খবর ৭১ঃবুধবার রাত ১১টার কিছুক্ষণ পর ফ্লাইটি নেমেছিল দিল্লিতে। ওই বিমানে ছিলেন এমন একজন যাত্রী- যিনি দিল্লিতে পা রাখুন ভারতীয় কর্তৃপক্ষ তা একেবারেই চাইছিল না।
যদিও তার কাছে ভারতের বিজনেস ভিসা ছিল। যে কারণে ভারতের ফ্ল্যাগশিপ ক্যারিয়ার এয়ার ইন্ডিয়াও তাকে বিমানে উঠতে দিয়েছিল বিনা বাধাতেই। প্রবীণ, সত্তরোর্ধ্ব ওই ভদ্রলোকের নাম লর্ড অ্যালেক্সান্ডার কার্লাইল। ব্রিটেনের হাউস অব লর্ডসের প্রবীণ সদস্য তিনি, বিশিষ্ট আইনজীবীও।
তিনি কারাবন্দি বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার অন্যতম আইনজীবী হিসেবেও নিযুক্ত হয়েছেন সম্প্রতি। আর সে কাজের সূত্রেই তার দিল্লিতে পা রাখা।
খালেদা জিয়াকে কিভাবে ‘সাজানো মামলা’য় ও ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে’ হেনস্তা করা হচ্ছে, সংবাদমাধ্যমের কাছে সেসব তুলে ধরার জন্য তিনি দিল্লিতে এসেছিলেন।
তিনি বাংলাদেশে প্রবেশের জন্য ভিসার আবেদন করেছেন। কিন্তু তার বাংলাদেশের ভিসার আবেদন ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে বলেই তিনি ঢাকার পরিবর্তে দিল্লিতে এসে ওই সংবাদ সম্মেলন করতে চান, এমনটাও জানিয়েছিলেন তিনি।
কিন্তু তার এসফরকে কেন্দ্র করে তীব্র আপত্তি জানায় বাংলাদেশ সরকার। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়, লর্ড কার্লাইল যদি দিল্লিতে এসে খালেদা জিয়ার মামলা নিয়ে কথা বলেন তাহলে সেটা হবে দিল্লির মাটিতে দাঁড়িয়ে একটা ‘পেইড পলিটিক্যাল ক্যাম্পেইন’ – অর্থাৎ পয়সা নিয়ে চালানো রাজনৈতিক প্রচারণার শামিল।
ভারত যে এভাবে ‘তাদের মাটিকে বাংলাদেশবিরোধী প্রচারে’ কাজে লাগাতে দিতে পারে না, ঢাকার সেই মনোভাবও দিল্লির কাছে স্পষ্ট করে দেয়া হয়েছিল।
বাংলাদেশের আপত্তির কারণে ভারতে ঢুকতে না পেরে লর্ড কার্লাইল লন্ডনে ফিরে গিয়ে সেখান থেকে একটি ভিডিও কনফারেন্স করেছেন। সেখানে তিনি দিল্লির সংবাদমাধ্যমের কাছে দাবি করেছেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনারকে তলব করে এ ব্যাপারে তাদের তীব্র আপত্তির কথাও জানিয়েছিলেন।
লর্ড কার্লাইলের ভাষ্য অনুযায়ী, আমি যখন দিল্লিতে নেমে আমার ফোন অন করলাম, দেখি আমার ভিসা বাতিল করা হচ্ছে বলে আমাকে মেসেজ পাঠানো হয়েছে। ইমিগ্রেশন কাউন্টারে আমাকে জানানো হলো আমাকে ভারতে ঢুকতে দেয়া যাবে না।
তিনি বলেন, সত্যি কথা বলতে কি ইমিগ্রেশনের কর্মীরা খুবই ভদ্র ও বিনীত ছিলেন। তারা আমার সঙ্গে এমনিতে খুবই সুন্দর আচরণ করেছেন। কিন্তু তাদের কাছে কোনও জবাবই ছিল না যে, কেন আমাকে ঢুকতে দেয়া যাবে না।
এর পরপরই ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রবীশ কুমার জানিয়ে দেন, লর্ড কার্লাইল যে কারণ দেখিয়ে ভিসার আবেদন করেছিলেন- আর তার সফরের প্রকৃত উদ্দেশ্য এসবের মধ্যে কোনও সাযুজ্য নেই বলেই আমরা তার ভিসা প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
পরে বিকালে তিনি আরও যোগ করেন, লর্ড কার্লাইল ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্কের মধ্যে ভুল-বোঝাবুঝি সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছেন – এমন সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণ আছে। এমনকি তিনি ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বিরোধী দলের (বিএনপি) সম্পর্কেও সন্দেহ তৈরি করতে চাইছেন বলে রবীশ কুমার দাবি করেন।
ওই মুখপাত্র আরও জানান, লর্ড কার্লাইল খুব ভালো করেই জানতেন তাকে ফিরে যেতে হবে- সে কারণেই তিনি ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের বিমানের ‘রিটার্ন বোর্ডিং পাস’ নিয়েই এসেছিলেন।
লন্ডন থেকে বৃহস্পতিবার সকালে তিনি বলেন, হিথরোতে তার ভারতীয় ভিসা স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে অন্তত দুবার চেক করা হয়েছিল- কিন্তু তাতে কোনও অসঙ্গতি পাওয়া যায়নি।
ভারত সরকারকে রাজি করিয়ে দিল্লিতে ঢোকার ব্যবস্থা করা যায় কি না, সে জন্য লর্ড কার্লাইল দিল্লি বিমানবন্দর থেকে ভারতে নিযুক্ত ব্রিটিশ ডেপুটি হাইকমিশনারকেও ফোন করেছিলেন।
কিন্তু লর্ড কার্লাইলের দাবি অনুযায়ী, তিনিও এ ব্যাপারে তার অসহায়তা ব্যক্ত করেন এবং পরিষ্কার জানিয়ে দেন ভারতের সিদ্ধান্ত নড়চড় হওয়ার কোনও সুযোগ নেই।
এর কিছুক্ষণ পরই তাকে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের লন্ডনগামী ফিরতি বিমানে উঠিয়ে দেয়া হয়।
খবর ৭১/এসঃ