ঠাকুরগাঁওয়ে চায়ের দামে আম: হতাশ ব্যবসায়ী

0
543

সোহেল পারভেজ,ঠাকুরগাঁও : ঠাকুরগাঁওয়ে আমের বাম্পার ফলন হওয়ায় এক কাপ চায়ের দামে পাওয়া যাচ্ছে এক কেজি আম। গত বছরের তুলনায় এ বছর আমের দাম তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় হতাশ জেলার আম ব্যবসায়ীরা।

গত বছর আম চাষ করে লাভের মুখ দেখলেও এ বছর লোকসান গুনতে হবে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।
বর্তমানে আমের যে পরিমান মূল্য বাজারে লক্ষ্য করা যাচ্ছে এভাবে চলতে থাকলে আগামীবার অনেক চাষি আম চাষ থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সরেজমিনে আম চাষিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত বছরের তুলনায় এ বছর প্রচুর পরিমাণে গাছে মুকুল আসে। সেই সাথে বেশি লাভের আশায় গাছের পরিচর্যা করায় প্রতিটি গাছে যেন থোকায় থোকায় ঝুলছে আম। এ বছর তীব্র তাপদাহ ও গরম আবহাওয়ার কারণে সময়ের আগে গাছেই আম পাকতে শুরু করে।

ঠাকুরগাঁওয়ের আম চাষিরা জানান, এবার আমের প্রচুর ফলন হওয়ায় আমের দাম অনেক সস্তা। আর আমরা যে টাকা দিয়ে বাগান কিনেছি তার অর্ধেক টাকাও এই মৌসুমে আসে কিনা তা নিয়ে দুশ্চিন্তাই পড়েছি আমরা। বাজারে আমের কেজি বিক্রি যাচ্ছে ৫ থেকে ১০ টাকা মাত্র। এত কম দামে যদি আম হয় তাহলে লাভ তো দুরে থাক আসল পুজিও টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না বলে আশা করেন তারা।

এদিকে খুচরা আম ব্যবসায়ীরা জানান, বাগান থেকে আমরা ১০ থেকে ১৫ টাকা হারে আম ক্রয় করেছি কিছু লাভের আশায়। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে বাজারে অতিরিক্ত আমের কারনে সেই আমের দাম ক্রেতারা ১০ টাকা কেজি দরেও নিতে চাইনা। প্রতি বছর আম বিক্রি করে মোটামটি আমাদের সংসার চলে যায় কিন্তু এবার আমের বেহাল দশা হওয়ায় এক কাপ চা খেতে হচ্ছে এক কেজি আম দিয়ে। আম বিক্রি করে নিজেদের সংসার চালানো তো দুরে থাক নিজেই চলতে পারি কিনা সেটি নিয়ে ভাবছি আমরা।

শহরের আম বাজার সহ কয়েকটি বাজার ঘুরে আম বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বছর জেলার বিখ্যাত আম সূর্যাপুরি বিক্রি হয়েছে ১৩০০ টাকা থেকে ১৬০০ টাকা, কিন্তু এবার ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। হিম সাগর আম মণ প্রতি বিক্রি হয়েছে ২০০০ থেকে ২৫০০ টাকা করে। যা এ বছর বিক্রি হচ্ছে ৮০০ শত থেকে ১০০০ টাকায়। গোপালভোগ গত বছর ১২০০ থেকে ১৬০০ টাকা, এ বছর ৭০০ থেকে ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ল্যাংড়া আম গত বছর ২০০০ থেকে ৩০০০ টাকা, এ বছর ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত।
এ বিষয়ে সমাজ সেবক ও ঠাকুরগাঁও চেম্বারের সদস্য মামুন উর রশিদ বলেন,জেলায় ব্যাপক পরিমান আমের ফলন হয়েছে। তবে আমরে মূল্য না পাওয়ায় আম চাষীরা চরম ক্ষতিগ্রস্থ্য হচ্ছে। তিনি আরও বলেন,এ জেলায় কৃষি ভিত্তিক শিল্পাঞ্চল গড়ে তুললে ও আম সংগ্রহ করে জুস তৈরির একটি ব্যবস্থা নেওয়া হলে কৃষক আমের দাম পাবে বলে জানান তিনি।

এ ব্যাপারে ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আফতাব হোসেন বলেন, ‘ঠাকুরগাঁও শহর একটি উন্নয়নশীল শহর। এ জেলায় প্রায় ৮ হাজার হেক্টর জমিতে আম চাষ করা হয়। অন্যান্য সবজি ও ফলের পাশাপাশি প্রচুর পরিমানে আম রয়েছে। তন্মধ্যে সূর্যাপুরী আমটির বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এবারে আবহাওয়া অনূকুলে থাকায় আমের ফলন ভালোই হয়েছে। তবে কৃষকরা বিগত বছরের চেয়ে এবার মূল্য কম পাচ্ছেন এই নিয়ে কৃষকরা কিছুটা মর্মাহত হলেও ফলনের দিক থেকে বেশি হওয়ায় তা আবার কিছুটা পুশিয়ে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে যদি ঠাকুরগাঁও জেলায় আম সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তাহলে এই বিপুল উৎপাদিত আমগুলো সংরক্ষণ করে কৃষকরাও লাভবান হতেন, সেই সাথে দেশের সরকারও এই আম বিদেশে রপ্তানি করে লাভবান হতেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here