উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি: নড়াইলের দিঘলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান লতিফুর রহমান পলাশ হত্যার জট খুলেছে। বাবা ও ফুফু হত্যার প্রতিশোধসহ গ্রাম্য দলাদলির জের ধরে পলাশকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। নড়াইলের সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল) মেহেদী হাসানের নেতৃত্বে বিভিন্ন জেলা থেকে ইউপি চেয়ারম্যান পলাশ হত্যার আসামিদের গ্রেফতারের পর তারা আদালতে হত্যার কথা স্বীকার করে জবানবন্দিও দিয়েছেন। পলাশকে অনেক আগে থেকেই হত্যার পরিকল্পনা করা হয় বলে আদালতে জবানবন্ধি দিয়েছেন কিলিংমিশনে অংশ নেয়া তিনজন। নড়াইলের কুমড়ি পশ্চিমপাড়ার সৈয়দ ইলিয়াস আলীর ছেলে সৈয়দ আল আমিন (২৭), কোটো শেখের ছেলে শান্ত শেখ (২২) ও সৈয়দ আলী আহম্মেদের ছেলে সৈয়দ রোমান আলী (২২) এবং গোপীনাথপুরের মফিজার শেখের ছেলে গোলাম কিবরিয়া (২৩) পলাশ হত্যায় সরাসরি জড়িত বলে চা ল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। এজাহার নামীয় ১৫জন আসামির বাইরে এই চারজন সরাসরি হত্যা মিশনে অংশ নেয়। হত্যার আগে গোলাম কিবরিয়া মোবাইল ফোনে মেসেজ দিয়ে পলাশকে সর্তকও করেছিলেন। এই মেসেজের সূত্র ধরে এই তিনকে গ্রেফতার করা হয়। মামলার তদারকি কর্মকর্তা সহকারী পুলিশ সুপার মেহেদী হাসান জানান, গত ২৫ মার্চ লোহাগড়া আমলি আদালতে আল আমিন, গোলাম কিবরিয়া ও রোমান আলী ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে হত্যার কথা স্বীকার করেছে এবং শান্ত শেখের সম্পৃক্ততর কথা জানিয়েছে। সৈয়দ রোমান আলী আদালতে জবানবন্দিতে বলেন, পলাশ চেয়ারম্যানের লোকজন আমাকে দুইবার মারপিট করেছিলো এবং আমাদের পাঁচটি গরু নিয়ে যায়। গ্রাম্য দলাদলি নিয়ে পলাশ চেয়ারম্যানের সঙ্গে আমাদের দুরত্ব ছিল। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি শান্ত আমাকে রামপুরা মামার বাসা থেকে ডেকে এনে বলে যে, সে চেয়ারম্যানকে মারার জন্য দু’টি অস্ত্র নিয়ে এসেছে। রাতে কিবরিয়ার ভাড়া বাসায় গিয়ে প্লান করি। ঘটনার দিন কিবরিয়া সকাল ১১টায় ফোন করে আওয়ামী লীগ অফিসে যেতে বলে। পরবর্তীতে কিবরিয়া আমাকে উপজেলার গেটের ভিতরে যেতে বলে। ভেতরে যাওয়ার পর শান্ত আমাকে ছুরি দেয়। আমি (রোমান আলী) ও আল আমিন ছুরি দিয়ে পলাশকে কুপিয়ে জখম করি। কিবরিয়া ও শান্ত পলাশকে গুলি করে। গত ২৫ মার্চ ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জবানবন্দিতে সৈয়দ আল আমিন বলেন, পলাশ চেয়ারম্যান তিন বছর আগে আমার বাবাকে গুলি করে হত্যা করেছিলো। এছাড়া ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আমরা বাড়ি থাকতে পারছিলাম না। এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে পলাশকে হত্যার পরিকল্পনা করি। হত্যাকান্ডের দিন ১৫ ফেব্রুয়ারি আমরা পুরোনো সেটেলমেন্ট অফিসের কাছে অপেক্ষা করছিলাম। মিটিং শেষে পলাশ মোটরসাইকেল ঘটনাস্থলে আসামাত্র আক্রমণ করি। এক পর্যায়ে লক্ষ্যভষ্ট হয়ে একটি গুলি আমার ডান হাতের আঙ্গুলে লাগে। একইদিন (২৫ মার্চ) ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জবানবন্দিতে গোলাম কিবরিয়া বলেন, আল আমিন ও শান্ত টাকার প্রলোভন দেখায়। বিষয়টি আমি পলাশ চেয়ারম্যানকে ােমাবাইল ফোনে মেসেসের মাধ্যমে জানিয়ে সর্তক করেছিলাম। আমি অসুস্থ থাকায় এবং চাকুরি নিয়ে হতাশাগ্রস্থ হয়ে হত্যা মিশনে অংশ নিই। সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল) মেহেদী হাসান বলেন, মোবাইল মেসেজের সূত্র ধরে পলাশ হত্যারহস্য বের করার পর গত ২৩ মার্চ সৈয়দ রোমান আলীকে নারায়নগঞ্জের ফতুল্লা উপজেলার আলীগঞ্জ থেকে, গত ২৪ মার্চ আল আমিনকে ঢাকার তেজগাঁও থানার বেগুনবাড়িয়া এলাকা থেকে, গত ২২ মার্চ গোলাম কিবরিয়াকে চট্টগ্রামের চাদগাঁও থানার বহদ্দারহাট এলাকা থেকে আটক করি। এছাড়া শান্তকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। এর আগে গত ১৭ ফেব্রুযারি বাদীপক্ষের প্রচন্ড চাপে প্রধান আসামি মনিরুজ্জামান মনি শরীফকে ঢাকা থেকে গ্রেফতার করে নড়াইলে নিয়ে আসি। এছাড়া ঘটনাস্থল থেকে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা লোহাগড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মনিরুল ইসলাম বলেন, অধিকতর তদন্ত শেষে চা ল্যকর পলাশ হত্যা মামলার অভিযোগপত্র (চার্জশীট) দেয়া হবে। এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন পিপিএম বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান পলাশ হত্যা মামলাটি গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়েছে। সহকারী পুলিশ সুপার মেহেদী হাসান ইউপি চেয়ারম্যান পলাশ হত্যার মূল রহস্য উদঘাটন করে আসামিদের গ্রেফতার করেন। পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত তিনজন পলাশকে হত্যার কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্ধী দেন। প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে হত্যাকান্ডে অংশ নেয়া তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলার বাদী সাইফুর রহমান হিলু বলেন, হত্যাকান্ডে জড়িত সব আসামিকে গ্রেফতারসহ দ্রুত চার্জশীট দাবি করছি। জানা যায়, নড়াইলের দিঘলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান লতিফুর রহমান পলাশকে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি দিনেদুপুরে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলা পরিষদ চত্বরে হত্যা করা হয়। এরপর পলাশের ভাই সাইফুর রহমান হিলু বাদী হয়ে জেলা আ’লীগের যুগ্মসম্পাদক শরীফ মনিরুজ্জামান মনিকে আসামি করে ১৫জনের নামে মামলা দায়ের করেন।
খবর৭১/এসঃ