খবর৭১ঃ‘জিটুজি প্লাস’ দুই দেশের সরকারের স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের মধ্যে এসপিপিএতে পরিবর্তন আসছে। চলমান বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়োগের নীতিমালায় পরিবর্তন আনছে মালয়েশিয়া সরকার।
সিসটেম পারমোহনান পাকেরজা আসিং (এসপিপিএ) হলো বিদেশি কর্মী নিয়োগের আবেদন প্রক্রিয়া।
আগামী ১ সেপ্টেম্বর এসপিপিএ সিস্টেম বাতিল করে বাংলাদেশসহ বাকি ১৩ ‘সোর্স কান্ট্রি’র প্রযোজ্য নীতিমালার আওতায় নেয়া হবে বলে ২১ আগস্ট সে দেশের সরকার নোটিশ জারি করেছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল দাতো ইন্দেরা খাইরুল দাজমি বিন দাউদের স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে জানানো হয়েছে, বিগত সরকার বাংলাদেশের যে ১০টি রিক্রুটিং এজেন্সির মারফত শ্রমিক নিত, তাদের এসপিপিএ সিস্টেম সেপ্টেম্বরের গোড়া থেকেই বাতিল হয়ে যাবে।
ড. মাহাথির মোহাম্মদ মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর অভিযোগ পাওয়া গেছে, গত দুই বছরে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যোগসাজশে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিকদের পাঠানোর ক্ষেত্রে দুই বছরে কমপক্ষে ২০০ কোটি রিঙ্গিত (৪ হাজার ৮০ কোটি ৩ লাখ টাকা) হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ ওঠে বাংলাদেশ-মালয়েশিয়ার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে। এই অভিযোগের তদন্ত ও শ্রমিক পাঠানোর পদ্ধতি পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেয় দেশটি। আগস্ট মাসে এ বিষয়ে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে জানায় মালয়েশিয়া।
দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকার পর ২০১৩ সালে সরকারি পর্যায়ে (জিটুজি) পদ্ধতিতে বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি নেয়া শুরু করে মালয়েশিয়া। ২০১৬ সালে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের সমন্বয়ে ‘জিটুজি প্লাস’ পদ্ধতিতে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেয়ার সমঝোতা হয়।
দুই দেশের সমঝতার পরপরই বাংলাদেশ সরকার ৯০০ রিক্রুটিং এজেন্সির তালকা পাঠায় মালয়েশিয়া সরকারের কাছে। সে তালিকা থেকে পাঁচ বছরমেয়াদি এই সমঝোতা চুক্তির আওতায় দশটি জনশক্তি রফতানিকারক এজেন্সিকে লোক পাঠাতে অনুমোদন দেয় মালয়েশিয়া সরকার।
সূত্র জানায়, অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ মালয়েশিয়া স্থগিত করেছে বলে দেশটির গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়।
দেশটির সংবাদমাধ্যম স্টার অনলাইনের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় লোক পাঠাতে মাথাপিছু দুই হাজার রিংগিত খরচ হবে, কিন্তু এজেন্টরা বাংলাদেশি শ্রমিকদের কাছ থেকে ২০ হাজার রিংগিত আদায় করেন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ১০টি এজেন্সি সমন্বয়ে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেট অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছে। এ সিন্ডিকেটের পকেটে ২০০ কোটি রিংগিত গত দুই বছরে গিয়েছে। আর এ অভিযোগের তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ স্থগিত থাকবে।
