আসাদুল ইসলাম সবুজ, লালমনিরহাটঃ ৬ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) লালমনিরহাট পাক হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের ওই দিনে লালমনিরহাটকে হানাদার বাহিনীর হাত থেকে শত্রু মুক্ত হয়। এর আগে পাক হানাদার বাহিনী ৩ মার্চ লালমনিরহাট দখল করে। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মরণপন লড়াই আর মুক্তিগামী জনগণের দুর্বার প্রতিরোধে বড়খাতা, হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ, আদিতমারী ও লালমনিরহাটে পতন হতে থাকে পাক হানাদার বাহিনী। এক পর্যায়ে চূড়াস্ত বিজয়ের পূর্ব মুহূর্তে মুক্তিযোদ্ধারা লালমনিরহাট শহর ঘিরে ফেললে অবস্থা বেগতিক দেখে ওই দিনে ভোর ৬ টায় লালমনিরহাট রেলওয়ে স্টেশন থেকে পাক সেনা, রাজাকার, আলবদর ও তাদের দোসররা ২টি বিশেষ ট্রেনে করে রংপুর ক্যান্টমেন্টে পালিয়ে যায়।
লালমনিরহাটে ওই দিনে এখানে সর্বত্রই ছড়িয়ে পড়ে মুক্তির উল্লাস আর আনন্দ। ৬ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধের মুখে পাক বাহিনীর হাত থেকে মুক্ত হয় এ জেলা। মুক্তিযুদ্ধের সময় ১১টি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছিল। এর মধ্যে ৬নং সেক্টরটি লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারীতে অবস্থিত। এ সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন বিমান বাহিনীর এম খাদেমুল বাশার। লালমনিরহাট শত্রু মুক্ত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে চারদিক থেকে লোকজন ছুটে আসতে থাকে শহরের দিকে। সন্ধ্যার মধ্যে শহরের প্রাণকেন্দ্র মিশন মোড় এলাকায় লোকজন পরিপূর্ণ হয়ে যায় আর মুক্তির উল্লাস করতে থাকে। স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে শহর ও গ্রাম। আনন্দে উদ্বেলিত কন্ঠে স্বদেশের পতাকা নিয়ে ছুটোছুটি করতে থাকে তরুণ, যুবক, আবাল, বৃদ্ধ, বনিতা সকলই। শহরের বিভিন্ন রাস্তায় বেড়িয়ে পড়ে আনন্দ মিছিল। বাঁধ ভাঙ্গা জোয়ারের মতো মানুষ জয় বাংলা ধ্বনি দিয়ে ও বিজয়ের পতাকা নিয়ে ঢুকে পড়ে লালমনিরহাট শহরে।
লালমনিরহাট মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সূত্রে জানা গেছে, জেলার প্রায় ২ হাজার মুক্তিযুদ্ধা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। শহীদ হয়েছেন ৩১ জন। এদের মধ্যে লালমনিরহাট সদরে ১০ জন, আদিতমারী ২ জন, কালীগঞ্জ ৭ জন, হাতীবান্ধা ৯ জন, পাটগ্রাম ১ জন, কুমিল্লা জেলার ২ জন। জেলার ১ হাজার ৫৪৪ জন মুক্তিযোদ্ধা জীবিত রয়েছেন। জেলায় গণকবরের (বদ্ধভূমি) সংখ্যা ৪০টি । বদ্ধভূমিগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে মাত্র। বদ্ধভূমি গুলো সংস্কার ও প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানান জেলার সকল মুক্তিযোদ্ধারা।
গতকাল বুধবার ৫ ডিসেম্বর লামনিরহাটের একমাত্র বীর প্রতীক ক্যাপ্টেন (অব.) আজিজুল হক এ প্রতিবেদককে জানান, স্বাধীনতার ৪৭ বছর অতিবাহিত হলেও অনেক মুক্তিযোদ্ধা অনাহারে অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছে। মুক্ত দিবসের এই দিনে সহায়-সম্বলহীন মুক্তিযোদ্ধাদের পূর্ণঃবাসন করার জন্য বর্তমান সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
লালমনিরহাট জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মেজবাহ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, প্রতিবছরের ন্যায় এবারেও এই দিনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা অর্পণ, র্যালী ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক সূত্র জানায়, ওই দিনটি উদযাপনের জন্য লালমনিরহাটের বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, মুক্তিযোদ্ধা সংগঠন, সাংবাদিকবৃন্দ ও জেলা প্রশাসন বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। সকাল ১০টায় র্যালি ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে জেলা কমিনিউটি সেন্টারে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।
খবর৭১/এসঃ