমকে শাণিত করেছেন ঐশি জ্ঞানের আলোয়। সেই আলো ছড়িয়ে দিয়েছেন মানুষের মনে। তাঁর ক্ষয় নেই। তিনি সাহিত্যে বেঁচে থাকবেন।
সিলেট কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের সহ সভাপতি গল্পকার সেলিম আউয়াল বলেন, কবি আফজাল চৌধুরী স্বাপ্নিক মানুষ ছিলেন। অত্যন্ত সাহসী ছিলেন। সত্য ও ন্যায়ের কথা বলতে লিখতে তিনি কারো পরোয়া করতেন না। সত্যের পথে আপোসহীন কবি আফজাল চৌধুরী বিশ্বাস এবং কর্মের মধ্যে যুগসূত্র স্থাপনে ছিলেন অনড়, অবিচল। নতুন প্রজন্মকে তাঁকে অবশ্যই পাঠ করতে হবে।
সিলেট কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান মাহমুদ রাজা চৌধুরী বলেন, কবি আফজাল চৌধুরী তাঁর সাহিত্য সাধনার মাধ্যমে মুসলিম জাতিসত্ত্বাকে জাগ্রত করার প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। মুসলিম উম্মাহর খেদমতে তিনি রেখেছেন অসামান্য অবদান। তাঁর সাহিত্যে আধ্যাত্মিকতার সযতœ প্রকাশ মন ও মননকে ঋদ্ধ ও সমৃদ্ধ করবে এতে কোনো সন্দেহ নেই।
সভাপতির বক্তব্যে ফাউন্ডেশন সভাপতি কবি কালাম আজাদ বলেন, বাংলা সাহিত্যে ব্যতিক্রমধর্মী এক ব্যক্তিত্বের নাম কবি আফজাল চৌধুরী। কর্মে ও কলমে তিনি তুলে এনেছেন সত্য ও ন্যায়ের সুমহান বাণীকে। ছড়িয়ে দিয়েছেন আলো। একজন সত্যিকার মুসলিম হিসেবে সাহিত্যে তিনি মূল্যবোধের জায়গায় তুলে ধরেছেন প্রগাড় সত্যকে। তাঁর চর্চা যত বেশি হবে, নতুন প্রজন্মের চিন্তা-চেতনা ততবেশি আলোকিত হবে।
উল্লেখ্য, কবি আফজাল চৌধুরী ছিলেন বৃন্দাব সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ। বাংলাদেশের এই প্রথিতযশা এই শিক্ষাবিদ কবির পনেরটিরও বেশি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া আরো কয়েকটি বই প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে। শিক্ষা প্রশাসকের দায়িত্ব পালনসহ কাজ করেছেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনেও। কবি আফজাল চৌধুরীর ২০০৪ সালের ৯ই জানুয়ারি সিলেটে ইন্তেকাল করেন।
খবর৭১/ইঃ