খবর ৭১ঃ বর্তমান সংসদ ভেঙে দিয়েই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী (বি. চৌধুরী)। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের দাবি খুবই সুস্পষ্ট; আমরা নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই। আর নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রধান শর্ত এর একশ’ দিন আগে সংসদ ভেঙে দেওয়া, মন্ত্রিসভা ভেঙে দেওয়া। একইসময়ে নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে প্রধানমন্ত্রীকেও পদত্যাগ করতে হবে। এ ছাড়া, সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরির জন্য নির্বাচনের একমাস আগে সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে।’
শুক্রবার (২৭ জুলাই) চট্টগ্রাম নগরীর টাইগারপাসের পলোগ্রাউন্ড রেলওয়ে অফিসার্স ক্লাবে আয়োজিত এক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) উদ্যোগে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সমাবেশে বদরুদ্দোজা চৌধুরী প্রধান অতিথি ছিলেন।
বি. চৌধুরী বলেন, ‘সেনাবাহিনী মোতায়েনের পাশাপাশি নির্বাচনের সময় তাদের ভোটকেন্দ্রে থাকতে দিতে হবে। তাদের বিচারিক ক্ষমতা দিতে হবে সাময়িকভাবে, যাতে তারা বিচার করতে পারে। পাকিস্তানেও সেটি করা হয়েছে।’
নির্বাচনের আগে সব রাজবন্দিদের মুক্তি চেয়ে তিনি আরও বলেন, ‘কারাগারে থাকা রাজনৈতিক বন্দিদের বিনা বিচারে আটকে রাখা চলবে না। সব রাজবন্দিদের মুক্তি দিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের অন্তত একশ’ দিন আগ থেকে নিবাচন পরবর্তী সময় পর্যন্ত সব সংবাদ মাধ্যমকে স্বাধীন করে দিতে হবে, যেন তারা নিরপেক্ষভাবে সংবাদ উপস্থাপন করতে পারে।’
বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, ‘একটা নতুন যুদ্ধ শুরু হয়েছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আপনি সেই যুদ্ধে শামিল হবেন নাকি হাত গুটিয়ে বসে থাকবেন; বসে থেকে লাথি খেতে খেতে দেখবেন, কতদূর যাওয়া যায়? আমরা কিন্তু লাথি খেতে রাজি না। যারা আমাদের গণতন্ত্র লুট করেছে, চুরি করেছে, ডাকাতি করেছে, আমরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখবো না; আমরা হারানো সেই গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনবো।’
সাবেক এই রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘হত্যা পর হত্যা করা হচ্ছে, গুম করা হয়, ছাত্রদের হাতুড়ি দিয়ে পেটানো হয়। আমাদের কিছু সন্তান অন্য সন্তানদের হাতুড়িপেটা করে। আমরা সেগুলো দেখছি। অনেক মাকে কাঁদতে দেখলাম। পেপারে দেখলাম, টেলিভেশনে দেখলাম। প্রধানমন্ত্রীর পায়ে হাত দিয়ে এক মা বলছেন, আমার সন্তানকে ছেড়ে দেন। মায়েদের এই কান্না দেখে সরকারের দয়া হয় না। এই সরকার দয়া-মায়াহীন নিষ্ঠুর।’
সমাবেশে বদরুদ্দোজা চৌধুরী যুক্তফ্রন্ট ক্ষমতায় গেলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যেসব কাজ করবেন সেগুলোর বর্ণনা দেন।
বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি বলেন, ‘আমরা যাদের নিয়ে সরকার গঠন করতে চাই। আমরা হলফ করে বলতে পারবো, আমাদের কারও নামে কোনও দুর্নীতির মামলা নেই। আর কোনও রাজনৈতিক দল সেটি বলতে পারবে না। আমরা সরকার গঠনে চরিত্রবান মানুষ চাই এবং আমরা চরিত্রের প্রমাণ দেবো।’
তিনি বলেন, ‘যুক্তফ্রন্টের একটি পরিচ্ছন্ন রাজনৈতিক ইতিহাস থাকবে। এ ধরনের একটি ফ্রন্ট যদি সরকার গঠন করে, তাহলে দেশ কি পাবে? প্রথম কথা হলো, আমরা ভোটের অধিকার নিশ্চিত করবো। ইউনিয়ন কাউন্সিল থেকে জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত সব নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে, এ ওয়াদা আমাদের থাকবে। দ্বিতীয়ত, আমরা স্বাস্থ্য সংস্কার করবো। আমরা সন্ত্রাসীদের বিচার করবো, তাদের ছেড়ে দেবো না।’
বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, ‘দরিদ্রদের বাঁচার অধিকার দেবো। বিশেষ করে যারা বৃদ্ধ, বিধাবা। এখনও অনেক গ্রাম আছে, যেখানে বিধবারা খেতে পায় না। তাদের খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে। দরিদ্র মানুষের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে। এসব আমরা করবো।’
তিনি বলেন, ‘ব্যাংক যারা লুটপাট করেছে, তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে না। এটি আপনাদের টাকা, এই অর্থের মালিক আমরা, এই অর্থের মালিক সাধারণ মানুষ। সেই লুট হওয়া টাকা আমরা উদ্ধার করবো, বিচার করবো। সোনা-তামার যাদু আমরা ছেড়ে দেবো না। আমরা এর পেছনে লেগে থাকবো। শেয়ারবাজার থেকে যারা টাকা সরিয়ে নিয়েছেন, আমরা তার বিচার করবো। এই যে কয়লা খেয়ে ফেললো, কিভাবে খেলো, আমরা খুঁজে বের করবো।’
বি. চৌধুরী বলেন, ‘ছাত্রদের হাতুড়ি পিটাইয়া শায়েস্তা করবেন, আর আমরা চেয়ে চেয়ে থাকবো, তা হবে না। এর একদিন বিচার হবে। হাতুড়িপেটা চলবে না।’
সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি আ স ম আব্দুর রব, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত বক্তব্য রাখেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, বিকল্প ধারা বাংলাদেশের মহাসচিব মেজর (অবঃ) আব্দুল মান্নান, গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, জিএসডি সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন ও জেএসডি যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন প্রমুখ।