উজ্জ্বল অধিকারী, বেলকুচি (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ-
সিরাজগঞ্জ জেলার বেলকুচি উপজেলার ছোট্ট একটা গ্রাম বওড়া দক্ষিণ পাড়া। কিছুদিন আগেও এই গ্রামের বাচ্চারা পড়াশোনা, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা, আদব-কায়দার বিষয়ে বেশ উদাসীন ছিল। বিষয়টি নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই ভাবছিলেন গ্রামের মেয়ে শিউলি। তবে সে একা একা কীভাবে কী করবে সেটা ভেবে পাচ্ছিল না। পরে সে তার বাড়ির পাশে সম্পর্কে মামা জাহিদ হাসান মিঠুর সাথে গ্রামের বাচ্চাদের নিয়ে তার চিন্তাভাবনার কথা শেয়ার করে। পরে দুইজন আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়, তারা দুইজন একটা উন্মুক্ত পাঠশালা করবে। যেখানে ছোট ছোট বাচ্চাদের পড়াশোনাসহ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকার বিষয়ে সচেতন করবে। পরে ভাবতে থাকে, সাধারণ স্কুলের মতো পড়ালে বাচ্চারা আগ্রহী হবে না। পরে তারা সিদ্ধান্ত নেয়, বই বাদ দিয়ে মোবাইল ফোনে বিভিন্ন শিক্ষামূলক ভিডিও দেখানোর মাধ্যমে বাচ্চাদের সচেতন করবে। তারপর তারা গ্রামের সব বাচ্চাদের একদিন একসাথে করে মোবাইলে কিছু ভিডিও দেখায়। বাচ্চারা বেশ মজা পায় এবং তারা নিয়মিত পড়ার কথা বলে। এভাবেই শুরু হয় বওড়া দক্ষিণ পাড়ার দুই উদ্যমী তরুণ-তরুণীর শিশুদের নিয়ে গড়া পাঠশালা ‘শিশু নিকুঞ্জ”। গত ৮ সেপ্টেম্বর থেকে চালু হওয়া পাঠশালায় বর্তমানে ছাত্র সংখ্যা প্রায় পঞ্চাশের কাছাকাছি।
বর্তমানে পাঠশালার উদ্যোক্তা জাহিদ হাসান মিঠুর বাহির বাড়িতে বাচ্চাদের মাটিতে পাটি বা প্লাস্টিকের বস্তার উপর ব্যবস্থা করে পড়ানো হচ্ছে। প্রতিদিন পাঁচটার সময় বাচ্চারা এসে হাজির হয়, তারপর তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয় তারা দাঁত ব্রাশ করেছে কি না, ঠিক সময়ে গোসল করেছে কি না, মক্তবে গিয়েছে কি না ইত্যাদি। এই পাঠশালার উদ্যোক্তার কাছে থেকে জানা যায়, তাদের লক্ষ্য হচ্ছে ছোট ছোট বাচ্চাদের মধ্যে এই বয়স থেকে মূল্যবোধ সৃষ্টি করা, যাতে করে তারা সুশিক্ষাটা বুঝতে পারে ও নিজেদের মধ্যে ধারণ করতে পারে। তাদের অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে, বাচ্চাদের বইতে যেসব পড়া রয়েছে সেগুলো তাদের বিভিন্ন ভিডিও, বিভিন্ন সরঞ্জামের মাধ্যমে কার্যকরীভাবে শেখানো। তাদের মূল্য লক্ষ্য হচ্ছে, বাচ্চাদের জ্ঞানের প্রতি আগ্রহী করে তোলা, মূল্যবোধ সৃষ্টি করা ও দেশপ্রেমে জাগ্রত করার মাধ্যমে আগামীর সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা।
বর্তমানে এই বাচ্চাদের শুধুমাত্র দুইটা মোবাইল ফোন, একটা মোবাইল স্ট্যান্ড ও ইউটিউবের ভিডিওয়ের মাধ্যমে। তবে তাদের ইচ্ছা আছে বেশকিছু আধুনিক শিক্ষা সরঞ্জাম কেনার, যেগুলোর মাধ্যমে বাচ্চাদের বিজ্ঞানসহ বিভিন্ন বিষয়ে মজায় মজায় শেখানো যায়।
খবর৭১/ইঃ