মুকুরুল ইসলাম মিন্টু চৌগাছা (যশোর)ঃ যশোরের চৌগাছার কৃষকরা চাষ পদ্ধতিতে নতুন নতুন পদ্ধতি অবলম্বন করে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন। প্রতি বছরই কোন না কোন নতুন ফসল উৎপাদনে বলাচলে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন এ জনপদের কৃষকরা। নতুন সেই চাষ পদ্ধতির অন্যতম একটি ফসল হচ্ছে বাদাম। এক সময় কৃষক সখের বশত বাদামের চাষ করলেও তা এখন বানিজ্যিক ভাবে শুরু করেছে। গত কয়েক বছর ধরে কৃষক বাদাম চাষ করে ব্যাপক সফালতা অর্জন করেছে। বর্তমানে উপজেলার চারটি ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামের চাষিরা বাদাম চাষ করছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। পরিশ্রম কম বাজারে চাহিদা বেশি থাকায় কৃষক এই চাষের দিকে ঝুকে পড়েছেন। সরকারী ভাবে যথাযথ সহযোগীতা পেলে বাদাম চাষে অত্র উপজেলা দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে বলে মনে করছেন উপজেলার সচেতন মহল। সূত্র জানায়, যশোরের চৌগাছা উপজেলা কৃষি কাজের জন্য অত্যান্ত উপযোগী। এই উপজেলার প্রতিটি এলাকার মাটি সব ধরনের চাষের জন্য বরাবরই বিখ্যাত। তাই গ্রাম বাংলায় প্রবাদ আছে চৌগাছার মাটি সোনার চেয়েও খাটি, এ মাটিতে একটি কয়েন ফেললে তা এক ঝুড়ি কয়েনে পরিনত হয়। উপজেলার কৃষকরা এক সময় শুধু মাত্র ধান আর পাটের চাষ করে গোটা বছর পার করে দিয়েছেন। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে তার আমুল পরিবর্তন হয়েছে। এখন বছরের বার মাসই কৃষক তার জমিতে কোন কোন ফসল উৎপন্ন করছেন। ধান পাট, সবজি, ভুট্টার পাশাপাশি এ অ লের চাষিরা বর্তমানে বাদাম চাষে মনযোগী হয়ে উঠেছেন। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে অত্র উপজেলায় প্রায় ১শ ১০ হেক্টর জমিতে বাদামচাষ করা হয়েছে। এ অ লের কৃষকরা মুলত ঢাকা-১ জাতের বাদাম করেছেন। উপজেলার চারটি ইউনিয়ন জগদীশপুর, পাতিবিলা, হাকিমপুর ও নারায়নপুর ইউনিয়নের বেশ কিছু গ্রামের কৃষক এখন বানিজ্যিক ভাবে বাদাম চাষ করেছেন। অন্য যে কোন ফসলের তুলনায় পরিশ্রম কম বাজারে চাহিদাও ভাল তাই দিন দিন চাষিরা বাদাম চাষে ঝুকে পড়েছেন। গতকাল উপজেলার নারায়নপুর ইউনিয়নের ভগমানপুর, ইলিশমারি, বিদেধারপুর গ্রাম লে যেয়ে দেখা যায় মাঠের পর মাঠ শুধুই বাদামের চাষ। কৃষক তার ক্ষেতে নিরালস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এ সময় কথা হয় ইলিশমারী গ্রামের কৃষক আব্দার হোসেনের সাথে। এই কৃষক ৩ বিঘা জমিতে চীনাবাদামের চাষ করেছেন। তিনি বলেন, বাদাম একটি অর্থকারী ফসল। এ অ লের চাষিরা মুলত ভাদ্র মাসে বাদামের বীজ জমিতে বপন করেন। ঢাকা-১ জাতের বাদাম হলেও আমরা মুলত চীনাবাদাম হিসাবেই চিনি। নিয়মিত জমি পরিচর্জা করে এক সময় কাংখিত ফসল ঘরে তোলা হয়। কোন প্রাকৃতিক দূর্যোগ অথবা পোকামাকড়ের আক্রমন না হলে ১ বিঘা জমিতে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকার বাদাম বিক্রি করা সম্ভব। তিনি বলেন, বেলে ও বেলে-দোঁয়াশ মাটি বাদাম চাষের জন্য উপযোগী। আব্দার হোসেনর মত ওই মাঠে ইউছুপ আলী, দ্বীনআলী, মোঃ খোকন, আকবর আলীসহ অনেক কৃষকই বাদাম চাষ করেছেন।
সূত্র জানায়, চীনাবাদাম একটি স্বল্পমেয়াদি অর্থকারী ফসল। এটি একটি উৎকৃষ্ট ভোজ্য তেলবীজ। চীনাবাদামের বীজে শতকরা ৪৮ থেকে ৫০ ভাগ তেল এবং শতকরা ২২ থেকে ২৯ ভাগ আমিষ রয়েছে। পৃথিবীতে উৎপাদিত বাদামের মধ্যে চীনাবাদাম সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। কাঁচা ও ভাজা তো বটেই মাখন, চানাচুর, কেক, বিস্কিট, তরকারী, ভর্তা ও তেল তৈরীতে চীনাবাম ব্যবহার করা যায়। স্বাস্থ্য সুরক্ষায় চীনাবাদামের রয়েছে নানা রকমের অবদান। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মতে, চীনাবাদামের প্রোটিন দেহ গঠনে ও মাংশপেশি তৈরীতে সাহায্য করে। চীনাবাদামের মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট রক্তের কোলেষ্টেরল নিয়ন্ত্রনে সহায়তা করে। এর উচ্চমাত্রার নিয়াসিন দেহকোষ সুরক্ষা করে, বার্ধক্যজনিত রোগ প্রতিরোধ করে, মস্তিস্ক সুস্থ্য রাখে ও রক্ত চলাচলে সহায়তা করে। চীনাবাদাম প্রতিরোধ করে কোলন ক্যান্সার, ব্রেষ্ট ক্যান্সার ও হার্টের রোগ, এতে প্রচুর ক্যালসিয়াম থাকে যা হাড় গঠনে সহায়ক। চীনাবাদামের ক্যারোটিন ও ভিটামিন ই ত্বক এবং চুল সুন্দর রাখে। এই বাদাম ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সাহায্য করে। রাতে ১০-১৫ টি বাদাম পনিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রন থাকে। এ ছাড়া চীনাবাদাম ঠান্ডা, কাশি, মাথাব্যাথা, দূর্বলতা, খাওয়ার অরুচি এবং নিদ্রাহীনতা রোগ প্রতিরোধে সক্ষমতা বাড়ায়। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রইচউদ্দিন জানান, এ অ লের চাষিদের মাঝে বাদাম চাষ দিনদিন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তাদেরকে এই চাষে মনোনীবেশ করতে কৃষি অফিস যথাযথ ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে চলতি মৌসুমে বাদামের বাম্পার ফলন হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
খবর৭১/ইঃ