এম শিমুল খান প্রতিনিধি, গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি: গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে ইউনুস মিনা (৬২) নামে এক নির্মান শ্রমিকের রহস্য জনক ভাবে মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার দুপুরে মুকসুদপুরের লখন্ডা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ দিকে ময়না তদন্ত ছাড়া তড়িঘড়ি করে ওই দিন গভীর রাতে লাশ দাফন করায় এলাকায় নানান গুঞ্জনের সৃষ্টি হয়েছে।
সরেজমিনে ব্যাপক অনুসন্ধানে জানা গেছে, শুক্রবার সকালে গুনহার গ্রামের নির্মান শ্রমিক ইউনুস মিনা পাশ্ববর্তী লখন্ডা গ্রামের আয়নাল শেখের বাড়ীতে নির্মান কাজ কর ছিলেন। পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় সেন্টারিংয়ের বাঁশ তার মাথায় পড়ে তিনি আহত হন। পরে তাকে দ্রুত রাজৈর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরিবর্তীতে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষনা করেন।
অপরদিকে, এলাকাবাসীর দাবী ডিজাইন অনুযায়ি নির্মান কাজে ত্রুটি হওয়ায় বাড়ী মালিক আয়নাল শেখের ছেলে পিকুল শেখ ক্রোধের বশে বাঁশ দিয়ে ইউনুস মিনা কে মাথায় আঘাত করলে তিনি গুরুতর আহত হন। পরে পিকুল শেখ তার নিজের গাড়ীতে করে ইউনুস শেখ কে প্রথমে রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। পরে সেখানে ইউনুস শেখের অবস্থার অবনতি ঘটায় দ্রুত তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হলে পথিমধ্যে তিনি মারা যান।
এলাকাবাসীর দাবী পিকুল শেখ এলাকার সম্পদশালী হওয়ায় বিষয়টি ধামচাপা দিতে পুলিশকে ম্যানেজ করে তড়িঘড়ি করে শুক্রবার রাতে ময়না তদন্ত ছাড়াই লাশ দাফন করেছে। ময়না তদন্ত করা হলে আসল সত্য বেরিয়ে আসবে বলেও দাবী করে এলাকাবাসী।
নির্মানাধীন বাড়ীর মালিক ও পিকুল শেখের পিতা হাজী আয়নাল শেখ বলেন, ইউনুস মিনা উচ্চ রক্তচাপে ভুগছিলেন। তিনি স্ট্রোক করে মারা যান। তিনি তার পুত্র পিকুল শেখের বিরুদ্ধে উত্থাপিত এলাকাবাসীর অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, পিকুল শেখসহ তার পাঁচ ছেলেই বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছেন। তারা কেউই গ্রামে আসেননি। তবে তার এ বক্তব্যে কোন সত্যতা মেলেনি।
মৃত নির্মান শ্রমিক ইউনুস মিনার স্ত্রী আনোয়ারা বেগমের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, পিকুল নিজের গাড়ীতে করে তার অসুস্থ স্বামীকে হাসপাতালে নিয়ে যান এবং চিকিৎসার খরচ দেন। তার দুই ছেলেকেও সহযোগিতা করবে বলে বলেছেন।
উল্লেখ্য, ইউনুস মিনার মৃত্যুর পর থেকে পিকুল শেখ বর্তমানে গা ঢাকা দিয়েছেন বলে এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে মুকসুদপুর উপজেলার সিন্ধিয়াঘাট পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তদন্ত কর্মকর্তা এস আই মো: মহিদুল ইসলাম জানান, আয়নাল শেখের বাড়ীতে নির্মান কাজ চলাকালে দূর্ঘটনা বশত সেন্টারিংয়ের বাঁশ মাথায় পড়ে ইউনুস মীনা আহত হন এবং তিনি মারা যান। ঘটনাটি তিনি বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে শুনেছেন। তবে দূর্ঘটনার বিষয়টি তাৎক্ষনিক পুলিশ ফাঁড়িকে জানালে এ ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হতো না। পুলিশকে ম্যানেজ করার বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি উল্টো প্রশ্ন করেন, সেন্টারিং এর বাঁশ পড়ে কেউ নিহত হলে বাড়ী মালিক কেন দোষী হবেন ? এটি স্বাভাবিত মৃত্যু সংঘটিত হলেও তড়িঘড়ি করে ময়না তদন্ত ছাড়া কেন রাতে ইউনুস মীনার লাশ দাফন করা হলো এ প্রশ্নের উত্তরে ওই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, মৃত ব্যক্তির পরিবার থেকে কেউ কোন অভিযোগ না করায় ময়না তদন্ত করা হয়নি।
এ ব্যাপারে বশেমুরবিপ্রবির আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. রাজিউর রহমান বলেন, যে কোন নির্মান কাজ শুরু করার পর থেকে সকলকে বিল্ডিং কোড এবং শ্রম আইন মেনে চলতে হবে। শ্রম আইনে শ্রমিককের পর্যাপ্ত নিরাপত্তার বিষয় সুনির্দিষ্ট ভাবে উল্লেখ আছে। এ ক্ষেত্রে কারোর দায় এড়ানোর কোন সুযোগ নেই।
খবর ৭১/ইঃ