মুকুরুল ইসলাম মিন্টু চৌগাছা (যশোর)ঃ নতুন প্রযুক্তি ও আধুনিক চাষ পদ্ধতি পরিবর্তনের ফলে কৃষি ক্ষেত্রে দেখা দিয়েছে পরিবর্তন। কৃষকরা নতুন চাষ পদ্ধতি গ্রহন করে তাদের চাষের ধরন পাল্টে ফেলেছেন। বিশেষ করে প্রান্তিক কৃষকরা এখন সময়ের সাথে কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন কৃষিপণ্য উৎপাদন করছেন। চৌগাছা উপজেলার বিস্তৃর্ণ মাঠেও চলছে সেই প্রযুক্তির ব্যবহার। ইদানিং অন্যান্য সবজি ফসলের পাশাপাশি নতুন পদ্ধতির মাধ্যমে বিলুপ্ত প্রায় মেটে আলুর চাষ করে কৃষি ক্ষেত্রে সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত করছেন। খরচের তুলনায় লাভের সম্ভাবনায় বেশী। বর্তমানে উপজেলাতে প্রায় ২০ হেক্টোর জমিতে মেটে আলুর চাষ হচ্ছে বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, এমন এক সময় ছিল যখন উপজেলার বিস্তৃর্ণ মাঠে শুধুমাত্র শীতকালীন সবজি চাষ হলেও বর্তমানে তা বার মাসই ব্যাপক বিস্তার লাভ করেছে। বর্তমানে উপজেলার পতিত জমিতে নতুন করে চাষ হচ্ছে গাছ আলুর, যাকে গ্রাম বাংলার ডাকে মেটে আলু বলে। মুলত মাটির নিচে এই ফসল হওয়ায় একে মেটে আলু বলেই সকলেই চেনে। বেলে ও বেলে দোঁয়াশ মাটিতে এই আলুর চাষ সব থেকে বেশি হচ্ছে। উপজেলার জগদীশপুর, মির্জাপুর, স্বর্পরাজপুর, তেঘরী, বিশ্বনাথপুর, স্বরুপদাহ গ্রামের বিস্তৃর্ণ মাঠে মেটে আলুর ব্যাপক চাষ হচ্ছে। মেটে আলু কন্দালজাতীয় ফসল। আমাদের দেশে এটি সবজি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বানিজ্যিক ভাবে এর চাষ তেমন একটা চোখে পড়েনা। তবে দেশের প্রতিটি জেলায় বাড়ির চারপাশে, গাছের নিচে, মাচায়, অঙিনায়, বেড়ার ধারে এর চাষাবাদ হতে দেখা যায়। মেটে আলু গরম আবহাওয়াতে ভালো জন্মে। হালকা দোয়াশ মাটি আলু চাষের জন্য বেশি উপযোগী।
গতকাল উপজেলার জগদীশপুর মির্জাপুর গ্রামের মাঠে যেয়ে দেখা যায় ব্যাপক ভাবে চাষ হয়েছে মেটে আলুর। ক্ষেতের চারি পাশে বেড়া দিয়ে চাষ করা হয়েছে এই আলুর। আবার অনেকে পতিত জমিতে মাচা তৈরী করে আলুর চাষ করেছেন। খরচ কম লাভ বেশি হওয়ায় কৃষকরা এই সবজি চাষের দিকে ঝুকছে। বিশেষ করে পতিত ও মাচা করা ফসলের ক্ষেতে (সাথী ফসল) হিসাবে এই মেটে আলুর চাষ হচ্ছে। এ সময় কথা হয় জগদীশপুর গ্রামের রোকনুজ্জামানের সাথে, তিনি বলেন, আমাদের এলাকার মাটির গুনাগুন ও আবাহাওয়ার দিক বিবেচনা করে বর্তমান সময়ে মেটে আলুর চাষ ব্যাপক বিস্তার লাভ করেছে। মুলত তিনটি জাতের মেটে আলু এখানকার জমিতে বেশি ফলন দেয়। সে গুলো হলো গাড়ললতা, মুন্সি, হরিণ প্লে ও মাচরাঙ্গা। তবে হরিণ প্লের চেয়ে মাচরাঙ্গা ও গাড়ললতার চাষ অনেকটাই বেশি। এ অ লের কৃষকরা জানান, আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে ১ বিঘা জমি থেকে ৮০ থেকে ১শ’ মন আলু উৎপাদিত হয়। প্রতি কেজি আলুর স্থানীয় বাজার দর ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। বলা চলে বিনা খরচে অধিক লাভবান হচ্ছে চাষিরা। তাই দিন দিন মেটে আলুর চাষের দিকে চাষিরা আগ্রহ হচ্ছেন। কৃষকরা বলেন, মেটে আলুর চাষে কোন খরচ নেই বললেই চলে। কেননা আলু চাষের আগে ওই জমিতে মাচা করে ঝিঙা, উচ্চে কিংবা পটোলের চাষ করা হয়। সেই ফসল নষ্ট হওয়ার আগেই জমিতে আলুর বীজ বপন করি। সে কারনে বাড়তি কোন খরচ করতে হয় না। সুতারং এর চাষ বিষয়ে একটু সচেতন হলেই সবজির ঘাটতি মেটাতে, বাড়ির আশপাশে পরিত্যাক্ত স্থানের সঠিক ব্যবহার করতে, বালাইনাশক ব্যবহার ছাড়াই এর চাষ বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখবে। মেটে আলু ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের খুবই ভালো উৎস। এ ছাড়া প্রচুর পরিমানে পটাশিয়াম ও সোডিয়াম রয়েছে মেটে আলুতে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আলু শরীরের ভেতরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। আলুতে থাকা ভিটামিন-সি ও ভিটামিন-বি আমাদের শরীরের দূর্বলতা সরাতে সাহায্য করে। আলুতে কোন চর্বি বা ফ্যাট নেই বললেই চলে। অথচ এতে আছে লোহ ও ক্যালসিয়ামের মত খনিজ উপাদান। এই দুটি খনিজ উপাদান হার্টের অসুখ প্রতিরোধে সাহায্য করে। আলুতে প্রচুর পরিমানে পটাশিয়াম থাকায় এটি শরীরের উচ্চ রক্তচাপ কমাতে দারুন ভাবে সাহায্য করে। আলুকে বলা হয় স্কার্ভি ও রিউমেটিক প্রতিরোধক। আলুর প্রোটিন কিডনি রোগীদের জন্য উপকারী। শিশুদের জন্য আলু খুবই সহায়ক খাদ্য।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রইচউদ্দিন জানান, খরচ কম লাভ বেশি তাই চাষিরা দিন দিন আলু চাষের দিকে ঝুপে পড়ছেন। বিশেষ করে পতিত জমি ও বাড়ির আশপাশে এই চাষ ভাল হওয়ায় প্রতি বছর আলু চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। উপজেলা কৃষি অফিস কৃষকদের সার্বিক সহযোগীতা দিয়ে যাচ্ছে বলে তিনি জানান।
খবর৭১/ইঃ