বাজারের পাস্তুরিত ৭৫ শতাংশ দুধ অনিরাপদ: আইসিডিডিআরবির গবেষণা

0
567

খবর ৭১:আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) বিজ্ঞানীরা বলছেন, বাজারে পাওয়া যায় এমন পাস্তুরিত দুধের ৭৫ শতাংশ অনিরাপদ। বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন কোম্পানির দুধের নমুনা পরীক্ষা করে তাতে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া পেয়েছেন। তাঁরা পরামর্শ দিয়েছেন, মানুষ যেন দুধ কেনার পর ফুটিয়ে পান করেন।

আইসিডিডিআরবির বিজ্ঞানীরা দেশের ৪৩৮টি কাঁচা দুধের নমুনা এবং বাণিজ্যিকভাবে প্রক্রিয়াজাত দুধের ৯৫টি নমুনা সংগ্রহ করে তা বিশ্লেষণ করেন। এই গবেষণা ফলাফল গত মাসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব ফুড মাইক্রোবায়োলজিতে ছাপা হয়েছে। শিশুদের পুষ্টির প্রাথমিক উৎস এই দুধ নিয়ে গবেষণা ফলাফলকে আইসিডিডিআরবি ‘অপ্রীতিকর’ বলে বর্ণনা করেছে।

এই গবেষণার প্রধান তত্ত্বাবধায়ক এবং আইসিডিডিআরবির ফুড মাইক্রোবায়োলজির প্রধান মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘দুধ প্রক্রিয়াজাতকরণের বিভিন্ন পর্যায়ে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি দেখে এটা স্পষ্ট বোঝা যায় যে দুধের মূল গুণ, অর্থাৎ এর পুষ্টিগত গুণাগুণ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত।’ তিনি আরও বলেন, খাওয়ার জন্য দুধকে নিরাপদ রাখতে উৎপাদনের স্থান থেকে ভোক্তা পর্যন্ত প্রতিটি পর্যায়ে পাস্তুরিত দুধকে নিরবচ্ছিন্নভাবে শীতল রাখার পদ্ধতি অনুসরণ করা জরুরি।

গবেষণায় জড়িত ছিলেন আটজন বিজ্ঞানী। তাঁরা বগুড়া, গাইবান্ধা, নীলফামারী, দিনাজপুর, জয়পুরহাট, রংপুর ও সিরাজগঞ্জ জেলার ১৮টি উপজেলা থেকে ৪৩৮টি নমুনা সংগ্রহ করেন। এর মধ্যে ৩৮৭টি নমুনা প্রাথমিক দুধ উৎপাদনকারী বা কৃষকের কাছ থেকে, ৩২টি নমুনা দুধ সংগ্রহের স্থান বা আড়ত থেকে, ১৫টি নমুনা দুধ শীতলীকরণ কারখানা এবং ৪টি নমুনা স্থানীয় রেস্তোরাঁ থেকে সংগ্রহ করেন। এ ছাড়া ঢাকা ও বগুড়া থেকে বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি হয়, এমন পাস্তুরিত প্যাকেটজাত দুধের ৯৫টি নমুনা সংগ্রহ করেন। যেসব প্রতিষ্ঠানের দুধ শীতলীকরণ কারখানা আছে (আগের নমুনা) এই প্যাকেটগুলো সেসব প্রতিষ্ঠানের। গবেষণায় কোনো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করা হয়নি। এ গবেষণায় আর্থিক সহায়তা করেছে আন্তর্জাতিক এনজিও কেয়ার।

গবেষকেরা দেখেছেন, খামার থেকে শুরু করে দোকানে বিক্রি হওয়া পর্যন্ত প্রতিটি পর্যায়ে দুধ ব্যাকটেরিয়া দ্বারা দূষিত হয়। এই দূষণের মাত্রা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের চেয়ে অনেক বেশি।

দুধে অণুজীবের উপস্থিতি বিশ্লেষণ করেছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁরা নমুনা দুধে কলিফর্ম, ফিক্যাল কলিফর্ম ও ই-কোলাই নামের ব্যাকটেরিয়া পেয়েছেন। সবচেয়ে বেশি ব্যাকটেরিয়া পাওয়া গেছে কৃষকের কাছ থেকে সংগ্রহ করা নমুনাগুলোতে। এর মধ্যে কিছু ব্যাকটেরিয়া ‘উষ্ণ রক্তের প্রাণীর’ মলে থাকে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, দুধ দোয়ানোর সময় এসব ব্যাকটেরিয়া দুধে মেশে। একইভাবে দুধের আড়তে এবং হিমাগারেও দুধে ব্যাকটেরিয়ার মেশে। পাঁচটি জেলার ১৫টি হিমাগার থেকে সংগৃহীত নমুনায় উচ্চসংখ্যক কলিফর্ম ও মলবাহিত কলিফর্ম পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, ব্যাকটেরিয়ার এ উপস্থিতি মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে যদি এই দুধ কাঁচা অর্থাৎ না ফুটিয়ে খাওয়া হয়। কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হলো, বাংলাদেশে কাঁচা দুধ খাওয়ার প্রবণতা রয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here