মুকুরুল ইসলাম মিন্টু চৌগাছা (যশোর)ঃযশোরের চৌগাছা উপজেলার অধিকাংশ সড়কের চরম বেহালদশার সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরে সংস্কার বা পুনঃনির্মান না করার ফলে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ। আবার যে সব সড়ক সংস্কার করা হয়েছে সেখানে সুভাংকারের ফাঁকি দেয়া হয়েছে। যার ফলে সড়কগুলোর উপর পিচ ইট খোয়া উঠে সৃষ্টি হয়েছে গর্তের। প্রতিনিয়ত অসহোনীয় কষ্ট আর চরম দূর্ভোগ নিয়ে মানুষ চলাচল করছেন, ঘটছে দূর্ঘটনা। বিশেষ করে জেলা সদরের সাথে যোগাযোগের একমাত্র সড়কটির অবস্থা অত্যান্ত নাজুক। ৪,৯৯৯.৬৬ লক্ষ টাকা ব্যয়ে এই সড়কটি নির্মান করা হবে বলে তিন মাস আগে সাবেক এমপি ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। কিন্তু আজও কাজ শুরু হয়নি। গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটিসহ উপজেলার ভাঙ্গা চোরা প্রতিটি সড়ক দ্রুত মেরামতের জন্য সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এ জনপদের মানুষ।
উপজেলা তথ্য, পরিকল্পনা ও বাজেট বই সূত্রে জানা গেছে, অত্র উপজেলাতে মোট পাকা সড়কের সংখ্যা ১৩টি, যার দৈর্ঘ্য ১০৮ দশমিক ৬২ কিলোমিটার, ইউনিয়ন পাকা সড়কের সংখ্যা ২০টি, যার দৈর্ঘ্য ১০৬ দশমিক ৭২ কিলোমিটার, অন্যান্য গ্রামীণ সড়ক এ’ ৫৭টি, যার দৈর্ঘ্য ১৪৫ দশমিক ৯৩ কিলোমিটার ও গ্রামীণ সড়ক বি’ ২৭১টি, যার দৈর্ঘ্য ৩৫৩ দশমিক ৫২ কিলোমিটার। এইচবিবি/বিএফএস/ ডব্লুএমবি সড়ক রয়েছে ৭৫ দশমিক ২৪ কিলোমিটার। এ ছাড়া কাঁচা সড়ক হচ্ছে ৪১১ দশমিক ৯২ কিলোমিটার। এসব সড়কের মধ্যে অধিকাংশ সড়কই দীর্ঘ দিন ধরে কোন মেরামত কিংবা পুনঃনির্মান করা হয়নি। যার কারনে প্রতিটি সড়কের উপর থেকে ইট পিচ খোয়া উঠে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্তের। কোথাও কোথাও সড়কের এমন বেহালদশার সৃষ্টি হয়েছে যেখানে পায়ে হেটেও চলা এখন দুরুহ ব্যাপার হয়ে উঠেছে। অসহনীয় কষ্ট আর দূর্ভোগকে সাথে নিয়ে প্রতিদিন মানুষ এই সব স[ড়ক দিয়ে যাতায়াত করছেন। চলাচল অনুপযোগী সড়কের মধ্যে অন্যতম একটি সড়ক হচ্ছে চৌগাছা-যশোর সড়ক, যার দৈর্ঘ্য ২৪ কিলোমিটার। এই সড়কটির চৌগাছা হতে চুড়ামনকাটি বাজার পর্যন্ত ১৭ কিলোমিটার সড়কের অধিকাংশ জায়গা এখন মরণফাদে পরিনত হয়েছে। চৌগাছা হাসপাতাল সংলগ্ন সড়ক, কড়াইতলা, কয়ারপাড়া বাজার, সিংহঝুলী খাঁবাড়ি মোড়, মল্লিকবাড়ি, মুক্তিনগর, নিমতলা বাজার, আফরা মোড় হতে সলুয়া কলেজ পর্যন্ত সড়ক দেখে বুঝার উপায় নেই এটি কোন এক সময় পাকা সড়ক ছিল। সড়ক সংলগ্ন বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক, পথচারীসহ নানা শ্রেনী পেশার মানুষের সাথে কথা হলে তারা জানান, চৌগাছা-যশোর সড়কটির গুরুত্ব সবার উর্ধে। কেননা এই সড়কটি জেলা সদরের সাথে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। সড়কটি বছরের পুরো সময় ধরেই চলাচলের অনুপযোগী থাকে বলেও অভিযোগ অনেকের। গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটি হচ্ছে তুলনা মুলক অনেক সরু, তার উপর ভাঙ্গা চোরা কিভাবে মানুষ এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করবে। নানা কারনে চৌগাছা উপজেলা আজ দেশের মধ্যে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে। যার করনে দেশের অন্য সব প্রান্ত থেকে মানুষ এখানে ছুটে আসছেন ব্যবসা বানিজ্যসহ নানা কাজে। তারা যশোর পর্যন্ত ভাল ভাবে আসতে পারলেও চুড়ামনকাটি বাজার পার হয়েই পড়েন চরম বিপাকে। স্থানীয়রা জানান, সড়কটির বেহালদশার কথা বিবেচনা করে সাবেক সংসদ সদস্য এ্যাড, মনিরুল ইসলাম মিনর ২০১৮ সালের ২ নভেম্বর ৪,৯৯৯.৬৬ লক্ষ টাকা ব্যয়ে চুড়ামনকাটি পর্যন্ত সড়কটি নির্মান করা হবে মর্মে এর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। চৌগাছা ফিলিং ষ্টেশনের পাশেই তার নামফলক এখনও জলজল করছে। এমপি সাহেবের এই নামফলক স্থাপনের সময় অনেকে আশায় বুক বাঁধে হয়ত দীর্ঘ দিনের কষ্ট নিবারন হতে যাচ্ছে। কিন্তু দেখতে দেখতে তিন মাস পার হয়েছে কিন্তু আজও কাজ শুরুর কোন আলামত মানুষ দেখতে পাইনি। জীবনের ঝুকি নিয়ে মানুষ চলাচল করছেন।
সূত্র জানায়, সময়ের ব্যবধানে সীমান্তবর্তী উপজেলা চৌগাছা অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এই উপজেলায় প্রতিষ্ঠিত দক্ষিন এশিয়ার সর্ববৃহৎ তুলা গবেষনা ও বীজ বর্ধন খামার, প্রতিষ্ঠিত হয়েছে গামেন্টস শিল্পের মত বড়শিল্প কলকারখানা, সুবিশাল দুটি কোল্ড ষ্টোরেজ। দেশ সেরা মডেল হাসপাতাল তাও চৌগাছাতে। নানা কারনে এ জনপদের মানুষ চৌগাছা-যশোর সড়কটি ব্যবহার করেন। জেলা সদরের সাথে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম এই সড়কটির বেহালদশার ফলে চরম বিপাকে পড়তে হচ্ছে সব শ্রেনী পেশার মানুষের। সড়কটির এই বেহালদশার কারনে ব্যবসা বানিজ্যেও দেখা দিয়েছে মন্দাভাব এমনটি মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। চৌগাছার সার্বিক উন্নয়নের কথা বিবেচনা করে অতি দ্রুত গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটি পুনঃনির্মানের দাবি করছেন এ জনপদের সর্বস্তরের মানুষ।
খবর৭১/ইঃ