খবর৭১ঃকুষ্টিয়ায় কুমারখালীর ছেঁউড়িয়ায় লালন আঁখড়াবাড়ীতে বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহ এর ১২৮ তম তিরোধান উপলক্ষ্যে তিনদিন ব্যাপি আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন করা হয়েছে।
কুষ্টিয়া লালন একাডেমি, জেলা প্রশাসন ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে আনুষ্ঠানিক ভাবে এ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া-৩ আসনের সাংসদ মাহবুব-উল-আলম হানিফ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহ সব সময় মানুষের কথা বলেছেন, মানবতার কথা বলেছেন। লালন দার দর্শন দিয়ে বার বার বলেছেন সবার উপরে হচ্ছে মানুষ। ধর্ম সব কিছুর উপরে নয়। মানুষের জন্যই ধর্ম। আর সেই মানুষই যদি হই তাহলে মানবতায় আমাদের মূল ধর্ম। মানুষ মানুষই, এই মানুষই সমাজের মধ্যে জাত নিয়ে বিভেদ সৃষ্টি করি।’
তিনি আরো বলেন, ‘বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। জনগণ শান্তি চায়, আর এই শান্তিকে নষ্ট করতে কিছু মানুষ তৎপর আছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন কিছুদিন আগে ২১ শে আগস্ট গ্রেনেড হামলার রায় হয়েছে। এই রায়ে পরিষ্কার হয়েছে কিভাবে একটি রাজনৈতিক দল আরেকটি রাজনৈতিক দলকে হত্যা করে ধ্বংস করে নিশ্চিহ্ন করতে চাই। যারা এ কর্মকাণ্ড করেছে তারা কোনো রাজনৈতিক দল হতে পারে না, রাজনৈতিক আদর্শ হতে পারে না। রাজনীতি হবে তার আদর্শ দিয়ে, মানুষের মাঝে তাদের উন্নয়ন তুলে মানুষের মন জয় করতে হবে। আদর্শ ছাড়া রাজনৈতিক দলের উদ্যোশই হচ্ছে হত্যা খুন করে যে ভাবেই হোক ক্ষমতা দখল করা।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা চাই লালন শাহের যে আদর্শ, যে দর্শন সেই দর্শনে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকল ধর্মের মানুষকে নিয়ে একটি সুখি সুন্দর দেশ গড়তে চায়। আমরা ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসাবে গড়ে তুলবো। এজন্য লালনের আদর্শই হবে আমাদের একমাত্র পথ প্রদর্শক।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এস এম তানভীর আরাফাত বলেন, ‘বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহ এর ধর্ম নিরেপক্ষতা, জাতপাত, সাম্প্রদায়িকতার মতোবাদ সঠিকভাবে জানতে হবে এবং পালন করতে হবে। সাঁইজির মতবাদ গুলো আমরা হয়তো ঠিকভাবে পালন করছি না। আমরা যদি সাঁইজির সত্যিকারের ভক্ত হতে পারতাম তাহলে দেশ থেকে মারা-মারি, সন্ত্রাসী কার্যক্রম বন্ধ হতো।’
অনুষ্ঠানের প্রধান আলোচক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. শাহিনুর রহমান বলেন, ‘লালনকে বলতে পারি গুরুরও গুরু। মাস্টার অব মাস্টার। মানুষকে প্রতিটি পদে পদে প্রতিটি ক্ষণে খারাপকে মাড়িয়ে সেই স্থানে যেতে হয়। ফকির লালন শাহ যেই সময় জন্মগ্রহণ করেছিলেন সেই সময়টি মৌলবাদী গোষ্টিতে পরিপূর্ণ ছিলো। কেবলমাত্র মানবতার জন্যই জাত, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে মানুষকে ভালোবেশে মানুষের মধ্যে মানুষত্ব জাগ্রত করে মানবতার প্রত্যয় যিনি গ্রহণ করেছিলেন তিনি হলেন বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহ্।’
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক ও লালন একাডেমির সভাপতি আসলাম হোসেনের সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য রাখেন- কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক তরফদার সোহেল রহমান, কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সদর উদ্দিন খাঁন, সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী, কুমারখালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান, কুষ্টিয়া কোর্টের জিপি অ্যাডভোকেট আক্তারুজ্জামান মাসুম, পিপি অনুপ কুমার নন্দি, কুমারখালী পৌর মেয়র সামসুজ্জামান অরুন, শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি তাইজাল আলী, সাংবাদিক ইউনিয়ন কুষ্টিয়ার সভাপতি রাশেদুল ইসলাম বিপ্লব।
পরে গভীর লালন মুক্ত মঞ্চে শুরু হয় লালন গানের আসর। মেলা চলবে আগামী ১৮ অক্টোবর বৃহস্পতিবার পর্যন্ত।