মিজানুর রহমান মিলন, সৈয়দপুর (নীলফামারী) থেকেঃ
গুরুত্ব হারাচ্ছে শিল্প ও বাণিজ্য প্রধান শহর সৈয়দপুর। একে একে সৈয়দপুর থেকে চলে যাচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ সরকারী-বেসরকারী দপ্তর-অধিদপ্তর। এর আগে নীলফামারী জেলায় চলে গেছে ৪/৫ টি সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠান। এমনকি রাজনৈতিক সংগঠনের মর্যাদাও। এবার সর্বশেষে যোগ হয়েছে সৈয়দপুরে অবস্থিত বাংলাদেশ টেলি কমিউনিকেশন কোম্পানী লিমিটেডের (সাবেক টিএন্ডটি) প্রধান কার্যালয়। সেই পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ আমলে সৈয়দপুরে স্থাপিত সাবেক টেলিফোন দপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের কার্যক্রম গুটিয়ে নিয়ে নীলফামারীতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। চলতি বছরের জুলাই মাসে সরকারী নির্দেশনায় প্রধান কার্যালয় নীলফামারীতে স্থানান্তরের প্রশাসনিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। শিগগির প্রধান কার্যালয়ের কার্যক্রম নীলফামারীতে শুরু হবে। অথচ সেই বৃটিশ এবং পাকিস্তান আমলে টেলিফোন বিভাগের রংপুর অঞ্চলের মহকুমা অফিস ছিল। পরবর্তী বাংলাদেশ আমলেও সৈয়দপুরের গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে প্রধান কার্যালয় সৈয়দপুরে স্থাপন করা হয়।
সূত্র মতে জানা যায়, নীলফামারী জেলার মধ্যে সৈয়দপুর টেলিফোন দপ্তরের এক্সচেঞ্জটি সর্ববৃহৎ। এ এক্সচেঞ্জে ৪ হাজার টেলিফোন সংযোগ ক্ষমতা সম্পন্ন। এর অধীনে প্রায় দেড় হাজার টেলিফোন সংযোগ রয়েছে। সেই তুলনায় নীলফামারী এক্সচেঞ্জের মাত্র দেড় হাজার টেলিফোন সংযোগ ক্ষমতা সম্পন্ন এবং টেলিফোন গ্রাহক মাত্র কয়েক শ’। সৈয়দপুর সেই বৃটিশ আমলে গুরুত্বপূর্ণ শহর হয়ে ওঠায় সৈয়দপুর স্থাপন করা হয় আসাম বেঙ্গল অঞ্চলের প্রধান মহকুমা কার্যালয়। ভারত ভাগের পর সাবেক পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ আমলেও প্রধান কার্যালয়ের মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখা হয়। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে সৈয়দপুর শিল্প বাণিজ্য আরও সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে। ফলে টেলিফোন সংযোগের চাহিদা বৃদ্ধি পেলে সৈয়দপুরে নতুন করে ডিজিটাল টেলিফোনের এক্সচেঞ্জ স্থাপন করা হয়। রজস্ব আদায়ও নীলফামারী জেলায় সর্বোচ্চ হলে বিপুল সংখ্যক টেলিফোন গ্রাহকদের সেবা দেয়ার জন্য প্রধান কার্যালয়ের গুরুত্ব সর্বাধিক। এত করে যে কোন সমস্যার দ্রুত সমাধান পেতেন গ্রাহকদেরা । এ অবস্থায় প্রধান কার্যালয় গুটিয়ে নেয়া হলে টেলিফোন সেবা থেকে বঞ্চিত হবেন বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন টেলিফোন গ্রাহকরা।
সূত্র মতে বর্তমান বিটিসিএল (সাবেক টিএন্ডটি) ঘোষিত নতুন অর্গানোগ্রামে সৈয়দপুরে অবস্থিত প্রধান কার্যালয় নীলফামারীতে স্থানান্তরের নির্দেশ জারি করা হয়েছে। অর্গানোগ্রামে সৈয়দপুরের মর্যাদা অবলুপ্ত করে জুনিয়র কর্মকর্তার পদ সৃজন করা হয়েছে। এ অবস্থায় টেলিফোন গ্রাহকরা আগের মত দ্রুত সেবা পাবেন না বলে নিশ্চিত করেছেন স্থানীয় টেলিফোন বিভাগের একাধিক সূত্র। এদিকে সৈয়দপুর থেকে টেলিফোন দপ্তরের প্রধান কার্যালয় গুটিয়ে নেয়ার খবরে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন টেলিফোন গ্রাহকসহ শহরের বিশিষ্টজনরা। তারা সৈয়দপুরের গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে প্রধান কার্যালয় সৈয়দপুরে বহাল রাখার জন্য সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। একই সঙ্গে তারা স্থানীয় এমপি এবং ক্ষমতাসীন দলের নেতাবৃন্দকে ভূমিকা রাখার তাগিদ দেন।
এ ব্যাপারে সৈয়দপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র আখতার হোসেন বাদল বলেন, সৈয়দপুর একটি ব্যতিক্রমী উপজেলা। এই উপজেলায় বিমানবন্দর, রেলওয়ের বিভাগীয় দপ্তর এবং আর্মি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ সরকারি-বেসরকারি বহু বাণিজ্যিক ও শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ফলে গুরুত্বপূর্ণ এ উপজেলা থেকে প্রধান কার্যালয় গুটিয়ে নেয়া ঠিক হবে না। তিনি সরকারের প্রতি ওই নির্দেশনা পূনর্বিবেচনা করে বিটিসিএল’র প্রধান কার্যালয় সৈয়দপুরে বহাল রাখার অনুরোধ জানান।
জানতে চাইলে, সৈয়দপুর বিটিসিএল দপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী সমর কুমার কুন্ডু কার্যালয় সরিয়ে নেয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, নতুন অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী উপজেলা পর্যায়ে প্রধান কার্যালয় রাখা হয়নি, জেলার অধীনে প্রধান কার্যালয় থাকবে বলে উল্লেখ করেন তিনি