খবর৭১: পোশাকখাতে রাশিয়ায় ৫২ বিলিয়ন (পাঁচ হাজার ২০০ কোটি) ডলারের বাজার রয়েছে। সেই বাজারে জায়গা করে নিতে জোর পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে বাংলাদেশ। এর অংশ হিসেবে গত ২১ থেকে ২৩ মে পর্যন্ত মস্কোতে বাংলাদেশের বস্ত্র ও পাটপণ্যের মেলা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের পোশাক ও পাটশিল্প খাতের উদ্যোক্তারা এই মেলায় অংশ নেন।
মেলা অনুষ্ঠিত হয় মস্কোর রেডিসন স্লাভিয়ানস্কায়া হোটেল অ্যান্ড বিজনেস সেন্টারে। বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো ও মস্কোর বাংলাদেশ দূতাবাস এই মেলার আয়োজন করে।
তৈরি পোশাকখাতের মালিক-উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএ, পাট খাতের উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান, বিজেএমসি ও জুট ডাইভারসিফেকশন প্রমোশন সেন্টার (জেপিডিসি) এই মেলায় অংশ নেয়। বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম বলেন, বর্তমানে রাশিয়া পোশাক ও পাটপণ্যের বড় একটি বাজার। এই বাজারে জায়গা করে নেয়ার জন্য অতীতে বাংলাদেশ থেকে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। আমরা আশা করছি, এই মেলার মাধ্যমে রাশিয়ার মানুষ বাংলাদেশ পোশাক ও পাটপণ্য সম্পর্কে জানতে পারবে। আর রাশিয়ার বাজার ধরতে পারলে বাংলাদেশের জন্য সিআইএসভুক্ত (কমনওয়েলথ অব ইন্ডিপেনডেন্ট স্টেট) অন্য দেশগুলোর বাজারে প্রবেশ করা সহজ হবে।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রাশিয়ার বাজারে ৩৭৯ মিলিয়ন ডলারের পোশাক পণ্য রপ্তানি করেছে। যে কারণে বাংলাদেশ এই বাজারে বড় ধরনের সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছে। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা মনে করেন, রাশিয়ার সঙ্গে তাদের জোটভুক্ত দেশ উজবেকিস্তান, বেলারুশ, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, মলদোভা, আর্মেনিয়া, আজারবাইজান ও তাজিকিস্তানের ভালো বাণিজ্যিক যোগাযোগ রয়েছে। এসব দেশের মানুষ অবাধে রাশিয়ায় যাতায়াত করে।
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক চমৎকার। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ও বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের সহযোগিতার পাশাপাশি সামরিক দিক থেকেও দেশটির সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক বাড়ছে। আমরা আশা করি, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যও বাড়বে। আর এ জন্য সরকার-ব্যবসায়ী যৌথভাবে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে।
বিজিএমইএ সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, রাশিয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং বড় দেশ। এ দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধিতে আরো বেশি গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে হবে। তবে এবারের পদক্ষেপ বেশ ইতিবাচক। এর মধ্য দিয়েই আমাদের সম্ভাবনার দুয়ার খুলবে। তিনি আরো বলেন, সরকার ব্যবসায় সহায়তা করে। ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করে। এসব বিষয়ে সরকার দেশে-বিদেশে আমাদের সহায়তা করছে। তবে রাশিয়ায় একটু ব্যতিক্রম। মেলায় কাঙ্ক্ষিত ক্রেতা আসেনি। আশা করি এই উদ্যোগের ফলে সামনে ইতিবচাক সাড়া পাওয়া যাবে।
বিজিএমইএ প্রথম সহসভাপতি মো. মঈন উদ্দিন আহমেদ জানান, রাশিয়ায় যে ধরনের প্রত্যাশা নিয়ে আমরা এসেছিলাম সে প্রত্যাশা পূরণ না হলেও এ ধরনের উদ্যোগের মাধ্যমে আগামীতে রাশিয়ায় বাংলাদেশের পণ্যের একটি বড় জায়গা তৈরি হবে। এর ফলে দেশের সুবর্ণজয়ন্তীতে পোশাকখাত থেকে ৫০ বিলিয়ন ডলার আয়ের রূপকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।
রাশিয়ায় বাজার সম্প্রসারণে বাধা নিয়ে বিজিএমইএ সহসভাপতি মোহাম্মদ নাছির বলেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাকখাতের বর্তমানে প্রধান কাজ হলো বাজার এবং পণ্য বহুমুখী করা। আর এ লক্ষ্য নিয়েই আমাদের এখানে আসা। তবে রাশিয়ায় কমার্শিয়াল উইং প্রয়োজনীয় কাজ করতে পারছে না। খাতসংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয়ের মাত্র দেড় শতাংশ আসে রাশিয়া থেকে। চলতি অর্থবছরের মার্চ পর্যন্ত রাশিয়ায় ৩৪ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। তবে দেশটিতে তৈরি পোশাকখাতের বাজার পাঁচ হাজার ২০০ কোটি ডলারের।
খবর৭১/জি: