আজ বিশ্ববরেণ্য বিজ্ঞানী পিসি রায়ের ১৫৭তম জন্মবার্ষিকী

0
408

আমিনুল ইসলাম বজলু,পাইকগাছা(খুলনা)প্রতিনিধি ঃ ২ আগস্ট, বৃহস্পতিবার বিশ্ববরেণ্য বিজ্ঞানী আচার্য্য স্যার প্রফুল্ল চন্দ্র রায় (পিসি রায়) এর ১৫৭ তম জন্ম বার্ষিকী। এ উপলক্ষ্যে বিজ্ঞানীর জন্মস্থান খুলনার পাইকগাছার রাড়ুলীতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। এ উপলক্ষ্যে দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে বিজ্ঞানীর প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পন, তার জীবন দর্শন, কর্মময় জীবন সম্পর্কিত তথ্যচিত্র প্রদর্শনী, রচনা, কুইজ ও বিতর্ক প্রতিযোগীতা সহ বিভন্নি কর্মসূচি গ্রহন করা হয়েছে।
তিনি ১৮৬১ সালের ২ আগস্ট খুলনার পাইকগাছা উপজেলার কপোতাক্ষ নদের তীরবর্তী রাড়লি গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতা ছিলেন জমিদার হরিশ চন্দ্র রায়। তিনি বাংলা ছাড়াও একাধারে আরবী, ফার্সী ও ইংরেজী ভাষায় দক্ষ ছিলেন। মাতা ভূমন মোহিনী দেবী। পিতা-মাতার আদরে সন্তানটি হলেন প্রফুল্ল চন্দ্র রায় (পিসি রায়)। পিতা তাকে আদর করে ডাকতেন ফুলু বলে। ফুলুর শিক্ষা জীবন শুরু হয় পাঁচ বছর বয়স থেকে। ১৮৬৬ থেকে ১৮৭০ সাল এ চার বছর কাটে গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এরপর ১৮৭১ সালে ভর্তি হন কলিকাতার হেয়ার স্কুলে। তারপর ১৮৭৪ সালে অ্যালবার্ট স্কুলে। সেখান থেকেই ১৮৭৮ সালে এন্টান্স, ১৮৮১ সালে এফ,এ পাশ করেন তিনি। ১৮৮২ সালে প্রেসিডেন্সী কলেজে ভর্তি এবং অনার্স সহ স্নাতক শ্রেনীতে অসাধারন মেধার বলে তিনি গিলক্রাইষ্ট বৃত্তি নিয়ে চলে যান এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখান থেকেই বিএসসি ডিগ্রী নেন। রসায়ন শাস্ত্রে গবেষনারত প্রফুল্ল চন্দ্র মারকিউরাস নাইট্টাইট-এর মত রসায়ন শাস্ত্রে মৌলিক পদার্থ উদ্ভাবন করে চমকে দেন বিশ্বকে। এরপর থেকে সম্মান সূচক ডিগ্রী ১৮৮৬ সালে পি,এইচ,ডি ১৮৮৭ সালে ডি,এস,সি ১৯১১ সালে সি,আই,ই ১৯১২ সালে আবার ডি,এস,সি এবং ১৯১৮ সালে ফাদার অব নাইট উপাধিতে ভূষিত হন। ব্রিটিশ সরকার তাকে ১৯৩০ সালে নাইট উপাধিতে ভূষিত করেন। এছাড়া একই বছর লন্ডনের ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৩৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভারত বর্ষের মহিসুর ও বেনারশ বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রী প্রদান করে। তিনি একাধারে ছিলেন, শিক্ষাবিদ, শিল্পপতি, রসায়নবিদ, সমাজসেবক, সমবায় আন্দোলনের পুরধা ও রাজনীতিবিদ। তিনি ১৯৮২ সালে কলিকাতার মানিকতলায় মাত্র ৮শ টাকা পুঁজি নিয়ে বেঙ্গল কেমিক্যাল এণ্ড ফার্মাসিউটিক্যাল ঔষধ শিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠান করেন। বর্তমানে ঐ প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন শাখা-প্রশাখায় কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা এক লাখেরও অধিক। পিসি রায় দেশের সাতক্ষীরা বাগেরহাট ও খুলনায় একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কাপড়ের মিল এবং জন্মভূমি রাড়লীতে একমাত্র সমবায় ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি একাধারে বিশ বছর কলিকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে রসায়ন শাস্ত্রের সহকারী অধ্যাপক ছিলেন।
ব্যক্তি জীবনে তিনি ছিলেন অবিবাহিত। দেশ-বিদেশে তার প্রতিষ্ঠত অসংখ্য সেবামূলক প্রতিষ্ঠান আজও অবিরাম মানব সেবা দিচ্ছে।অথচ ফাদার অব নাইট্টাইট খ্যাত বিশ্ব বরেণ্য বিজ্ঞনী স্যার পি,সি রায়ের জন্ম ভিটা বাড়ির ভবনগুলো আজও অবহেলিত। বসত ভিটার একাংশের মালিকানা নিয়ে বিচারাধীন রয়েছে একাধিক মামলা। উল্লেখ করার মত বাড়ির একাংশ প্রত্নতত্ব বিভাগের সংরক্ষণে,স্থান বিশেষ সিমেন্ট-মাটির ঘঁষা মাজা ও কোথাও কোথাও চুনকামের আঁচড় ছাড়া সংরক্ষণে তেমন ছোঁয়া লাগেনি। শ্রীহীন ভবনগুলোর কোথাও কোথাও ভেতরের ইটগুলো উঁকি দিচ্ছে খসে পড়ার। স্বাধীনতার পরবর্তী সময় বিভিন্ন ভাবে অপচেষ্টা চলে পি,সি রায়ের জন্মভূমি স্মৃতি চিহ্ন বসতভিটা দখলের।
