আবু বক্কর সিদ্দিক, গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধিঃ
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে এবারে রেকর্ড পরিমাণ আউশ ধানের চাষ হয়েছে। অাশানুরূপ উৎপাদন আর বাজার দরে অধিক লাভজনক হওয়ায় কৃষকদের মূখে হাসি ফুটেছে। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও পৌরসভায় অবস্থিত ফসলের মাঠে রয়েছে অাউশ ধানের ক্ষেত। ইতোমধ্যে অধিকাংশ জমির ধান কাটা-মাড়াই সম্পন্ন হয়েছে। আবহাওঢা অনুকূলে থাকায় বোরো ও আমণ ক্ষেতের মতোই কৃষক-কৃষাণীরা এ মৌসূমের কাজ করছেন। তাঁরা এ ধানকে বলেন- ‘বর্ষালী ধান’। রোরো ও আমণ ধানের মধ্যবর্তী সময়ে এ ধান চাষে সময়, শ্রম, খরচ ইত্যাদীতে তাঁদেরকে বেগ পেতে হয়নি। বোরো ধান কাটা- মাড়াই করে ঐ জমিতে বর্ষালী ধানের চাষ করা হয়েছে। এ ধান কর্তন করেই একই জমি আমণ ধান চাষের জন্য প্রস্তুতি চলছে। এ ধান চাষে একদিকে যেমন মঙ্গা নিরসনে গুরুত্ব বহন করছে। অন্যদিকে তেমনি গো- খাদ্যের সঙ্কন মুক্ত করতে বেশ কাজে লেগছে ধানের গাছ (খড়)। আউশ (বর্ষালী) ধান চাষী কিছু কৃষকের সঙ্গে কথা হলে তাঁরা জানান, বর্তমানে কৃষি বিভাগের উৎসাহীপণা ও সুষ্ঠু নজরদারীর ফলে এবারে বিগত দিনের মতো ভুল করেন নি। তাই, তাঁরা বর্ষালী ধান চাষে আগ্রহী
হয়েছেন। অনেকেই আবার আফসোস করে বলেন, যদি সবগুলো জমিতেই এ ধান চাষ করতাম। তাহলে হাতেই থাকত সুযোগটা। হাত ছাড়া হতো না। উপজেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, বোরো ও আমণ ধানের মধ্যবর্তীতে যে ধান চাষ করা হয়। তাকেই সহজ ভাষায় আউশ ধান বলা হয়ে থাকে। যদিও সুন্দরগঞ্জে “বর্ষালী ধান” নামে পরিচিত। বর্তমান সরকার তথা কৃষি মন্ত্রনালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী ডিএই আউশ চাষ বৃদ্ধির জন্য নানাবিধ কর্ম- পরিকল্পনা গ্রহণ করায় আউশ আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। এ উপজেলায় ২০১৫ সালে আউশ ধানের আবাদ হয়েছিল মাত্র ৬০ হেক্টর, ২০১৬ সালে ছিল ৩’শ ৫০ হেক্টর., ২০১৭ সালে ছিল ৬’শ ৫০ হেক্টর। এবারে অর্থ্যাৎ ২০১৮ সালে এ ধানের চাষ হয়েছে- ২হাজার ৫’শ হেক্টর (প্রায়)। শস্য কর্তনের তথ্য সূত্রের বরাদ দিয়ে কৃষি বিভাগ বলছে, প্রতি বিঘা (৩৩ শতাংশ) জমিতে গড় ফলন প্রায় ১৬ মন। যা, উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রার্জনে সক্ষম। অর্থাৎ, অাশানুরূপ ফলনে হওয়ায় এবারে এ উপজেলায় আউশ (বর্ষালী) ধানের উৎপাদন হয়েছে ১২ হাজার মেট্রিক টন (প্রায়)।বর্তমানে প্রতি মণ ধানের বাজার মূল্য ৭’শ ৫০ থেকে ৮’শ টাকা। তাতে, কৃষকরা আর্থিকভাবেও প্রায় ২২ কোটি টাকা বাড়তি লাভ করেন। এছাড়া, গো- খাদ্য হিসেবে খড় তো আছেই।
উপজেলা কৃষি অফিসার- কৃষিবিদ রাশেদুল ইসলাম জানান,
প্রজোয্য ক্ষেত্রে আউশ’র জাত- ২২, ২৩ ও ৪৮ হলেও কৃষকেরা ব্রি- ২৮ প্রজাতেরও ধান চাষ করেছেন। ভবিষ্যতে আউশ (বর্ষালী) ধানের আবাদ বৃদ্ধির জন্য নিরলসভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে কৃষি বিভাগ তথা কৃষিবিদ ও ডিপ্লমা কৃষিবিদগণ। সরকারের সকল কর্মসূচী সঠিকভাবে ও সঠিক সময়ে বাস্তবায়নের জন্য এই অর্জন। যারা এই অর্জনে অগ্রণী ভুমিকা রেখেছে। এজন্য তাদেরকে অর্থাৎ আমার সহকর্মীদের অশেষ ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি আরো বলেন, জমিগুলো বোরো ও আমণের মধ্যবর্তী যে সময়টুকু পতিত থাকতো। সেই সময়টুকুর সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে একটি উপজেলা থেকে যদি ২২ কোটি টাকা দেশের ইকোনোমিতে যোগ হয়। তাহলে আউশ চাষের গুরুত্ব সহজেই অনুমেয়।