শামুক কুড়িয়ে নড়াইলের ৬ হাজার নারী- পুরুষের সংসার

0
363

উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি: নড়াইলে শামুক কুড়ানো এখন
৬ হাজার নারী-পুরুষের মৌসুম পেশা হিসাবে পরিনত হয়েছে। এ সমস্ত শামুক ব্যবহৃত হচ্ছে
মাছের ঘেরে। শুধু নড়াইলেই নয়। নড়াইলের শামুক যাচ্ছে খুলনা, বাগের হাট, যশোর, সাতক্ষিরাসহ
দেশের বিভিন্ন জেলায়।
শামুক কুড়ানো পেশার সাথে জড়িত এলাকার ৬ হাজারের মধ্যে প্রায় ২ হাজার মহিলা, আর ৪
হাজারের অধিক পুরুষ। প্রতিদিন এসকল নারী পুরুষ ৪/৫ ঘণ্টা কাজ করে আয় করছেন ৩৫০ থেকে
৪০০ টাকা। বছরের প্রায় ছয় মাস এই কাজের সুযোগ থাকায় প্রতি মৌসুমে এক একজন
আয় করছে ৪৫ থেকে ৬০ হাজার টাকা। এতে তাদের সংসারে এসেছে সচ্ছলতা।
ইদানিং নড়াইলে মাছের ঘেরগুলোতে ব্যপক হারে ব্যবহৃত হচ্ছে শামুক। শামুকের ভিতরের সাদা অংশ
মাছের জন্য খুবই স্বাস্থ্য সম্মত খাবার। তাই ঘের মালিকরা এসকল শামুক ক্রয় করে মাছের মাছের
খাবার হিসাবে ব্যবহার করছে।
নড়াইলে চিংড়ি ও সাদা মাছের ঘের রয়েছে ৬ হাজার ৩০ টি। আর এই মৎস্য চাষের সাথে কমপক্ষে
১২ হাজার মানুষ জড়িত রয়েছে। বর্ষা মৌসুমে প্রায় ৫ থেকে ৬ মাস এসব মৎস্য ঘেরগুলোতে
মাছের খাবারের জন্য শামুক ব্যবহার করেন ঘের মালিকরা। বর্ষার কারণে বাড়ির পাশের খাল-বিল, নদী-
নালাগুলোতে প্রচুর পরিমাণ পানি থাকে আর এই পানিতে শামুক পাওয়া যায়। এসব শামুক খাল-
বিল থেকে তুলে এনে এলাকার নারী-পুরুষ তা বিক্রি করে। অনেক পরিবারের সদস্যরা তাদের নিজেদের
ঘেরে শামুক কুড়িয়ে দিচ্ছেন। প্রতিকেজি আস্ত শামুক বিক্রি হয় ৬ থেকে ৭ টাকা করে। আর
শামুকের ভিতরের অংশ বের করতে এক টাকা পঞ্চাশ পয়শা থেকে দুই টাকা করে দিতে হয় কেজি
প্রতি। আর শামুকে খোসা বিক্রি হয় প্রতি বস্তা ৮০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্তু। মৌসুমে
জেলার তিনটি উপজেলার কমপক্ষে ৬ হাজার মানুষ শামুক কুড়িয়ে বাড়তি রোজগার করেন। তবে
লোহাগড়া উপজেলার লাহুড়িয়া ও নলদী এবং সদরের বিছালী, শিংগাশোলপুর,কলোড়া, শেখহাটি,
পেড়োড়ী ইউনিয়নে এই শামুক বেশি কেনা-বেচা হয়।
সদর উপজেলার ছোনখোলা গ্রামের মর্জিনা বেগম, আমাদের নড়াইল প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায়কে
জানান, আমাদের নিজেদের ঘেরের জন্য শামুক সংগ্রহ করা হয়।
সেলিমা বেগম বলেন, আমাদের দুইটি ঘের রয়েছে একটি ১০ বিঘার আর একটি সাড়ে ৩ বিঘা।
বর্ষা মৌসুমে অন্যান্য খাবারের থেকে বেশি পরিমাণে শামুক ঘেরে ব্যবহার করে থাকি। শামুক
মাছের জন্য খুব উপকারি, এই খাবারে অন্যান্য খাবারের তুলনায় খরচ কম হয় ।
বিল থেকে শামুক কুড়িয়ে বিক্রি করেন বিছালী গ্রামের মিরাজ হোসেন তিনি বলেন, ভোর
বেলা থেকে দুপুর পর্যন্তু শামুক বেশি পাওয়া যায়। ফযরের আজানের সময় থেকে শামুক কুড়ানো
শুরু করি। দিনের বেলা যখন প্রচ- গরম শুরু হয় তখন আর শামুক পাওয়া যায় না।
জাকির মিয়া ও রাকিব হোসেন বলেন, বিল থেকে শামুক কুড়ানোর জন্য ছোট নৌকা অথবা তাল
গাছের তৈরী ডুঙ্গা ব্যবহার করেন তারা। যাদের নৌকা অথবা ডুঙ্গা নেই তারা বিলের পানিতে
নেমে হেটে হেটে শামুক সংগ্রহ করে। শামুক প্রতিদিন সমানভাবে পাওয়া যায় না। একজন
মানুষ সকাল থেকে দুপুর পর্যন্তু ৫০ থেকে ১শ কেজি শামুক তুলতে পারে। দিনে সাড়ে ৩’শ থেকে
৪’শ টাকা আয় হয় আমাদের।
খুলনা থেকে শামুক কিনতে আসা ঘের ব্যবসাযী হাসমত সিকদার, আমাদের নড়াইল প্রতিনিধি
উজ্জ্বল রায়কে জানান, বিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি খুলনাতে মাছ চাষ করেন। গত ৬/৭ বছর
যাবৎ তিনি নড়াইলের বিভিন্ন এলাকা থেকে শামুক ক্রয় করে নিয়ে যান। নসিমন, মিনি ট্রাক,
ট্রাকে করে সেই শামুক খুলনাতে নিয় যান তিনি।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. এনামুল হক, আমাদের নড়াইল প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায়কে বলেন,
শামুকে প্রোটিন, লিপিট, কার্বারাইডেড থাকে যা মাছের জন্য উপকারী। শামুক আমাদের
পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্যও প্রয়োজন রয়েছে এটি নিধন করা ঠিক না। বর্তমানে বিভিন্ন
কোম্পানির উৎপাদিত ফিস ফিড রয়েছে যাতে মাছ বৃদ্ধির প্রয়োজনীয় উপাদান রয়েছে
শামুকের উপাদানের চেয়েও অনেক বেশি। আমরা সেগুলো ব্যবহারের জন্য মৎস্য চাষীদের উৎসাহীত
করছি।
খবর৭১/ইঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here