উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনি: বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ’র স্ত্রী বেগম ফজিলাতুন্নেসার মৃত্যুতে নড়াইলে সর্বস্তরের মানুষ শোক জানিয়েছেন। সেই সাথে তাঁকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২২ নভেম্বর) বিকাল ৪টায় নড়াইল শহরের কুড়িরডোব মাঠে নড়াইলের জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা বেগম ও নড়াইলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, পিপিএম সরকারি কাজে বাইরে থাকায় নড়াইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোঃ শরফুউদ্দীনের উপস্থিতিতে মরদেহে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। পরবর্তীতে বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদের বাড়ি নূর মোহাম্মদ নগরে তাঁকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদার সাথে দাফন করা হয়। এদিকে বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদের সহধর্মিনীর মৃত্যুতে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার তাদের শোক সন্তুপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। বিস্তারিত আমাদের নড়াইল জেলা প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায়ের রিপোর্টে, ডিসি আনজুমান আরা বেগম ফেসবুকে লিখেছেন, নড়াইলের কৃতী সন্তান বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ’র সহধর্মিণী ইন্তেকাল করেছেন। তাঁর মৃত্যুতে জেলা প্রশাসন নড়াইল গভীরভাবে শোকাহত। আল্লাহ তায়ালা উনাকে জান্নাতবাসী করুন। আমীন। এসপি মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন (পিপিএম) বলেন, জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান শহীদ ল্যান্স নায়েক বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ’র স্ত্রীর মৃত্যুতে পুলিশ প্রশাসন গভীরভাবে শোকাহত। নড়াইল জেলা অনলাইন মিডিয়া ক্লাবের সভাপতি উজ্জ্বল রায় ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ হিমেল মোল্যা বলেন, স্বাধীনতার সূর্য সন্তান বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখের সহধর্মিনী মোছাঃ ফজিলাতুন্নেছা’র মৃত্যুতে গভীরভাবে শোকাহত । এছাড়া নড়াইলের বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা এবং বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সাধারণ মানুষ তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন। বুধবার (২১ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৭টার দিকে ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ফজিলাতুন্নেসা । তিনি ডায়াবেটিকসহ বার্ধক্যজনিত কারণে গত ২৭ অক্টোবর হাসপাতালে ভর্তি হন। এদিকে ফজিলাতুন্নেসার নিকটাত্মীয় আসাদ রহমান বলেন, বৃহস্পতিবার নড়াইলের নূর মোহাম্মদ নগর গ্রামে ফজিলাতুন্নেসাকে দাফন করা হবে। অসুস্থ হওয়ার আগে ফজিলাতুন্নেসা নড়াইল শহরের বাড়িতেই বসবাস করতেন। তিন মেয়ে ও এক ছেলেসহ আত্মীয়-স্বজন রেখে গেছেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গণের সাহসী সন্তান বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ ১৯৩৬ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি নড়াইল সদর উপজেলার মহিষখোলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। নূর মোহাম্মদের জন্মস্থান মহিষখোলার নাম পরিবর্তন করে ২০০৮ সালের ১৮ মার্চ ‘নূর মোহাম্মদনগর’ করা হয়। নূর মোহাম্মদ শেখ ১৯৫৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলসে (ইপিআর) যোগদান করেন। বর্তমানে ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ’ (বিজিবি) নামে প্রতিষ্ঠিত। দীর্ঘদিন দিনাজপুর সীমান্তে চাকরি করে ১৯৭০ সালের ১০ জুলাই যশোর সেক্টরে বদলি হন। পরে ল্যান্স নায়েক পদে পদোন্নতি পান নূর মোহাম্মদ। ১৯৭১ সালে যশোর অঞ্চল নিয়ে গঠিত ৮ নম্বর সেক্টরে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে যশোরের শার্শা থানার কাশিপুর সীমান্তের বয়রা অঞ্চলে ক্যাপ্টেন নাজমুল হুদার নেতৃত্বে পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। এ সময় এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত ৮ নম্বর সেক্টর কমান্ডার ছিলেন কর্নেল (অব.) আবু ওসমান চৌধুরী এবং সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত কমান্ডার ছিলেন মেজর এসএ মঞ্জুর। ১৯৭১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর যশোরের গোয়ালহাটি ও ছুটিপুরে পাকবাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন নূর মোহাম্মদ। যশোরের শার্শা থানার কাশিপুর গ্রামে তাকে সমাহিত করা হয়। মুক্তিযুদ্ধে বীরোচিত ভূমিকা ও আত্মত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ খেতাবে ভূষিত হন।
খবর৭১/ইঃ