খবর৭১:ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, সম্প্রচার আইন ও গণমাধ্যম কর্মী আইনের কালো ধারা বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করবে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) একাংশের নেতারা।
বুধবার (১৭ অক্টোবর) সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এ বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
এর আগে মন্ত্রিসভায় সম্প্রচার আইন-২০১৮ ও গণমাধ্যমকর্মী (চাকুরির শর্তাবলি) আইন-২০১৮ অনুমোদন করায় গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিএফইউজে ও ডিইউজে একাংশের নেতারা।
আইন দুটির অনেক ধারা গণতন্ত্র, গণমাধ্যম, মৌলিক অধিকার ও সংবিধানের পরিপন্থি বলে উল্লেখ করে সংশোধন ছাড়া সংসদে পাস না জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছেন সাংবাদিক নেতারা।
মঙ্গলবার (১৬ অক্টোবর)এক যুক্ত বিবৃতিতে বিএফইউজে সভাপতি রুহুল আমিন গাজী ও মহাসচিব এম আবদুল্লাহ এবং ডিইউজে সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী ও সাধারণ সম্পদাক মো. শহিদুল ইসলাম এ আহবান জানান।
বিবৃতিতে নেতারা বলেন, সকল মহলের প্রতিবাদ উপেক্ষা করে সংসদে পাশ করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের গণমাধ্যম ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাবিরোধী ধারাগুলো বাতিলের জন্য যখন সাংবাদিক সমাজ ও দেশের সম্মানিত সম্পাদকরা আন্দোলন করছেন তখন সোমবার মন্ত্রিসভায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে সম্প্রচার আইন ও গণমাধ্যমকর্মী আইন। এ আইন দু’টিতে গণমাধ্যমের স্বাধীনতাহরণ এমনকি গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান বন্ধ করার মত বিধান যুক্ত করা হয়েছে, যা চরম স্বৈরতান্ত্রিক মানসিকতার পরিচায়ক। গণমাধ্যমকর্মী আইনে সাংবাদিকদের ‘শ্রমিক’ এর পরিবর্তে ‘গণমাধ্যম কর্মী’ হিসেবে অভিহিত করাসহ বেশ কিছু ইতিবাচক দিক থাকলেও আইন লংঘনের জন্য গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান বন্ধের বিধান অগ্রহণযোগ্য ও গভীর উদ্বেগজনক। এটা সরকার ভিন্নমতের গণমাধ্যমের টুটি চেপে ধরার জন্য যথেচ্ছভাবে ব্যবহারের প্রবল আশংকা রয়েছে।
সম্প্রচার আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, সম্প্রচার ও অনলাইন মাধ্যমে যেকোনো ব্যক্তির ব্যক্তিগত, গোপনীয় ও মর্যাদাহানিকর তথ্য এবং জনস্বার্থ বিঘ্নিত হতে পারে এমন কোনো বিদ্রোহ, নৈরাজ্য ও হিংসাত্মক ঘটনা প্রচার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বলা হয়েছে- জনস্বার্থবিরোধী বক্তব্য প্রচার করা যাবে না। আলোচনা অনুষ্ঠানে বিভ্রান্তিকর ও অসত্য তথ্য বা উপাত্ত প্রচার করা যাবে না। দেশীয় সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও ভাবধারার পরিপন্থী অনুষ্ঠান বা বিজ্ঞাপন প্রচার করা যাবে না। রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে এমন সামরিক, বেসামরিক ও সরকারি তথ্য প্রচার করা যাবে না। এ ছাড়া বিজ্ঞাপনে শিশুদের পরনিন্দা, বিবাদ ও কলহের দৃশ্য এবং ঝুঁকিপূর্ণ কাজে অংশগ্রহণের দৃশ্য দেখানো যাবে না। আইনানুযায়ী আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গ করতে উৎসাহ সৃষ্টি করতে পারে বা আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গের প্রতি সহানুভূতি সৃষ্টি করতে পারে এমন অনুষ্ঠান বা বক্তব্যও প্রচার করা যাবে না। এসব বিধিনিষেধ লঙ্ঘন করলে সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ পাঁচ কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড পেতে হবে। এমনকি সম্প্রচার প্রতিষ্ঠান বন্ধের সুযোগও রাখা হয়েছে।
বিবৃতিতে সাংবাদিক নেতারা বলেন, সম্প্রচার ও অনলাইন মাধ্যমে যেসব বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে তা অনুসরণ করে বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে। কারণ ‘সত্য-অসত্য’, ‘জনস্বার্থ বিঘ্ন’, ‘সাংস্কৃতিক ভাবধারা’, ‘আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গে উৎসাহ’ ইত্যাদি শব্দগুলো সরকার তার দৃষ্টিকোন থেকে দেখবে। তা ছাড়া বাংলাদেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও সরকারের আচরনে এটা স্পষ্ট যে প্রকৃত পক্ষে সরকারের সমালোচনা, দুর্নীতির তথ্য প্রচার বা বিপক্ষে যায় এমন বক্তব্য বন্ধ করতেই এ আইন। আইনটি যে বিরোধী ও ভিন্নমতের লোকদের ক্ষেত্রেই কেবল প্রয়োগ হবে তাও স্পষ্ট। এ ধরণের স্বৈরতান্ত্রিক আইন কোন গণতান্ত্রিক সমাজে থাকতে পারে না। বিদ্বেষমূলক তথ্য প্রচারের জন্যও ৫ কোটি টাকা জরিমানা করার কথা বলা হয়েছে। যে কোন সংবাদেই সরকার বিদ্বেষের উপাদান খুঁজে পেতে পারে। এটা, গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা ও সংবিধানের পরিপন্থি। সকলের কন্ঠ স্তব্ধ করে ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করার কুমতলবেই সরকার এমনটা করছে বলে আমরা মনে করি।
নেতৃবৃন্দ বিবৃতিতে এ দু’টি আইনসহ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের গণমাধ্যম ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাবিরোধী ধারা বাতিলের দাবি জানান।
খবর৭১/জি