জানা গেছে, আলোচিত এই ১০ প্রতিষ্ঠান হলো বায়রার সাবেক সভাপতি নুর আলীর ইউনিক ইস্টার্ন, বায়রার সাবেক সভাপতি গোলাম মোস্তফার প্রান্তিক ট্রাভেলস, বায়রার সদ্য বিলুপ্ত কমিটির মহাসচিব রুহুল আমিনের মালিকানাধীন ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনাল, বদরুল আমিনের ক্যারিয়ার ওভারসিজ, আরিফুল ইসলামের আইএসএমটি হিউম্যান রিসোর্স, শেখ আবদুল্লাহর সানজারী ইন্টারন্যাশনাল, মোহাম্মদ বশিরের রাব্বী ইন্টারন্যাশনাল, আরিফ আলমের প্যাসেজ অ্যাসোসিয়েটস, ব্যবসায়ী রুহুল আমিনের আমিন ট্যুরস ও জয়নাল আবেদিনের আল ইসলাম ওভারসিজ।
এখন যদিও ওই চিঠিতে নির্দিষ্ট কোনো কারণ উল্লেখ করা হয়নি, নতুন পদ্ধতি কী হতে পারে শিগগিরই মালয়েশিয়া সরকারের উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল আলোচনা করতে বাংলাদেশে আসছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
এ দিকে গত কয় দিন ধরে দু দেশের মধ্যকার ব্যবসায়ীদের মধ্যে শ্রমবাজার নিয়ে চলছে আলোচনা ও লাভ-ক্ষতির হিসাব। কেউ কেউ বলছেন, যে সিস্টেম চালু ছিল সেটা ভালোই ছিল। আবার কেউ কেউ বলছেন পূর্বের মতো ফিরে গেলে দুর্নীতি কমবে না বরং বেশি হবে। তবে দুদেশের সরকার সুষ্ঠুভাবে মনিটরিং করলে স্বচ্ছতা ও দুর্নীতি কমবে।
এ ছাড়া জনশক্তি রফতানির পুরো পদ্ধতি যতদিন না পুরোপরি ‘ডিজিটাল’ করা হচ্ছে তত দিন এ সমস্যা থেকেই যাবে বলে ধারণা করছি। সরকারের একটা ওয়েবসাইট থাকবে, যেখানে বিদেশ যেতে ইচ্ছুক কর্মীরা নিজেদের যোগ্যতা, তথ্য-পরিচয় ইত্যাদি আপলোড করবেন। সেখান থেকে বেছে নিয়ে চাহিদা ও যোগ্যতা ম্যাচ করে তাদের নিয়োগপত্র দিলে সমস্যা থাকবে বলে মনে করছেন অনেকে।
এসপিপিএ সিস্টেম বাতিল হলেও বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন ভিসার ক্ষেত্রে কোনো প্রভাব ফেলবে না। এমনকি বাংলাদেশ থেকে কর্মী যাওয়াও বন্ধ থাকবে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এ মুহূর্তে অর্ধলক্ষাধিক ভিসা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
কর্মী নিয়োগে মালয়েশিয়া সরকার নতুন কী পদ্ধতি চালু করতে চাইছে তা এখনো পরিষ্কার নয়। তবে মালয়েশিয়ার সরকার খুব শিগগির হয়তো এসপিপিএর বিকল্প পদ্ধতি চালু করবে। পাশাপাশি প্রক্রিয়াধীন ভিসাগুলোর আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন কর্মী গমন অব্যাহত থাকবে এবং জনশক্তি রফতানি কিছুতেই বন্ধ হবে না বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
এদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে মালয়েশিয়ার স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো জানায়, ডিসেম্বরের মধ্যেই এসপিপিএর বিকল্প পন্থা বের করবে মাহাথির সরকার, যা তখন থেকেই কার্যকর হবে। বাংলাদেশ থেকেও নতুন নীতিমালা অনুসরণ করে কর্মী পাঠাতে হবে। এসপিপিএ যাদের ভিসা হয়েছে, তাদের বহির্গমনও অব্যাহত থাকবে।
জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) সূত্র জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত ১ লাখ ৯ হাজার ৫৬২ অভিবাসী কর্মী বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় পাড়ি দিয়েছেন। গত বছরের মার্চ থেকে হিসাব করলে তা ১ লাখ ৯০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। মালয়েশিয়ার বহু অবকাঠামো প্রকল্পেই কাজ করছেন লাখ লাখ বাংলাদেশি।
খবর৭১/এসঃ