সর্বশেষ ২০০৯ সালের অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে স্মৃতিচিহ্ন বসতভিটা দখল নেয় স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল। এতে ফুসে উঠে পি,সি, প্রেমী এলাকার সচেতন মানুষসহ প্রসাসনের সর্বস্তরের কর্মকর্তা। কঠোর আন্দোলনের মুখে সে সময় রাতের অন্ধকারে ঐ স্থানের মূল্যবান সম্পদ নিয়ে পালিয়ে যায় কথিত দখলদাররা। গত কয়েক বছর যাবত সরকারী উদ্যোগে পালিত হয়ে আসছে তার জন্ম ও মৃত্যু বার্ষিকী। বর্তমানে পিসি রায়ের জন্ম ভিটাবাড়ি সরকার   সংরক্ষণ করছে। দেশ-বিদেশে বিরল সাধনার ক্ষেত্রে স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু ছাড়া এমনভাবে বাঙালী মানুষকে অন্য কেউ মহিমান্বিত করতে পারেনি। পিসি রায় ছিলেন একাধারে বিজ্ঞানী, দার্শনীক ও শিল্পী। সমাজ সংস্কারে মানবতাবোধে উজ্জীবিত ছিলেন তিনি। তদানিন্তন সময়ে গ্রামের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সমবায় ব্যাংক পদ্ধতি চালু করেন। ১৯০৯ সালে নিজ জন্মভূমিতে কো-অপারেটিভ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন। চারটি গ্রামের নাম মিলে ১৯০৩ সালে বিজ্ঞানী স্যার পিসি রায় দক্ষিণ বাংলায় প্রথম আর,কে,বি,কে হরিশচন্দ্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করেন। পিতার নামে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। একই স্থানে স্যার পিসি রায়ের পিতা উপমহাদেশে নারী শিক্ষা উন্নয়নকল্পে ভূবন মোহিনীর নামে ১৮৫০ সালে রাড়লী গ্রামে বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। আজও প্রতিষ্ঠানগুলো স্বমহিমায় এগিয়ে চলছে। দেশ-বিদেশে তার স্থাপিত প্রতিষ্ঠান ও বিজ্ঞান সাধনায় ফলক স্মরণ করে সর্বস্তরের মানুষ। চির কুমার এই বিজ্ঞানী তার জীবনের অর্জিত সমস্ত সম্পত্তি মানব কল্যাণে দান করে গেছেন।
১৯৪৪ সালে ১৬ জুন কোন উত্তরসূরী না রেখে জীবনাবসান ঘটে বিজ্ঞানী আচার্য প্রফুুুল্ল    চন্দ্র রায়ের। বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানীর পদচারনা ও নিজ হাতের ছোঁয়ায় অসংখ্য প্রতিষ্ঠান আজও অবহেলীত রয়েছে। পাইকগাছা উপজেলা থেকে এখনও বিছিন্ন ফাদার অব নাইট্রাইট খ্যাত বিজ্ঞানী স্যার পিসি রায়ের জন্মস্থান রাড়লী গ্রামটি আজও অবহেলিত। পিসি রায়ের স্মৃতি বিজড়িত ভবনগুলো রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ধ্বংস হতে চলেছে। সংরক্ষণে এখনই পদক্ষেপ না নিলে এক সময় তা কালেরগর্ভে হারিয়ে যাবে। এলাকাবাসীর দাবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মভূমি সাগরদাঁড়িতে যেভাবে রক্ষনাবেক্ষন এবং মাইকেল মধূসূদন দত্তের জন্মাবার্ষিকীতে মন্ত্রীদের পদচারনায় মুখর হয়ে ওঠো পুরো সাগরদাঁড়ি। এক কথায় জাতীয় ভাবে পালিত হোক বিশ্ববরেণ্য পিসি রায়ের জন্মাবার্ষিকী। আর রাড়–লীস্থ পিসি রায়ের জন্মভূমিতে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হোক।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ফকরুল হাসান জানান, দিবসটি উপলক্ষ্যে দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে বিজ্ঞানীর প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পন, তার জীবন দর্শন, কর্মময় জীবন সম্পর্কিত তথ্যচিত্র প্রদর্শনী, রচনা, কুইজ ও বিতর্ক প্রতিযোগীতা,আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সহ বিভন্নি কর্মসূচি গ্রহন করা হয়েছে।
খবর৭১/এসঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here