রাণীনগরে এক মন্দিরের ৯ বিঘা’র ও বেশি সম্পত্তি বেদখল

0
295

সুকুমল কুমার প্রামানিক, রাণীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধি: নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার সদর ইউনিয়নের খট্টেশ্বর সরকারপাড়া গ্রামের শ্রী শ্রী গোপিনাথ মন্দিরের (দেবত্রের) ৩ একর ৭ শতক (প্রায় ৯ বিঘা ১০ শতাংশ) ফসলী জমি বেদখল। প্রায় কোটি টাকা মূল্যের এইসব সম্পত্তি দখলে নিয়েছে ওই গ্রামের কয়েকজন স্থানীয় প্রবাভশালী ব্যক্তিরা বলে অভিযোগ উঠেছে। মন্দিরের বর্তমান কমিটি দায়িত্ব গ্রহণের পর দখলীয় সম্পত্তি উদ্ধারের জন্য ধর্মী বিষয়ক মন্ত্রনালয়, রাজশাহীর ইন্ডিয়ান হাই-কমিশনার, নওগাঁ জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার বরাবরসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে মন্দিরের জমি গুলো বেদখল হওয়ায় অর্থাভাবে মন্দিরের অনেক অনুষ্ঠান এখন প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।

পুলিশের উর্ধ্বতন কতৃপক্ষ অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিষয়টি তদন্তের জন্য রাণীনগর থানা পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন। ইতিমধ্যেই তদন্ত কাজ সম্পূর্ণ করেছে পুলিশ। সম্পত্তি উদ্ধারের জন্য বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করায় বিবাদীরা মন্দির কর্তৃপক্ষকে বিভিন্ন ভাবে হুমকি-ধামকিও দিচ্ছে বলে ওই মন্দিরের সেবায়েতরা জানান।

অভিযোগে জানা গেছে, রাণীনগর উপজেলা সদরের খট্টেশ্বর সরকারপাড়া গ্রামে অবস্থিত শ্রী শ্রী গোপিনাথ মন্দিরের নামে বর্তমানে প্রায় ৭ একর ৩৩ শতক আবাদী জমি রয়েছে। উপজেলার কাশিমপুরের জমিদার প্রসন্ন লাহিড়ী সেবায়েত সূত্রে তৎকালীন ওই মন্দিরের সেবায়েত কৈলাশ চন্দ্র প্রামানিকসহ ০৭ জন সেবায়েতকে সম্পত্তি পরিচালনার দায়িত্বভার প্রদান করেন। যাহার সি.এস খতিয়ান নং-৫০৫ এবং সি.এস খতিয়ান নং-৫০৬, জেএল নং- ৬৯, মৌজা:- খট্টেশ্বর রাণীনগর, রকম: ধানী, পরিমাণ-৭ একর ৩৩ শতক। ১৯৬২ সালে এসএ খতিয়ান উপরোক্ত সেবায়েতদের নামে রেকর্ডভূক্ত হয়। পরবর্তীতে ১৯৬৮ সালে মাঠ জরিপে ওই মন্দিরের সেবায়েত সুধীর কুমার সরকারসহ ১৫ জন সেবায়েতের নামে সম্পত্তি রেকর্ড হয় এবং ১৯৭২ সালে ওই ১৫ জন সেবায়েতের নামেই চূড়ান্ত খতিয়ান প্রস্তুত হয়। যাহার আর.এস খতিয়ান নং- ১০১৩, জেএল নং-৩১, মৌজা: খট্টেশ্বর রাণীনগর, রকম-ধানী, পরিমাণ-৭ একর ৩৩ শতক।

মন্দিরের মোট সম্পত্তির মধ্যে ৩ একর ৭ শতক জমি ওই গ্রামের মৃত ছকি মোল্লা’র ছেলে সফির উদ্দিন মোল্লা ১৬০ শতক, মৃত দশরত সরদারের ছেলে মো: বাছের আলী সরদার, তাছের আলী সরদার ও মৃত রহমান সরদারের ছেলে বাচ্চু সরদার ১১৫ শতক এবং মৃত সিরাজুল ইসলামের ছেলে মো: সাফি প্রাং ৩২ শতক জমি জোর পূর্বক ভোগ দখল করছে। দখলদাররা প্রভাবশালী হওয়ায় জমিতে উৎপাদিত ফসল থেকে মন্দিরের সেবাই কোন প্রকার হি¯্রা না দেওয়ায় অর্থাভাবে মন্দিরের অনেক অনুষ্ঠান এখন প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। বাধ্য হয়ে সম্পত্তি উদ্ধারের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ করায় মন্দির কর্তৃপক্ষকে বিভিন্ন ভাবে হুমকি-ধামকি দিচ্ছে দখলদাররা।

এখন অভিযুক্ত দখলদাররা দাবি করছেন এই সব জমি তাদের ক্রয়কৃত। পুলিশের উর্ধ্বতন কতৃপক্ষ অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিষয়টি তদন্তের জন্য রাণীনগর থানা পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন। ওই নির্দেশে রাণীনগর থানার এসআই মো: শহিদুল ইসলাম ইতিমধ্যেই তদন্ত কাজ সম্পূর্ণ করেছেন বলে জানা গেছে।

খট্টেশ্বর গ্রামের শ্রী শ্রী গোপিনাথ মন্দিরের সভাপতি শ্রী: দিবাকর চন্দ্র সরকার ওরফে বুদন ও সাধারণ সম্পাদক শ্রী: নিরাঞ্জন চন্দ্র সরকার ওরফে বাবলু জানান, লিখিত অভিযোগে উল্লেখিত ব্যক্তিরা প্রভাবশালী হওয়ায় আমাদের মন্দিরের সম্পত্তি গুলো দখল করে রেখেছেন। মন্দিরে হি¯্রা প্রদান করাতো দূরের কথা এখন তারা ওই জমির মালিক বলে দাবি করছেন। সম্পত্তি গুলো জোর পূর্বক দখল করার কারণে দীর্ঘদিন ধরে মন্দিরের অনেক অনুষ্ঠান প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। বাধ্য হয়ে সম্পত্তি গুলো উদ্ধারের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেছি। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করায় আমাদেরকে দখলকারিরা বিভিন্ন ভাবে হুমকি-ধামকি দিচ্ছে। দখলকৃত সম্পত্তি দখলমুক্ত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট অনুরোধ জানিয়েছেন তারা।

মন্দিরের জমি দখলে রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে দখলদার মো: বাছের আলী সরদার বলেন, ওই মন্দিরের সেবায়েত সুধীর চন্দ্র শীল ও সূর্য্যকান্ত শীল আমাদের কাছে জমি বিক্রয় করেছে। সেই থেকে আমরা ওই সম্পত্তি ভোগদখল করে আসছি।

এব্যাপারে রাণীনগর থানার ওসি এএসএম সিদ্দিকুর রহমান বলেন, উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের নিদের্শ মোতাবেক বিষয়টির তদন্ত কাজ সম্পূর্ণ। তদন্ত রিপোর্ট প্রস্তুত করে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর পাঠানো হবে।

এব্যাপারে রাণীনগর উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট টুকটুক তালুকদার বলেন, খট্টেশ্বরের দেবত্র সম্পত্তি নিয়ে যে পরিস্থিতি চলমান এ বিষয়ে আমার অফিসে কোন আভিযোগ এখন পর্যন্ত পাইনি। কিন্তুু মন্দিরের (দেবত্র) সম্পত্তি বিক্রি করার কোন বিধান আইনে নেই। সে অনুযায়ী কোন অভিযোগ আমার দপ্তরে পরে তাহলে বিষয়টি নিস্পত্তি করার চেষ্টা করবো ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ কররো।#

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here