ছাফওয়ান নাঈমঃ
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) যথাযোগ্য মর্যাদা, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৩ তম শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস পালন করা হয়েছে।
এ উপলক্ষে বুধবার (১৫ আগস্ট ২০১৮) বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে র্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এদিন সকাল ৯টায় জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন শেষে একটি র্যালি প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন সংগঠন ও পরিষদের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শেষ হয়।
এতে নোবিপ্রবি পরিবারের সকল শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দের অংশগ্রহণ করে।
বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে বিভিন্ন ইনস্টিটিউট, হল, বিভাগ, শিক্ষক সমিতি, স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, অফিসার্স এসোসিয়েশন ও কর্মচারীদের পক্ষ হতে পুষ্পাঞ্জলি নিবেদন করা হয়।
পরে বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজী মো. ইদ্রিস অডিটোরিয়ামমে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা। রেজিস্ট্রার প্রফেসর মো. মমিনুল হকের সঞ্চালনায় এতে প্রধান অতিথি ছিলেন নোয়াখালী-৪ আসনের সাংসদ একরামুল করিম চৌধুরী। বিশেষ অতিথি হিসেবে আলোচনা করেন, নোবিপ্রবি উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. আবুল হোসেন, শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. আবদুল্লাহ আল মামুন, অফিসার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. মো. মোখলেস উজ-জামান, সেক্রেটারি মো.সাইদুর রহমান প্রমুখ।
সভায় সভাপতিত্ব করেন নোবিপ্রবি’র উপাচার্য প্রফেসর ড. এম অহিদুজ্জামান। পুরো অনুষ্ঠানটি সমন্বয় করেন ছাত্র নির্দেশনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ও শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এম গোলাম মোস্তফা।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় সাংসদ একরামুল করিম চৌধুরি বলেন, আমি প্রকৃতই একজন কৃষকের ছেলে, যদিও পরে আমার বাবা ব্যবসা করেছেন। এখন আমি ‘মেম্বার অব দি পার্লামেন্ট, যদি দেশ স্বাধীন না হতো আজ আমি এখানে উপস্থিত হতে পারতাম না। আপনারা যারা আমার সম্মুখে আছেন, আপনারা এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী হতে পারতেন না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার কারণেই আজ আমরা নিজ নিজ অবস্থানে প্রতিষ্ঠিত। এমন শ্রেষ্ঠ সন্তান শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা পৃথিবীর আর কোনো প্রান্তে জন্মেনি। আমরা বাঙালি আজ সারা পৃথিবী আমাদের চেনে, তা কেবল একজন বঙ্গবন্ধুর কারণেই।
আমরা যে যেই দলের আদর্শের অনুসারি হই না কেন বঙ্গবন্ধু কে সবকিছুর ঊর্দ্ধে বিবেচনা করতে হবে। এসময় তিনি অডিয়েন্সকে বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ পাঠের পরামর্শ দেন।
সভাপতির বক্তৃতায় উপাচার্য প্রফেসর ড. এম অহিদুজ্জামান প্রথমেই সাংসদ একরামুল করিম চৌধুরীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বাঙ্গীন কর্মকাণ্ডে সহায়তা করার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। শোকদিবসের আলোচনায় তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি। বঙ্গবন্ধুর অসাধারণ প্রজ্ঞা, মেধা ও আত্মদানের মাধ্যমে আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি। বাংলাদেশের বুকে পদ্মা, মেঘনা-গৌরি যতদিন বহমান থাকবে ততদিন বঙ্গবন্ধু থাকবেন। কোনো দিন কোনো কালে তার মত নেতা জন্মাবেনা, তিনি হাজার বছরের একজন শ্রেষ্ঠ বাঙালি লড়াকু নেতা।’
উপাচার্য বলেন, একটি দেশের স্বাধীনতা এনে দেয়া কম কথা নয়, তাইতো বঙ্গবন্ধু সভ্যতার মহান শিক্ষক, পৃথিবীর অন্যতম স্কলার। সবকিছু ছাপিয়ে তিনি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ একজন মানুষ।
উপাচার্য আরো বলেন, আজকে তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই। বঙ্গমাতা ফজিলাতুনেছা মুজিব হলেন মুজিববাদি আদর্শের শ্রেষ্ঠ সৈনিক। কিন্তু মহিয়সী নারী বঙ্গমাতাসহ বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্যদের নির্মমভাবে খুন করা হয় পঁচাত্তরের আগস্টে। এসময় তিনি খুনিদের বিচার দাবি করেন। এছাড়া বঙ্গবন্ধুর যেসব খুনি মারা গেছে প্রয়োজনে তাদেরকেও বিশেষ আইনের মাধ্যমে শাস্তির দাবি জানান তিনি।
সভায় শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ছাত্রলীগের সভাপতি শফিকুল ইসলাম রবিন, রোকসানা আক্তার রুহি, কর্মচারীদের পক্ষে এমিল সাদেকিন বক্তব্য রাখেন। আলোচনা সভার ফাঁকে কবিতা আবৃত্তি করেন শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এম গোলাম মোস্তফা ও পরিসংখ্যান বিভাগের প্রভাষক আল মামুন। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গান পরিবেশন করেন পরিসংখ্যান বিভাগের প্রভাষক ওমর ফারুক, ইএসডিম বিভাগের প্রভাষক প্রতিমা সরকার, সিএসটিই বিভাগের প্রভাষক কৌশিক চন্দ্র হাওলাদার, শাখা কর্মকর্তা রায়হান কায়সার হাশেম ও ইএসডিম বিভাগের শিক্ষার্থী নাহিদ হাসান।
আলোচনা সভার শুরুতে ‘পলাশী থেকে ধানমন্ডি’ শিরোনামে প্রামণ্যচিত্র প্রদর্শনী করা হয়।
প্রসঙ্গত, নোবিপ্রবি পরিবারের সকল শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কমকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে নোয়াখালী-৪ আসনের সাংসদ একরামুল করিম চৌধুরি কর্তৃক প্রদত্ত ২টি গরু ও ৩টি খাসি প্রদান এর মাধ্যমে দুপুরের খাবারের সরবরাহ করা হয়। উপাচার্য দুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ করে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।
খবর ৭১/এসঃ