আসাদুল ইসলাম সবুজ, লালমনিরহাট ॥ দারিদ্রতা দমাতে পারেনি শাহ আলম মিয়াকে। এক বেলা খেয়ে না খেয়ে বৃদ্ধ বাবার সাথে ঠেলাগাড়ী চালিয়ে চলতি বছর চরকুলাঘাট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগে থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এলাকার সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। অদম্য মেধাবী শাহ আলম মিয়া লালমনিরহাট সদর উপজেলার কুলাঘাট ইউনিয়নের চরকুঘাট গ্রামের ঠেলাচালক সোনা মিয়ার পুত্র। সে ২০১২ সালে চরকুলাঘাট সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পিএসসি সমাপনী পরীক্ষায় ৩.৬৭ পেয়ে উর্ত্তীণ হয়েছেন।
তারা ২ভাই ও ৫বোনের মধ্যে সবার ছোট শাহ আলম মিয়া। বাবা কষ্ট করে সব বোনের বিয়ে দিয়েছেন। ভাইয়েরও বিয়ে হয়েছে। জমাজমি বলতে শুধু বাড়িভিটাই টুকু রয়েছে। তার বাবার আয় দিয়ে চলত সংসার।
কিন্তু গত ৪ মাস আগে শাহ আলম মিয়ার মা হাজেরা বেগম মারা গেছে। বাবা সোনা মিয়া মাঝে মধ্যে অসুস্থ্য হলে তার চিকিৎসা করার পয়সা থাকে না। সেই দিন চুলাও জ্বলে না, তখন বাধ্য হয়ে বই কলম খাতা ছেড়ে হাতে তুলে নিতে হয় ঠেলাগাড়ী হ্যান্ডেল। তবুও অন্যের দ্বারে দ্বারে সাহায্য-বা-ভিক্ষা করেনি। নিজের লেখাপড়া ও অসুস্থ্য বাবার চিকিৎসার খরচ বহন করার জন্য ঠেলাগাড়ী চালানোর কাজ করেন শাহ আলম মিয়া। শুধু তাই নয়, বৃদ্ধ বাবার সাথে ঠেলাগাড়ী চালাতে সহযোগীতা করেন। সেখান থেকে প্রতিদিন ২/৩শ টাকা রোজগার হতো। এতকিছুর পরেও থেমে থাকেনি তার লেখাপড়া। দিনের অধিকাংশ সময় কাজ করলেও রাত জেগে চলতো তার লেখাপড়া।
শাহ আলম মিয়া জানান, প্রাইভেট পড়ার মত টাকা ছিল না, ঠেলাগাড়ী চালিয়ে রোজগার করেন। বাবা আয়ের টাকায় সংসার চলতো, কিন্তু তিনি যেদিন অসুস্থ্য থাকেন, সেদিন না খেয়ে স্কুলে যেতে হতো। এ ভাবে কষ্ট করে এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগে থেকে এবার জিপিএ-৫ অর্জন করেন। অদম্য মেধাবী ভবিষ্যতে একজন উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হতে চান।
শাহ আলম মিয়ার বৃদ্ধ বাবা সোনা মিয়ার বলেন, ছেলে আমার লেখাপড়ায় খুবই ভাল। আমরা গরীব মানুষ আমাদের লেখাপড়া করানোর ক্ষমতা নেই। চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়ায় আমি খুবেই খুশি। সে লেখাপড়া করে অনেক বড় হতে চান। কিন্তু আমাদের সামর্থ নেই, তবু তার স্বপ্ন পুরনে আমি দিন-রাত পরিশ্রম করে তার লেখাপড়ার খরচ জোগারের চেষ্ঠা চালাবো। এতে সমাজের সহৃদয়বান ব্যাক্তি এগিয়ে আসার অনুরোধ জানান।
চরকুলাঘাট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র বর্তমান বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাষ্টার্সে অধ্যয়নরত আরিফুল ইসলাম বলেন, ছোট বেলা থেকে শাহ আলম খুব কষ্ট করে লেখাপড়া করেছে। একদিন কাজ না করলে ওইদিন না খেয়ে থাকতে হয়। তাই তার উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন পুরনে সমাজের বিত্তবানদের সহযোগীতা কামনার পাশাপাশি সমাজের কেউ এগিয়ে এলে তাহলেই হয়তো সে তার কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌছুতে পারবে।
চরকুলাঘাট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও কুলাঘাট ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ইদ্রিস আলী বলেন, শাহ আলম মিয়া একজন মেধাবী ছাত্র। তার পরিবার অত্যন্ত গরিব। আমার পক্ষ থেকে আমি যতটুকু পারি সহযোগীতা করবো। তারপরেও আমি তার সাফল্য কামনা করি। তার স্বপ্ন পুরনে সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহবান জানান।