বগুড়ার ভেলুরপাড়া স্টেশন ৯ বছর ধরে বন্ধ

0
707

রিপন দাস, বগুড়া ঃ সান্তাহার বোনারপাড়া লাইনে ভেলুরপাড়া রেলওয়ে স্টেশনটি দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় এলাকায় ব্যবসা-বাণিজ্যে বিরুপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। একই সাথে পণ্য পরিবহন এবং যাতায়াতে খরচও বেড়েছে এলাকাবাসীর।
বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার ভেলুরপাড়া রেলওয়ে স্টেশনটির ক্রসিং ব্যবস্থা প্রায় নয় বছর ধরে বন্ধ হওয়ায় সেখানকার মানুষের জীবন জীবিকায় নেমে এসেছে স্থবিরতা।
১৯৩৭ সালে ভেলুরপাড়া স্টেশনটি স্থাপন করা হয়। প্রতিদিন ট্রেনে করে দেশের বিভিন্ন স্থানে পণ্য পরিবহনের পাশাপাশি মানুষ যাতায়াত করতো। কিন্তু ২০০৯ সালে হঠাৎ করেই ওই স্টেশনটি বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। এতে স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যহত হয়। এই সিদ্ধান্তের পর বেসরকারী ব্যবস্থাপনায় চলা লোকাল ট্রেন ওই স্টেশনে থামলেও সরকারী ব্যবস্থাপনায় চলা এন্টারসিটি, করতোয়া ও লালমনি এক্সপ্রেসসহ ঢাকা গামী কোন ট্রেনই থামে না ভেলুরপাড়া স্টেশনে। এ অবস্থায় ওই স্টেশনকে ঘিরে গড়ে ওঠা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। পণ্য পরিবহন ও যাতায়াতের ক্ষেত্রেও ব্যয় বেড়েছে কয়েকগুণ।
এ বিষয়ে ভেলুরপাড়া এলাকার এজুল সিংহাদার জানান, ট্রেন বন্ধ হওয়ার কারণে আমাদের খুব অসুবিধা হয়ে গেছে। সাত টাকা ভাড়া দিয়ে আমরা বগুড়া যেতে পারতাম কিন্তু সেখানে এখন ৬০ টাকা ভাড়া লাগে। এতে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য হোটেলসহ প্রায় সব ধরণের দোকান বন্ধ হয়ে গেছে।
অন্যান্য স্টেশনের মতই এ স্টেশনেও জনবল ছিল অনেক। কিন্তু কর্তৃপক্ষ জনবলও কমিয়ে ফেলে। ফলে সেখানে এখন মাত্র দুইজন লোক দিয়ে স্টেশন সচল রাখা হয়েছে।
ভেলুরপাড়া স্টেশনের পয়েস ম্যান মোঃ শহিদুল ইসলাম জানান, স্টেশন যখন চালু ছিল তখন ২ জন স্টেশন মাস্টার, ৪ জন পয়েস ম্যান, ১ জন পোটার এবং ১ জন সাব গেট ম্যান ছিল। স্টেশন বন্ধ হওয়ার পরে এখন ১ জন পয়েস ম্যান ও ১ জন সাব গেট ম্যান আছে আর সবাই চলে গেছে। আমরা পাল্টাপাল্টি করে এই স্টেশন পাহারা দেয়।
রেলওয়ে কর্মকর্তারা জানান, গত নয় বছরের মধ্যে মাত্র এক মাস স্বাভাবিক কার্যক্রম ছিল ওই স্টেশনে। এ অবস্থায় সান্তাহার বোনারপাড়া লাইনে ট্রেন চলাচলের ক্ষেত্রেও সমস্যা হচ্ছে নানা ধরণের।
স্টেশনটির স্বাভাবিক কার্যক্রম না থাকায় যে সমস্যা হচ্ছে সে বিষয়ে জানতে বগুড়া স্টেশন মাস্টার মোঃ বেনজুরুল ইসলাম জানান, রেলওয়ে স্টেশন মানেই একটি জন সমাগম এলাকা এবং সেখানে যাত্রীদের যাওয়া আসার ফলে একটা বাজার হাটের মত পরিবেশ সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে ভেলুরপাড়া স্টেশনটি সব ধরণের মানুষ চলাচল করে থাকে। এই স্টেশন বন্ধ হওয়ার পরে সেখানে অর্থনৈতিক কর্মকা- প্রায় স্থবির হয়ে গেছে। স্টেশনের আশেপাশে সব ধরণের দোকান বন্ধ হয়ে গেছে। ভেলুরপাড়া স্টেশন বন্ধ হওয়ার ফলে বড় সমস্যা হলো দুটো লাইনের ট্রেনের ক্রসিং ব্যবস্থা। কোন গাড়ী এক সাথে আসা যাওয়ার সুযোগ নেই। এছাড়া অপারেশন সাইটটি সঠিকভাবে নিরুপণ করতে পারি না। এখানে স্টেশন মাস্টার না থাকার কারণে ঢাকা মুখি কোন ট্রেনও থামে না।
মালবাহী কোন ট্রেন না থামলেও লোকাল কিছু ট্রেন থামে। তবে সেখানে ট্রেনের নিজ ব্যবস্থায় যাত্রী উঠা-নামা করে কোন ধরণের নিয়ম না মেনে। একই স্টেশনে বেসরকারী ব্যবস্থাপনায় যেসব ট্রেন চলছে তার ভাড়া সরকারী ব্যবস্থাপনায় চলা ট্রেনের ভাড়ার চেয়ে দ্বিগুণ।
এলাকাবাসীসহ সেখানকার সব ধরণের শ্রেণী ও পেশার মানুষের দাবী এটি আবার স্বাভাবিকভাবে চালু করে এ অঞ্চলের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ফিরে আনা।

খবর৭১/ইঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here