খবর ৭১: দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেছেন, কমিশন দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে কোনো কালো টাকা বা অবৈধ সম্পদ অর্জনকারীদের দেশের জনগণ নির্বাচিত করবে না। জনগণ তাদের ভোট দেবে না।
তিনি বলেন, নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। তবে নির্বাচনী ব্যায়ের নামে কালো টাকা ব্যয়ের বিষয়টি দুদক পর্যবেক্ষণ করবে। কমিশন প্রত্যাশা করে নির্বাচনী ব্যায়ের ক্ষেত্রে সবাই স্বচ্ছতা বজায় রাখবেন। নির্ধারিত সময়েই নির্বাচন কমিশনে ব্যয় বিবরণী জমা দেবেন। হলফনামায় মিথ্যা তথ্য দিলে বা এক্ষেত্রে অবৈধ সম্পদের কোনো বিষয় থাকলে দুদক আইনি প্রক্রিয়া অবলম্বন করবে।
বৃহস্পতিবার দুদকের চতুর্দশ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে এক মতবিনিময় সভায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, সংবিধান লঙ্ঘন করে যারা কালো টাকা অর্জন করেছেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এক্ষেত্রে ব্যক্তির রাজনৈতিক, সামাজিক বা পেশাগত পরিচয় কমিশনের কাছে কোনো বিবেচ্য বিষয় নয়। ব্যক্তি যদি সংবিধান লঙ্ঘন করে কালো টাকা বা অবৈধ সম্পদ অর্জন বা পেশি শক্তি ব্যবহার করে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেন তবে তাকে কমিশন আইন-আমলে নিয়ে আসবে।
ইকবাল মাহমুদ বলেন, কমিশন যে উদ্দেশ্যে গঠন হয়েছিল বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে তা হয়তো কাঙ্খিত মাত্রায় সফল হয়নি। তবে দুর্নীতি দমনে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে।
তিনি একটি ঘটনার উদাহরণ টেনে বলেন, দুদকের কমিশনের কর্মকতারা দায়িত্ব পালনকালে পেশীশক্তি দ্বারা আক্রান্তত হলে, জনগণ যেভাবে স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিরোধে এগিয়ে আসার কথা ছিল। কিন্তু তারা সেভাবে এগিয়ে আসেনি। তবে বিলম্বে হলেও প্রতিবাদ হয়েছিল। এ ঘটনায় আমাদের শিক্ষা দেয় আমরা এখনও কাঙ্খিত পর্যায়ে মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারিনি।
তিনি বলেন, আত্মসমালোচনা করতে আমি ভয় পাই না। কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমরা অঙ্গীকার করেছিলাম প্রতিটি অনুসন্ধান বা তদন্ত নির্ধারিত সময়ে সম্পন্ন করব। বাস্তবে তা সম্ভব হয়নি। সে কারণেই জনআস্থার ঘাটতি রয়েছে । তিনি কর্মকর্তাদের আরও আন্তরিকতার সাথে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান।
তিনি আরও বলেন, কমিশন পদ্ধতিগত সংস্কারের মাধ্যমে সরকারি সেবা প্রদানের পথকে মসৃন ও নিষ্কলুষ করার চেষ্টা করছে। কমিশন চায় দুর্নীতি ঘটার আগেই তা প্রতিরোধ করতে। তাই কমিশন বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক টিমের মাধ্যমে বিভিন্ন সরকারি দফতর বা সংস্থার দুর্নীতির সম্ভাব্য উৎস চিহ্নিত করে তা বন্ধে সুপারিশ প্রণয়ন করে সরকারের নিকট প্রেরণ করছে। এগুলো স্বতঃসিদ্ধ কোনো বিষয় নয়। কমিশনের নিজস্ব বিচেনায় এসব সুপারিশ প্রণয়ন করা হচ্ছে।
সরকারি কর্মকর্তারা যদি কোনো অবৈধ চাপ বা অনৈতিক কোনো উদ্দেশ্যে দুর্নীতি করেন তা হলে তাদেরও কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হতে পারে বলেও সতর্ক করেন দুদক চেয়ারম্যান। তবে অনিকৃচ্ছাকৃত ভুলের কারণ কারও বিরুদ্ধে কমিশন কোনো মামলা-মোকদ্দমা করবে না।
তিনি বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশনকে তখনই সক্ষম প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচনা করা হবে, যখন কমিশনের মামলায় শতভাগ সাজা নিশ্চিত হবে। যদিও এক্ষেত্রে বর্তমান কমিশনের সফলতা রয়েছে। কারণ সাজার হার ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়ে তা প্রায় ৭০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
দুদক পরিচালক মীর জয়নুল আবেদীন শিবলীর নেতৃত্বাধীন দুদক গোয়েন্দা ইউনিটের কার্যক্রমের প্রশংসা করে ইকবাল মাহমুদ বলেন, বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে দুর্নীতিবাজ হিসেবে জনশ্রুতি আছে এমন অনেক ব্যক্তির অপকর্মের আমলানামা এখন দুদকের হাতে। সময় এবং সুযোগ বুঝেই এদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
তিনি বলেন, যদি সরকারী কর্মচারী আইনে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের সম্পদ বিবরণী প্রদানের কোনো বিধি-বিধান না থাকে, তাহলে আগামী বছর তাদের সম্পদ বিবরণির ব্যবস্থাপনার বিষয়টি নিয়ে দুদক কাজ করতে পারে।
মতবিনিয় সভায় দুদক কমিশনার এ এফ এম আমিনুল ইসলাম বলেন, দুদক দেশের প্রায় ২৫ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সততা সংঘ গঠন করেছে। দেশের তৃণমূল পর্যায়ে গণশুনানি করছে।
মতবিনিময় সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কমিশনের সচিব ড. মো. শামসুল আরেফিন, মহাপরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান, পরিচালক শিরিন পারভীন, উপপরিচালক মো. গোলাম শাহরিয়ার চৌধুরী, সহকারী পরিচালক সেলিনা আখতার মনি প্রমুখ।