খবর৭১ঃ‘আর বেশি কাঁদালে উড়াল দেবো আকাশে’ কিংবা ‘এই রূপালি গিটার ফেলে একদিন চলে যাবো দূরে বহুদূরে’-এরকম গানে হারিয়ে যাওয়ার কথা বলেছিলেন তিনি। আজ তিনিই হারিয়ে গেলেন চিরতরে। পাড়ি জমালেন না ফেরার দেশে। তিনি কিংবদন্তি ব্যান্ড তারকা আইয়ুব বাচ্চু।
বৃহস্পতিবার সকালে স্ট্রোক করে মৃত্যুর কোলে ঘুমিয়ে পড়েন আইয়ুব বাচ্চু। তার অকাল মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ গোটা দেশ। তুমুল জনপ্রিয় এই শিল্পীর প্রয়াণ বাংলা গানের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।
আইয়ুব বাচ্চুর জন্ম চট্টগ্রামে ১৯৬২ সালে। মাত্র ১৬ বছর বয়সে রক সংগীতকে যখন জীবনের ধ্যান-জ্ঞান হিসেবে গ্রহণ করে নেন তিনি। এরপর ঢাকায় এসে অনেক সংগ্রাম আর সাধনায় অর্জন করেন জনপ্রিয়তা।
বছর দূ’য়েক আগে একটি গণমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে আইয়ুব বাচ্চু তার সংগ্রামী জীবনের অনেক কথা জানান। এবি বলেন, আমার সন্তানেরা ছোটবেলা থেকে আমার মুখে একটা গল্প শুনে অভ্যস্ত। এই ঢাকা শহরে ১৯৮৩ সালের শেষের দিকে মাত্র ৬০০ টাকা নিয়ে এসেছিলাম। উঠেছিলাম এলিফ্যান্ট রোডের একটি হোটেলে।
ঢাকা শহরে আমি যখন ৬০০ টাকা নিয়ে আসি, তখন এখানে আমার অনেক আত্মীয়স্বজন থাকতেন। আমি কারও কাছেই যাইনি। বিপদে কারও মুখাপেক্ষীও হইনি। নিজেকে গড়ে তুলেছি। কাজে হাত দিয়েছি। কাজের পর কাজ করেছি। এখনো করেই যাচ্ছি। দিনরাত্রি কাজ করে একটা অবস্থানে পৌঁছাতে পেরেছি।
আমার কাছে ওই ৬০০ টাকা ছিল ৬ কোটি টাকার মতোই। সামনে অনেক পথ খোলা ছিল। সবকিছু পাশ কাটিয়ে গেছি। চলার পথে এমন কিছু মানুষের সঙ্গে পরিচয় ছিল, যাদের নাম শুনলে আতঙ্কিত হতে হতো। শুধু তা-ই নয়, আমার পরিচিত অনেকে মাদকসেবনও করত। চাইলে আমিও হয়তো বখে যেতে পারতাম। কিন্তু মিউজিকই ছিল আমার ধ্যানজ্ঞান। আমি সেই লক্ষ্যে ছুটে গেছি।
১০ বছর লেগেছে আমার সেই কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছাতে। এই ১০ বছরে আমি ভেসে যেতে পারতাম। হয়তো আমার কোনো পাত্তাই পাওয়া যেত না। কিন্তু আমি ভাসিনি। আশপাশে নানা ধরনের মানুষের সঙ্গে দেখা হয়েছে। অনেক ধরনের লাইফস্টাইলের সঙ্গে পরিচিত হয়েছিলাম। কিন্তু যে লাইফস্টাইল আমার পরিচিত না, যেটার সঙ্গে আমার পরিবার একমত না—এ ধরনের লাইফস্টাইল থেকে নিজেকে সংবরণ করেছি। কারণ, আমার মা কষ্ট পেলে দেশ কষ্ট পাবে। আত্মীয়স্বজনেরা মন ছোট করবেন। দেশ কষ্ট পেলে দুনিয়া কষ্ট পাবে। এ জন্যই নিজেকে সংবরণ করেছি। আমি বলতে চাই, লোভ সংবরণ করা খুব দরকার।
খবর৭১/ইঃ