খবর ৭১ঃরাজধানীতে দুর্ঘটনার ৭৪ ভাগ ঘটে সড়ক পারাপারে; আর যানজটে প্রতিদিন নষ্ট হয় ৫০ লাখ কর্মঘণ্টা। বছরে আর্থিক ক্ষতি হয় ৩৭ হাজার কোটি টাকা।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
শনিবার বুয়েটে অনুষ্ঠিত গোলটেবিল বৈঠকে এ প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন এআরআইয়ের পরিচালক অধ্যাপক ড. মোয়াজ্জেম হোসেন।
‘গণপরিবহন ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা এবং রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইশতেহারে যানজট নিরসনের পরিকল্পনা অন্তর্ভুক্তি ও বাস্তবায়নে অঙ্গীকার’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজক ছিল রোড সেফটি ফাউন্ডেশন ও এআরআই।
এতে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের সভাপতি এ আই মাহবুব উদ্দিন আহমেদ। রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি হিসেবে বক্তৃতা করেন কৃষক-শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি আবদুল কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, গণফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য সুব্রত চৌধুরী, জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য নাদের চৌধুরী ও বিকল্প ধারার সাংগঠনিক সম্পাদক ওমর ফারুক।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতারা গোলটেবিল আলোচনায় যোগ না দেওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন কাদের সিদ্দিকী। তিনি বলেন, বড় দুটি দল আসেনি। আজকে যারা বড় আছে, কালকে তারা নাও থাকতে পারে। তারা আসেনি বলে এমনটি ভাবার কারণ নেই, সড়কে মৃত্যু নিয়ে তারা ভাবছে না। দুই দল সড়কের নিরাপত্তার চেয়ে নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত বলেও মন্তব্য করেন কাদের সিদ্দিকী।
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, সড়কে এত মৃত্যুর মিছিল, কিন্তু সরকারদলীয় নেতারা হৃদয়হীন আচরণ করছেন। বাসের চাপায় মানুষ মারা যাচ্ছে, সরকারের নেতারা বলছেন, ‘আমরা কি বাস চালাই!’ সড়কে উন্নয়নের জোয়ার বয়ে যাচ্ছে বলে দাবি করছে সরকার। তাই সড়কে মৃত্যুর দায়ও সরকারকেই নিতে হবে।
গোলটেবিল আলোচনায় আরও অংশ নেন নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন, বিআরটিসির পরিচালক (প্রকৌশল) কর্নেল মাহবুবুর রহমান, রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের সহসভাপতি আবদুল হামিদ শরীফ প্রমুখ।
অপরিকল্পিত ফ্লাইওভার নির্মাণের সমালোচনা করে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, এতে যানজট দূর হয়নি বরং সড়ক সংকুচিত হয়েছে। ফুটপাত দলখমুক্ত করতে রাজনীতিবিদদের সদিচ্ছার অভাব রয়েছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরে অধ্যাপক মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ঢাকায় মোট দুর্ঘটনার ৭৪ শতাংশ ঘটে পথচারী পারাপারের সময়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকা শহরে প্রতিদিন গণপরিবহনগুলো ৩৬ লাখ ট্রিপ দেয়। এসব গণপরিবহনের ৩৫ শতাংশ যাত্রী যায় কর্মক্ষেত্রে। ঢাকার ৮০ শতাংশ গণপরিবহনই ইঞ্জিনচালিত। যানজটের কারণে ব্যস্ত সময়ে গণপরিবহনের গতিবেগ ঘণ্টায় পাঁচ কিলোমিটারে নেমে আসে, যা হাঁটাগতির চেয়েও কম।
ড. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, নগরের যানজট যদি ৬০ শতাংশ কমানো যায়, তাহলে ২২ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।