খবর৭১: ময়মনসিংহ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সাতক্ষীরা, কুমিল্লা, কুষ্টিয়া ও যশোরে কথিত বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় নয়জন নিহত হয়েছে। সোমবার দিবাগত রাত থেকে মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত এসব ঘটনা ঘটে।
ভালুকায় নিহত ১
ময়মনসিংহ অফিস জানায়, ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার পাড়াগাঁওয়ে সোমবার দিবাগত রাত সোয়া দুইটায় পুলিশের সাথে বন্ধুকযুদ্ধে শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী ও ডাকাতি মামলার আসামি মিজান নিহত হয়। এ সময় দুই পুলিশ আহত হন। ঘটনাস্থল থেকে মাদক ও অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
ডিবির ওসি আশিকুর রহমান খবরের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ভালুকা উপজেলার পাড়াগাঁও গ্রামের চটনপাড়া সামাদ ফকিরের বাড়ির পাশে মাদক ভাগাভাগি করছে এমন সংবাদের প্রেক্ষিতে ভালুকা থানার ইন্সপেক্টর তদন্ত মাজহারুল ইসলামকে সাথে নিয়ে পুলিশের যৌথ অভিযান পরিচালনাকালে সোমবার দিবাগত রাত সোয়া দুইটায় উল্লেখিত স্থানে পৌঁছালে মাদক ব্যবসায়ীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপসহ এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করে। তখন ওসি ডিবির নির্দেশে যৌথ টিম আত্মরক্ষার জন্য গুলি ছোঁড়ে। উভয়ের মধ্যে গুলি বিনিময়ের প্রাক্কালে গোলাগুলির এক পর্যায়ে আসামিরা পালিয়ে যায়। এলাকা তল্লাশীকালে শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী ও একাধিক ডাকাতি মামলার আসামি মো: মিজানকে (৪৫) গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য দ্রুত ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো করা হয়। কর্তব্যরত ডাক্তার আসামিকে মৃত ঘোষণা করেন। বন্ধুকযুদ্ধে ভালুকা থানার ইন্সপেক্টর (অপারেশন) আবুল কালাম আজাদ এএসআই/ শাহআলম গুরুতর আহত হোন। আহত পুলিশ সদস্যদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। ঘটনাস্থল হতে ১০০ গ্রাম হেরোইন, ১০০ পিচ ইয়াবা, তিনটি গুলির খোসা, ১টি রামদা, ১টি চাপাতি উদ্ধার করা হয়। অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা রজু প্রক্রিয়াধীন। মৃত মিজানের বিরুদ্ধে মাদক, অস্ত্র, ডাকাতিসহ ৮/৯টি মামলা আছে।
নিহত মিজান ভালুকার দক্ষিণ কাচিনা গ্রামের মৃত নুরুল ইসলামের ছেলে।
আখাউড়ায় নিহত ১
আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) সংবাদদাতা জানান, সোমবার রাতে আখাউড়ায় সহযোগীদের সাথে বন্দুকযুদ্ধে ডাকাতিসহ ৮ মামলার আসামী জনি মিয়া (৩০) নিহত হয়েছে। এ সময় পুলিশ একটি পাইপ গান, একটি কার্টুজ, দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করে। ডাকাতির মালামাল ভাগাভাগি ও মাদক ব্যবসার বিরোধকে কেন্দ্র করে এই গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে বলে পুলিশ জানিয়েছেন।
নিহত জনি মিয়া আখাউড়া রেলওয়ে বাগানবাড়ীর ফিরোজ মিয়ার ছেলে। তার স্থায়ী বাড়ি কুমিল্লার দেবিদ্বার থানার খাইয়ার গ্রামে।
পুলিশ জানায়, সোমবার দিবাগত রাত প্রায় আড়াইটায় আখাউড়া পৌরসভার খালাজুড়া এলাকার আনোয়ারপুর রাস্তায় কুদ্দুসের বাগানে গোলাগুলির শব্দ শুনে আখাউড়া থানার এসআই কামাল হোসেন ও এসআই হাদিস উদ্দিন সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে উপস্থিত হয়ে জনি মিয়ার গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করে।
এ ব্যাপারে আখাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন তরফদার জানান, নিহত জনি মিয়ার বিরুদ্ধে ডাকাতি, ডাকাতির প্রস্তুতি, মাদক, দস্যুতা চোরাচালানোর অভিযোগে থানায় ৮টি মামলা রয়েছে।
কুমিল্লায় পুলিশের সাথে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ দুইজন নিহত
কুমিল্লা সংবাদদাতা জানান, কুমিল্লায় পুলিশের ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মাদক ব্যবসায় অভিযুক্ত দুইজন নিহত হয়েছে। তারা হচ্ছেন লিটন ওরফে কানা লিটন (৪৩) এবং বাতেন (৩৪)। নিহত লিটন উপজেলার পৈয়াপাথর এলাকার আবদুস ছামাদের ছেলে। তার বিরুদ্ধে ৭টি মাদকের মামলা রয়েছে। নিহত বাতেন একই উপজেলার বাখরনগর গ্রামের সহিদ মিয়ার ছেলে। তার বিরুদ্ধে ৮টি মাদকের মামলা রয়েছে।
সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে জেলার মুরাদনগর উপজেলার গুঞ্জর এলাকায় গোমতী প্রতিরক্ষা বাঁধের পাশে ভাই ভাই ব্রিক ফিল্ডের সামনে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে একটি পাইপগান ও ৪০০ বোতল ফেনসিডিল।
মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা একেএম মঞ্জুর আলম জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মাদক উদ্ধার করতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মুরাদনগর সার্কেল) জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে তিনিসহ পুলিশের একটি দল মুরাদনগর উপজেলার গুঞ্জুর এলাকায় গোমতী বাঁধের পাশে অবস্থান নেন। সেখানে মাদক ব্যবসায়ী কানা লিটন ও বাতেনসহ তাদের সহযোগীরা পৌঁছলে তাদের আটকের চেষ্টাকালে তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এ সময় পুলিশও আত্মরক্ষায় ৫৩ রাউন্ড শটগানের গুলি চালায়। এ সময় উভয় পক্ষের গুলি বিনিময়ে মাদক ব্যবসায়ী লিটন ও বাতেন গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন। তাদেরকে উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে উভয়ের মৃত্যু হয়। ওসি আরও জানান, ওই অভিযানের সময় থানার এসআই মোজাম্মেল, এএসআই রোকন ও এএসআই মাসুদুর রহমান আহত হয়েছেন।
উল্লেখ্য, গত এক সপ্তাহে জেলার কোতোয়ালীতে তিনজন, চৌদ্দগ্রামে একজন, সদর দক্ষিণে দুইজন, বুড়িচংয়ে একজন, ব্রাহ্মণপাড়ায় দুইজন এবং দেবিদ্বারে একজন ও সর্বশেষ মুরাদনগরে দুইজনসহ মোট ১২ জন ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছে।
কলারোয়ায় ব্যবসায়ীর গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার
সাতক্ষীরা সংবাদদাতা জানান, সাতক্ষীরার কলারোয়ায় আনিসুর রহমান নামের এক ব্যক্তির গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। পুলিশ বলছে তিনি মাদক ব্যবসায়ী। কলারোয়ার ইয়াবাসম্রাট নামে পরিচিত এই ব্যক্তি মাদক ব্যবসায়ীদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে মাদকের ভাগাভাগি নিয়ে সংঘর্ষের জেরে গোলাগুলির মধ্যে মারা গেছে। এসময় ঘটনাস্থল থেকে একটি ওয়ান শুটারগান, দুই রাউন্ড গুলি ও ৭০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।
নিহতের নাম আনিসুর রহমান (৪০)। তিনি কলারোয়ার পাকুড়িয়া গ্রামের সুরত আলির ছেলে।
কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিপ্লব কুমার নাথ জানান, সোমবার রাত সোয়া ২টায় তার কাছে খবর আসে যে দেয়াড়া ইউনিয়নের চিতলার মাঠে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে মাদকের ভাগাভাগি নিয়ে চোরাচালানিদের দুটি বিবদমান গ্রুপ গোলাগুলি করছে। এ খবর পেয়ে খোরদো পুলিশ ক্যাম্পের উপপরিদর্শক (এসআই) সিরাজুল ইসলাম একদল পুলিশ সদস্য নিয়ে সেখানে পৌঁছে তাদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন। এ সময় পুলিশ তিন রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে।
ওসি আরও জানান, কিছুক্ষণ পর গোলাগুলি থেমে গেলে ঘটনাস্থল থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় এক ব্যক্তিকে উদ্ধার করা হয়। পরে তাকে কলারোয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তার মৃত ঘোষণা করেন।
তার বিরুদ্ধে সাতক্ষীরা জেলায় ১০টি মাদক মামলা রয়েছে। তিনি জানান, ঘটনাস্থল থেকে একটি ওয়ানশুটার গান, দুই রাউন্ড গুলি ও ৭০ পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়েছে। নিহত আনিসুরের লাশ ময়না তদন্তের জন্য সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে, নিহতের স্ত্রী নাজমা বেগম জানান, তার স্বামীকে সোমবার সকালে বাড়ি থেকে সাদা পোশাকধারীরা কলারোয়া থানার পুলিশ পরিচয়ে বাড়ী থেকে তুলে আনার পর তিনি কলারোয়া থানা ও খোরদো পুলিশ ক্যাম্পে খোঁজ নিলে জানানো হয় পুলিশ তাকে আটক করেনি। তিনি বিষয়টি নিয়ে প্রথমে কলারোয়ায় ও পরে সাতক্ষীরায় একটি সংবাদ সম্মেলন করার চেষ্টা করেন। রাতে কলারোয়া থানায় একটি জিডি করতে গেলে পুলিশ তাও নেয়নি। বলেছে একটু দেরি করতে।
তবে কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন, তিনি এ সম্পর্কে আর কিছু জানেন না।
দৌলতপুরের পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত ২
কুষ্টিয়া সংবাদদাতা জানান, কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের শেহালা মাঠে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে দুইজন নিহত হয়েছেন। সোমবার দিবাগত সাড়ে ৩টার দিকে উপজেলার বোয়ালিয়া ইউনিয়নের শেহালা মাঠে এ এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- দৌলতপুর উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের সীমান্ত সংলগ্ন মুন্সীগঞ্জ গ্রামের রেজাউল ইসলামের ছেলে মুকাদ্দেস আলী (৪২) ও প্রাগপুর বাজারের মৃত ইয়াকুব আলীর ফজলুর রহমান ওরফে টাইটেল (৪৮)।
এ ঘটনায় তিন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। ঘটনাস্থল থেকে অস্ত্র, গুলি ও বিপুল পরিমাণ মাদক উদ্ধার করা হয়েছে। নিহত দুইজনই মাদক ব্যবসায়ী বলে পুলিশ জানিয়েছে।
দৌলতপুর থানার ওসি (তদন্ত) আজগর আলী জানান, একদল মাদক ব্যবসায়ী দৌলতপুর উপজেলার বোয়ালিয়া ইউনিয়নের শেহালা মাঠে মাদক ক্রয়-বিক্রয় করছে- এমন গোপন সংবাদ পেয়ে দৌলতপুর থানা পুলিশের টহল দল রাত ৩টার দিকে ঘটনাস্থলে অভিযান চালায়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে মাদক ব্যবসায়ীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে। জবাবে পুলিশও পাল্টা গুলি চালালে দুইজন মাদক ব্যবসায়ী গুলিবিদ্ধ হয়। পরে তাদের উদ্ধার করে দৌলতপুর হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় পুলিশের এসআই ফিরোজ আলম, এসআই আব্দুর রাজ্জাক ও কনস্টেবল সজিত কুমার আহত হয়েছেন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি দেশীয় তৈরী বন্দুক, পাঁচ রাউন্ড গুলি, একটি পিস্তলের ম্যাগজিন ও ২৫০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করেছে।
নিহত মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসা ও ছিনতাইয়ের আটটি করে মামলা রয়েছে।
যশোরে নিহত ২
যশোর অফিস জানায়, যশোরে মাদক ব্যবসায়ীদের কথিত গোলাগুলিতে দু’জন নিহত হয়েছে বলে পুলিশ দাবি করেছে। মঙ্গলবার ভোররাতে যশোর শহরের চাঁচড়া রায়পাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত দুই মাদক ব্যবসায়ী হলেন, যশোর শহরের রায়পাড়া এলাকার মানিক ও মন্ডলগাতি এলাকার আসর আলী। পুলিশ নিহত দু’জনের লাশ উদ্ধার করে যশোর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেছে। একইসাথে ঘটনাস্থল থেকে অস্ত্র, গুলি ও ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে।
যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি কেএম আজমল হুদা জানান, মঙ্গলবার ভোররাতে যশোর শহরের চাঁচড়া রায়পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় এলাকায় দু’দল মাদক ব্যবসায়ীর মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় দু’জনকে উদ্ধার করে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে নিয়ে আসে। হাসপাতালে আনার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
ওসি আজমল হুদা আরও জানান, নিহত মানিক ও আসর আলী চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে।
পুলিশ নিহত দু’জনের লাশ উদ্ধারের পাশাপাশি ঘটনাস্থল থেকে ৬শ’ পিস ইয়াবা, দুটি পিস্তল, দুই রাউন্ড গুলি ও ৫টি গুলির খোসা উদ্ধার করেছে। নিহত দু’জনের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য যশোর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।