আসাদুল ইসলাম সবুজ, লালমনিরহাটঃ উত্তরের জনপদ ও সীমান্তবর্তী জেলা লালমনিরহাটে শত শত মাদকের নেটওয়ার্ক ভেঙ্গে দিয়েছে জেলা পুলিশ। অথচ কিছুদিন আগেও মাদক চোরাকারবারি ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তাদের যোগসাজশের অভিযোগ ছিল। সেই পুলিশেই মাদকের বিরুদ্ধে সেই সব মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। এক সময় লালমনিরহাট জেলায় মাদকের ভয়াবহতা নিয়ে আতঙ্ক কাজ করতো এই জেলার সব শ্রেণীর মানুষের মধ্যে। হাত বাড়ালেই মিলত মাদক। সব সময় স্কুল-কলেজের বারান্দাতে চলত ফেন্সিডিল ও গাঁজা সেবন। এ কারনে দিশেহারা হয়ে পড়ে অভিভাবকরা।
এ নিয়ে কথা হয় মোগল হাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও দুরাকুটি হাই স্কুলের গভর্নিং বডির সভাপতি হাবিবুর রহমান হাবিবের সঙ্গে। তিনি বলেন, মাদকের কারনে অন্য অপরাধের মাত্রাও বেড়ে যায় গত কয়েক বছরে। এখন সময় বদলেছে। মাদকের বিরুদ্ধে আজ সবাই সোচ্ছার। পুলিশের ইতিবাচক ভুমিকার কারনে মাদক ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম একেবারেই কমে গেছে বললেই চলে। বিশেষ করে বর্তমান পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হক আসার পরেই এই পরিস্থিতি একেবারেই পাল্টে যায়।
জানা যায়, বছর দু’য়েক আগেও দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মাদকদ্রব্য পাচার রুট হিসেবে পরিচিত ছিল এই লালমনিরহাট জেলা। কিন্তু চিত্র এখন পুরোটাই ভিন্ন। মাদক ব্যবসায়ীদের অনেকেই এখন এলাকা ছাড়া। তাদের মধ্যে কেউ মন দিয়েছে কৃষিতে কেউ বা ব্যবসায়। মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশের অব্যাহত অভিযানেই স্বস্তি ফিরেছে জনমনে। এক সময়ের মাদকের আখড়া মোগলহাটের নামও পরিবর্তন করে বর্তমানে নাম রাখা হয়েছে গোল্ডেন ভিলেজ। এজন্য স্থানীয় অভিভাবক মহল পুরো কৃতিত্ব দিলেন বর্তমান জেলা পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হক। মাদকের বিরুদ্ধে এমন অবদান রাখার জন্য রংপুর রেঞ্জের শ্রেষ্ঠ পুলিশ সুপার নির্বাচিত হয়েছেন বেশ কয়েকবার। মাদক নির্মূলে বিশেষ অবদান রাখায় শুধু মাত্র গত বছরেই লালমনিরহাট জেলা পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হক ছয় ছয়বার শ্রেষ্ঠ পুলিশ সুপারের অর্জন করে ক্রেষ্ট উপহার পান।
ভারতীয় সীমান্তবর্তী লালমনিরহাট জেলার মাদক নিয়ন্ত্রনের চ্যালেঞ্জ নিয়ে ২০১৬ সালের ১৯ জুলাই পুলিশ সুপার হিসেবে যোগ দেন এস এম রশিদুল হক। এরপর থেকে একের পর এক অভিযান ও জেলায় কর্মরত পুলিশ সদস্যদের তৎপরতায় প্রতিনিয়ত মাদকসহ ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করে পুলিশ। এক পর্যায়ে পুলিশি তৎপরতায় প্রায় দুই হাজার মাদক ব্যবসায়ী আনুষ্ঠানিকভাবে মাদক ছেড়ে দিয়ে নতুন করে জীবনযাপনের শগথ নেন। শুধু অভিযানেই সীমাবদ্ধ নেই এ জেলার পুলিশ। মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদসহ সামাজিক বিভিন্ন অপরাধ নির্মূলে প্রতিঠি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও পাড়া-মহল্লায় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গদের নিয়ে সভা সেমিনারও করেছেন লালমনিরহাট পুলিশ সুপার।
মাদক সেবন থেকে ফিরে আসা এক সেবনকারীর বাবা নজরুল ইসলাম বলেন, প্রথমেই ধন্যবাদ জানাই বর্তমান জেলা পুলিশ সুপার মহোদ্বয়কে জেলায় মাদকের প্রবনতা বন্ধ করার জন্য। তিনি এ জেলায় যোগদানের পর থেকেই মাদক ব্যবসায়ীরা মাদক ব্যবসা ছেড়ে একে একে এ জেলা থেকে পালিয়ে যাচ্ছে। অনেকে আত্মসমর্পন কওে ভালর পথেও যাওয়ার শপথ নিয়েছেন। তিনি মাদক ব্যবসায়ীদের এ মহতী উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হকের জন্যই তিনি তার সন্তানকে মাদক সেবক থেকে ফিরিয়ে আনতে সমর্থ হয়েছেন। তিনি মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশ সুপারের এই তৎপরতাকে স্বাগত জানিয়েছেন।
মাদক বিরোধী অভিযান সম্পর্কে কথা হয় জেলা পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হকের সাথে। তিনি বলেন, মাদক বিরোধী সচেতেনতা বাড়াতে আমরা দুইভাবে কাজ করছি। প্রথমত, পুলিশের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সভা সেমিনার, লিফলেট বিতরন, স্থানীয় ক্যাবল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে প্রচার-প্রচারনা চালানো হয়। পাশাপাশি তাদের ধরে আইনের আওতায় এনে ব্যবস্থা নেয়া। আইনী ব্যবস্থার মাধ্যমেও সচেতেনতা বাড়ানো যায়। এটি অবশ্য আমরা খুব শক্ত হাতে করছি। মাদকের বিরুদ্ধে লালমনিরহাট পুলিশ সব সময় বিরোধীতা করে আসছে।
তিনি আরও বলেন, একার পক্ষে কোন কিছুই করা সম্ভব হয় না। এই জেলায় আমি যোগদানের পরেই প্রতিটি পুলিশের প্রতিটি সদস্যের কাছে বার্তা পৌছে দেয়া হয়েছে। কনষ্টবল থেকে শুরু করে একেবারে উর্দ্ধতন অফিসাররাও এ ব্যাপারে একাট্ট এখন। মাদক নির্মূলে এখন জেলার আপামর সকল জনগনের সহযোগীতা পাচ্ছি। কখনো উৎসাহ দিয়ে আবার কখনো কড়া অনুশাসনের মাধ্যমে পুলিশ সদস্যদের মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে বলা হয়েছে। তারাও সেভাবেই অভিযান চালিয়ে বর্তমানে লালমনিরহাটের গোটা জেলায় মাদকের প্রবনতা প্রায় জিরো টলারেঞ্জে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছি।
খবর৭১/ইঃ