খালেদা জিয়া রাজি হলে শনিবার হাসপাতালে ভর্তি

0
367

খবর৭১ঃকারাবন্দি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার রাতে পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে কারাগারের একটি প্রতিনিধি দল চিকিৎসা সংক্রান্ত আদেশের কপি নিয়ে খালেদা জিয়ার কাছে যান। কারাগারের প্রতিনিধি দলটি বিএসএমএমইউতে ভর্তির ব্যাপারে জানতে চাইলে খালেদা জিয়া নমনীয়তা প্রকাশ করেন।

ওই প্রতিনিধিদলের একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে শুক্রবার বলেন, বৃহস্পতিবার স্বাচিব ও ড্যাব সদস্য নয়, খালেদা জিয়ার পছন্দসই এমন তিনজন চিকিৎসককে নিয়ে নতুন মেডিকেল বোর্ড গঠন করার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। সেই আদেশের কপি বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে কারাগারে পৌঁছায়। উচ্চ আদালতের সেই আদেশের কপি নিয়ে কারা কর্তৃপক্ষ খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। খালেদা জিয়া সেটি পড়ে দেখেন। এ সময় খালেদা জিয়া নমনীয়তা প্রকাশ করেন।

কারাগারের ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, চিকিৎসা নিয়ে বঙ্গবন্ধু হাসপাতালের কথা শুনতেই তিনি রেগে যান। এরপর কারা কর্তৃপক্ষ থেকে বলা হয়, দেখেন আপনি বারবার চিকিৎসার কথা শুনতেই নেগেটিভ আচরণ করেন, এতে আপনারই ক্ষতি হচ্ছে। আদালত আপনার পছন্দমত চিকিৎসককে দিয়েই চিকিৎসা করাতে বলেছেন। আপনি কোন কোন ডাক্তার চান সেটাও জানাতে পারেন। আর অসুস্থ বেশি হলে ক্ষতি আপনারই। সে ক্ষেত্রে চিকিৎসা নেওয়াটা আপনার জন্যই ভালো। তখন বেগম খালেদা জিয়া হাসপাতালে যাওয়ার বিষয়ে নমনীয়তা প্রকাশ করেন।

খালেদা জিয়ার হাসপাতালে ভর্তির জন্য চূড়ান্তভাবে অনুমতি দেবেন মূলত কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন। সেই অনুমতির আগে আইজি প্রিজন খালেদাকে শেষবারের মতো জিজ্ঞাসা করবেন। যে আসলেই তিনি বঙ্গবন্ধুতে যাবেন কিনা।

কারাসূত্রে জানা গেছে, শনিবার আইজি প্রিজন খালেদা জিয়ার কাছে অনুমতির জন্য যাবেন। তিনি রাজি থাকলে সেই দিনই খালেদা জিয়াকে বিএসএমএমইউ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করানো হবে।

শুক্রবার সকালে এ বিষয়ে বিএসএমএমইউ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহ আল হারুন বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশনা রাতে আমরা পেয়েছি। খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। তবে কারা কর্তৃপক্ষ কখন আনবে, এ বিষয়টি এখনো আমাদের জানানো হয়নি।

নতুন করে পাঁচ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করার বিষয়ে হাসপাতাল পরিচালক বলেন, এখনো নতুন মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়নি। তবে আশা করছি, দ্রুত নতুন করে মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হবে।

এ ব্যাপারে বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, আমরা আদালতের আদেশ বিশেষ বার্তা প্রেরকের মাধ্যমে বৃহস্পতিবার রাতেই কারা কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছি। তারা সেটি গ্রহণ করেছেন। আশা করছি, এ নির্দেশনার আলোকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে পরামর্শক্রমে কারা কর্তৃপক্ষ দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।

রাজধানীর নাজিম উদ্দিন রোডের পুরনো এই কারাগারের সামনে দায়িত্ব পালন করেন, এমন একটি গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেন, খালেদা জিয়াকে শুক্রবার বঙ্গবন্ধু হাসপাতালে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। শনিবার খালেদা রাজি থাকলে বঙ্গবন্ধু হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করানো হতে পারে। তবে তার আগে তিন সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করার কথা রয়েছে।

বৃহস্পতিবার কারাবন্দি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দ্রুত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি এবং স্বল্প সময়ের মধ্যে নতুন করে পাঁচ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করে চিকিৎসা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এই মেডিকেল বোর্ডে নতুন করে তিনজন চিকিৎসক অন্তর্ভুক্ত করতে বলা হয়েছে। তবে তারা বিএনপিপন্থী চিকিসকদের সংগঠন ড্যাব ও আওয়ামীপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাচিপের কেন্দ্রীয় বা জেলা পর্যায়ের সদস্য হতে পারবেন না।

মেডিকেল বোর্ডের অপর দুই সদস্য হিসেবে আগের বোর্ডের সদস্য বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. আবদুল জলিল চৌধুরী ও ডা. বদরুন্নেসাকে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আদেশে আরো বলা হয়েছে, খালেদা জিয়া তার পছন্দমতো ফিজিওথেরাপিস্ট, গাইনোকলজিস্ট ও টেকনোলজিস্ট নিতে পারবেন। এ ছাড়া প্রয়োজনে খালেদা জিয়া মেডিকেল বোর্ডের অনুমতিক্রমে এর বাইরে থেকেও চিকিৎসক আনতে পারবেন।

খালেদা জিয়া যেহেতু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী, তাই তাকে জেল কর্তৃপক্ষ এবং বঙ্গবন্ধু মেডিকেল হাসপাতালের কর্তৃপক্ষকে যথাযথ সম্মানের সঙ্গে মানসম্মত চিকিৎসা দিতে বলেছেন আদালত।

এর আগে খালেদা জিয়া তৃতীয়বারের মতো বিএসএমএমইউ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন। তার একটাই দাবি ছিল, তার পছন্দ মতো রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার কথা বলে আসছিলেন। শেষ পর্যন্ত দেশের বিশেষায়িত কোনো হাসপাতালে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন জানান খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। গত ৯ সেপ্টেম্বর রিটটি দায়ের করা হয়। রিটের শুনানিতে আইনজীবীরা বলেন, পাঁচ সদস্যের চিকিৎসকদের মধ্যে তিনজনই আওয়ামী লীগপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। তাই তাদের কাছ থেকে খালেদা জিয়া নিরপক্ষে চিকিৎসা পাবেন না বলে আইনজীবীরা আদালতকে অবহিত করেন। এরপর দুদিনব্যাপী শুনানি শেষে আদালত বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণা করেন।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও আর্থিক জরিমানা করা হয়। রায় ঘোষণার পরপরই খালেদা জিয়াকে পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। বর্তমানে তিনি সেখানেই আছেন।
খবর৭১/এসঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here