সুকুমল কুমার প্রামানিক, রাণীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধি: বদলে যাচ্ছে এই জনপদের মানুষের জীবনমান। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর গত ১০ বছরে নওগাঁর রাণীনগর উপজেলায় প্রকল্প বাস্তবায়ন দপ্তর (পিআইও), বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) আওতায় প্রায় ৫ শতাধিক কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
বর্তমান সরকারের উন্নয়নের রোল মডেলে যুক্ত হওয়ায় রাণীনগর উপজেলার দৃশ্যপট যেমন পাল্টে গেছে তেমনি এই জনপদের মানুষের অর্থনৈতিক চাকাও আরো জোরে ঘুরতে শুরু করেছে যা পূর্বে এই জনপদের অবহেলিত মানুষের কাছে ছিলো শুধু স্বপ্ন। সম্প্রতি বহু কাঙ্খিত নওগাঁ-নাটোর আঞ্চলিক মহাসড়কের অসমাপ্ত কাজের উদ্বোধনের মধ্যে দিয়ে এই জনপদের মানুষের দীর্ঘদিনের আরেকটি স্বপ্ন বাস্তবায়িত হলো।
এই উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে খানা-খন্দকে ভরা রাস্তাগুলো সংস্কার, প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের মেঠোপথকে নতুন করে পাকাকরন, নতুন করে খাল খননসহ মরে যাওয়া খালগুলো পুন:খনন, নতুন সেতু কালভার্ট নির্মাণসহ পুরাতন সেতু-কালভার্ট সংস্কার করা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আইসিটি সমৃদ্ধ আধুনিক ভবন নির্মাণসহ প্রায় ৫ শতাধিক কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে।
সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান উন্নয়নের সরকার ক্ষমতায় আসার পর গত ২০০৯ সাল থেকে চলতি বছর পর্যন্ত এই উপজেলায় ৯ শত ১৩ টি প্রকল্পের আওতায় আর্থ-সামাজিক অবকাঠামোর ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। ইতিমধ্যে ১ শত ৪২ কোটি ৮ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ৮ শত ৪৬ টি প্রকল্পের আওতায় ২ শত ৩৭ কিলোমিটার রাস্তা, ৯ শত ৩৩ মিটার ব্রীজ, উপজেলা কমপ্লেক্স ভবন, মুক্তিযোদ্ধা ভবন, ভূমিহীন ও অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের বাসস্থান, স্লুইসগেট ও বিদ্যালয় ভবন নির্মাণসহ বিভিন্ন কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। এছাড়া ৮ কোটি টাকা ব্যায়ে ২১ টি প্রকল্পের আওতায় কাজ চলমানসহ অনুমোদিত রয়েছে ৪৩ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা ব্যায়ে ৪৬ টি প্রকল্পের কাজ।
বরেন্দ্র বহুমূখী উন্নয়ন প্রকল্প (বিএমডিএ) এর আওতায় গত ১০ বছরে পাকা রাস্তা নির্মাণ, প্রায় ৯৯ কিলোমিটার খাল পুন:খনন, ফুটওভার ব্রীজ ও রাবার ক্রসড্যাম নির্মাণ, বাঁধের উপর ফলজ, বনজ ও ঔষধী বৃক্ষ রোপন, বজ্রনিরোধোক তাল বীজবপন, গভীর নলকূপ ও নলকূপে ভূ-গর্ভস্থ সেচ নালা নির্মাণ, খাবার পানির স্থাপনা নির্মাণ ও উন্নত বীজ উৎপাদন, পুকুর পুন:খনন, স্মাট কার্ডের মাধ্যমে গভীর নলকূপ পরিচালনাসহ বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে।
প্রকল্প বাস্তবায়ন অধিদপ্তরের আওতায় প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে বরাদ্দকৃত জমি আছে ঘর নেই প্রকল্পের আওতায় ১ কোটি ৮৫ লাখ টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন (৩৮৫ টি ঘর), আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর নির্মাণ, বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ, সেতু-কালভার্ট নির্মাণ, বানভাসীদের মাঝে খাবার ও শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরনসহ আর্থ সামাজিক উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৩ শতাধিক কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প সম্পন্ন করা হয়েছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো: মেহেদী হাসান বলেন, আমরা বর্তমান সরকারের দেওয়া উন্নয়নের অঙ্গিকার শতভাগ বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করেছি। তবে চলমান প্রকল্পগুলো সম্পন্ন হলে এই উপজেলার দৃশ্যপট আরো পাল্টে যাবে। সেই সঙ্গে এই জনপদে বসবাসরত মানুষের জীবনমান আরো বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি আশাবাদি।
রাণীনগর উপজেলা বরেন্দ্র বহুমূখী উন্নয়ন প্রকল্পের সহকারী প্রকৌশলী মো: তিতুমির রহমান বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর গত ১০ বছরে আমার দপ্তরের আওতায় প্রায় ৫০ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়েছে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হওয়ায় বিশেষ করে দীর্ঘদিনের মরে যাওয়া খালগুলো খননের কারণে একদিকে যেমন ভূ-গর্ভস্থ পানি সমস্যা কমে গেছে, অন্যদিকে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ব্যাপক সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। কয়েক হাজার হেক্টর জমিতে খালগুলো খননের ফলে জমে থাকা পানি সেচ দিয়ে ধানের আবাদসহ শষ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে।
রাণীনগর উপজেলা প্রকৌশলী মো: সাইদুর রহমান মিঞা বলেন, বর্তমান সরকারের নির্দেশ মোতাবেক দেশের গ্রামীণ জনপদের মেঠোপথকে আধুনিক মানসম্মত পাঁকা রাস্তায় পরিণত করেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। এরই ধারাবাহিকতায় স্থানীয় সংসদ সদস্যের অক্লান্ত পরিশ্রমে উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামের অলি থেকে গলি পর্যন্ত এখন পাঁকা করা হয়েছে।
স্থানীয় সংসদ সদস্য মো: ইসরাফিল আলম বলেন, এক সময়ের রক্তাক্ত জনপদে চরমপন্থাকে মোকাবেলা করে প্রাণ বাজি রেখে শান্তির সু-বাতাস এনেছি। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার আগে এই জনপদের মানুষ ছিলো চরম অবহেলিত। জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনী অঙ্গিকারকে তৃনমূল পর্যায়ে বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করেছি মাত্র। রাণীনগর ও আত্রাই উপজেলার উন্নয়ন করার মাধ্যমে শেখ হাসিনার উন্নয়নের রোল মডেলে যুক্ত হতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি। আশা রাখি যে সব প্রকল্প চলমান রয়েছে সেই সব প্রকল্প শেষ হলে এই অবহেলিত জনপদের মানুষের ভাগ্যের চাকা দ্রুত ঘুরে যাবে।#