খবর৭১: এমপিওভুক্তির দাবিতে ৫ম দিনের মতো আমরণ অনশন চালিয়ে যাচ্ছে নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আন্দোলনরত শিক্ষক-কর্মচারীরা। তাদের দাবি মেনে না নিলে আরও কঠোর কর্মসূচি দিবে বলে জানিয়েছেন নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক কর্মচারী ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ ড. বিনয় ভূষণ রায়।
অনশনের কারণে ৯২জন শিক্ষকই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাদের মধ্যে ৬৯ জনকে সেলাইন দেয়া হয়েছে এবং ১১ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
শুক্রবার (২৯ জুন) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অামরণ অনেশন চলাকালীন তিনি এসব কথা বলেন।
নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ ড. বিনয় ভূষণ রায় বলেন, ‘সংসদে বাজেট পাশ হয়েছে। যদি আমাদের দাবি মেনে না নেয়া হয় তাহলে আরও কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আগেই বলেছিলাম ২৪ জুনের মধ্যে আমাদের দাবি মেনে নেয়া না হলে ২৫ জুন থেকে আমরা আমরণ অনশনে বসবো। পূর্বঘোষিত সেই ঘোষণা অনুযায়ী সোমবার (২৫ জুন) সকাল ১০টা থেকে অনশনে বসেছি। যত ঝড় তুফান আসুক না কেন আমাদের দাবি না মানা পর্যন্ত আমরা অনশন চালিয়ে যাবে।’
আমরণ অনশনের ২য় দিনের মতো অনশনে ৪ জন শিক্ষক অসুস্থ হয়েছে। তাদের আশপাশের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলেও তিনি দাবি করেন। তিনি আমরণ অনশনরত কোনো শিক্ষকের মৃত্যুর দুসংবাদ শোনার আগেই তাদের দাবি মেনে নেয়ার আহবান জানান।
উল্লেখ্য, গত ১০ জুন থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের ব্যানারে রাস্তায় অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছেন তারা।
অধ্যক্ষ ড. বিনয় ভূষণ রায বলেন, ‘দীর্ঘদিন যাবত সারাদেশে পাঁচ হাজারের অধিক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১৫ থেকে ২০ বছর যাবত ২০ লাখের বেশি শিক্ষার্থীদের বিনা বেতনে পাঠদান করে শিক্ষক-কর্মচারীরা অত্যন্ত কষ্টকর ও মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অনেকের চাকরির মেয়াদ আছে ৫-১০ বছর। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা সারাদেশে উন্নয়নবঞ্চিত অবস্থায় জীবনযাপন করছে।’
তিনি জানান, ‘গত ১২ জুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করতে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (স্কুল-কলেজ) এর জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা ২০১৮ জারি করা হয়েছে। এই নীতিমালা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পাঠদান অনুমতি ও স্বীকৃতির সময় আরোপিত শর্তের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। চলতি ২০১৮-১৯ বাজেটে নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য বরাদ্দের কোনো সুস্পষ্ট ঘোষণা নেই। যার ফলে নন-এমপিও শিক্ষক কর্মচারীরা অত্যন্ত হতাশ ও আশাহত হয়ে পড়েছেন। এ অবস্থায় মহামান্য রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপে সারাদেশের ননএমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একযোগে এমপিওভুক্তি হলে সকলেই সন্তুষ্টচিত্তে বাড়ি ফিরে যাবে।’
এর আগে এমপিওভুক্তির দাবিতে ননএমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে লাগাতার কর্মসূচি শুরু করেন। ননএমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের ডাকে টানা ওই অবস্থান ও অনশনের একপর্যায়ে গত ৫ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে তার তৎকালীন একান্ত সচিব সাজ্জাদুল হাসান সেখানে গিয়ে আশ্বাস দেন। এরপর শিক্ষক-কর্মচারীরা আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণা দেন। এরপর সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে বলা হয়েছে আসন্ন অর্থ বছরে নতুন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হবে। কিন্তু অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গত বৃহস্পতিবার ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরের যে বাজেট প্রস্তাব করেন, সেখানে নতুন এমপিওভুক্তির বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে কিছু বলা হয়নি।
এবারের বাজেটে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগের জন্য ৫৩ হাজার ৫৪ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে খাতওয়ারি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ। বাজেট বরাদ্দে প্রাথমিক বিদ্যালয়, কারিগরি প্রতিষ্ঠান ও অবকাঠামো নির্মাণে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
খবর৭১/এস: