খবর ৭১;হে ইমানদারগণ, তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমনিভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর ফরজ করা হয়েছিল। যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পার। [সূরা বাকারা: ১৮৩]
প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ, সবল, জ্ঞানসম্পন্ন, মুসাফির নয়, রমজানের চাঁদ ওঠার ব্যাপারে অবগত হতে পারেন এমন সব নারী-পুরুষের জন্য রোজা ফরজ করা হয়েছে। কেবল উম্মতে মুহাম্মদির ওপর রোজা ফরজ এমনটি নয়, বরং এটি আগেকার সব উম্মতের ওপরও ফরজ ছিল। কোরআনুল কারিম বিষয়টি স্পষ্ট করে দিয়েছে। হাদিসে এর বিস্তারিত বিবরণ এসেছে।
হজরত মুসা (আ.) তুর পাহাড়ে অবস্থানকালে ৪০ দিন রোজা রেখেছিলেন। এ সুবাদে বনি ইসরাইলের ওপর চল্লিশ দিন রোজা ফরজ ছিল। হজরত ঈসা (আ.) ময়দানে অবস্থানকালে ৪০ দিন রোজা রেখেছিলেন। হজরত ইয়াহইয়া (আ.) রোজা রাখতেন। তার উম্মতও রোজা রাখতেন। যুগে যুগে যারাই আল্লাহর ওপর ইমান এনেছে, আল্লাহকে প্রভু হিসেবে মেনেছে, সবাই রোজা রাখত।
রোজার কী উদ্দেশ্য? অনাহারে থেকে, পিপাসিত থেকে, বৈধ যৌন চাহিদা মেটাতে নিষেধ করে মানুষকে কষ্ট দেয়া? অবশ্যই নয়। মানুষকে কষ্ট দেয়া, ক্ষতিগ্রস্ত করা বা বিপদে ফেলা আল্লাহর উদ্দেশ্য নয়। হতে পারে না। তিনি রহমান। তিনি দয়াময়। দয়াপরবশ। মানুষের কল্যাণের জন্যই রোজার বিধান রেখেছেন তিনি। মানুষের ভেতরকার লিপ্সা, অভদ্রতা, হিংস্রতা, নিয়ন্ত্রণহীনতা, অপরাধপ্রবণতা ও পশুত্বসুলভ আচরণ দূর করে, পরোপকার, মানবদরদি, গরিবদরদি ও মানবিক গুণ সৃষ্টি করা এবং নিয়ন্ত্রণ, আত্মসংযম ও আত্মশুদ্ধি অর্জন করাই আল্লাহর উদ্দেশ্য। সর্বোপরি মানুষের ভেতরে খোদাভীতি ও তাকওয়া অর্জনই জরুরি। কুপ্রবৃত্তি যেন মানুষের ওপর প্রাধান্য বিস্তার না করে, বরং মানুষই যেন কুপ্রবৃত্তির গলায় শেকল পরাতে পারে। রোজায় যেন মানুষ কুপ্রবৃত্তি দমন করতে সক্ষম হয়। এতে একজন মানুষ হবে আদর্শ মানুষ। মহৎ ও সৃষ্টির সেরা জীব।
রোজা সম্পর্কে হজরত সাহল ইবনে সাদ (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, জান্নাতের একটি দরজার নাম ‘রাইয়্যান’ অর্থাৎ পরিতৃপ্ত। কেয়ামতের দিন কেবল রোজাদাররাই সেই দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে। [দুনিয়াতে রোজা রেখে দিনে পানাহার না করে যে অতৃপ্ত ছিল, তার বদলা হিসেবে জান্নাতে গিয়ে তৃপ্ত হবে] তাদের সঙ্গে আর কেউ সে দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। সেখানে তাদের ডাকা হবে, ওইসব বান্দা কোথায়, যারা কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রোজা রেখেছ। তখন রোজাদাররা দৌড়ে প্রবেশ করবে। রোজাদারদের প্রবেশ শেষে ওই দরজা বন্ধ করে দেয়া হবে। [বুখারি, মুসলিম]
আফসোস, সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও আজকাল, রোজা ফরজ এমন নর-নারীর অনেকে রোজা রাখেন না। এমনকি কেউ কেউ তো প্রকাশ্যে, মানুষের সামনে ঔদ্ধত্য আচরণ করে। নির্লজ্জ আচরণ করে। আল্লাহর সঙ্গে নাফরমানি করে।
দেশে যেভাবে আল্লাহর আজাব আসছে, বজ্রপাতে মানুষের মৃত্যুর যে আজাব শুরু হয়েছে, ঘরে ঘরে কলহ বাড়ছে, মানুষ খুন হচ্ছে চারদিকে, সাংসারিক অশান্তি, এখনই সাবধান হওয়া দরকার। এই রমজান থেকেই আল্লাহর অনুগত হওয়া দরকার। ইবাদতে নিমগ্ন হওয়া দরকার। রমজানের অপার কল্যাণে নিজেকে সংশোধন করা দরকার। কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওই ব্যক্তিকে অভিশাপ দিয়ে বলেছেন, যে রমজান পেল, অথচ নিজের গুনাহ ক্ষমা করাতে পারল না, সে ধ্বংস হোক। নাউযুবিল্লাহ।
হে মাবুদ মালিক, রমজানের রহমতের দশকের আজ দ্বিতীয় দিন। আমরা বড় অসহায়। বড় দুর্বল। জানি না, তোমার কল্যাণ অর্জন করতে পারছি কিনা। রমজানের রহমত, বরকত ও মাগফিরাত লাভে ধন্য হতে পারছি কিনা। তুমি তো রহমান। দয়াময়। তোমার রহমতও অসীম, দয়াও অসীম। তোমার করুণার কোনো সীমা নেই। আমাদেরকে তোমার প্রিয় বান্দাদের সঙ্গে মিলিয়ে নাও। হে রহমানুল কারিম, অপরাধপ্রবণতা ছেড়ে তোমার ইবাদতে অভ্যস্ত হতে সাহায্য কর আমাদের। লেখক: প্রিন্সিপাল, মাদরাসাতুল বালাগ, ঢাকা
খবর ৭১/ইঃ