খবর ৭১: আওয়ামী লীগের দুঃশাসনে দেশের মানুষ অস্থির হয়ে গেছে দাবী করে সাবেক প্রেসিডেন্ট জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেন, মানুষ আওয়ামী লীগের দুঃশাসনে অস্থির হয়ে গেছে। মানুষের শ্বাস বন্ধ হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের জনপ্রিয়তা শুন্য। নির্বাচন সুষ্ঠু হলে তারা নির্বাচিত হতে পারবে না। নির্বাচনে যদি আওয়ামী লীগ হারে তাহলে তাদের কোন নেতার গায়ের চমড়া থাকবে না। তাই জাতীয় পার্টিকে অবহেলা করবে না। জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগে ক্ষমতায় যেতে সাহায্য করার জন্য নয়, নিজেরা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য শরীক থাকতে চায়।
রোববার দুপুরে রংপুর পাবলিক লাইব্রেরী মাঠে রংপুর জেলা জাতীয় পার্টির দ্বিবার্ষিক কাউন্সিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি সরকারের কড়া সমালোচনা করে বক্তব্য রাখেন।
সম্মেলন প্রস্তুত কমিটির আহবায়ক প্রেসিডিয়াম সদস্য ও স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গার সভাপতিত্বে এসময় বক্তব্য রাখেন কো- চেয়ারম্যান জিএম কাদের, মহাসচিব রুহুল আমীন হাওলাদার, প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ এমপি, রংপুর সিটি মেয়র ও কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা।
প্রেসিডিয়াম সদস্য মেজর (অব) খালেদ আক্তার, প্রাইম-সনিক গ্রুপের চেয়ারম্যান ডা. আক্কাস আলী সরকার, সালাহ উদ্দিন এমপি, শওকত আলী চৌধুরী এমপি, শাহানারা বেগম এমপি, কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান এসএম ফখর উজ-জামান জাহাঙ্গীর, মহানগর সেক্রেটারী এসএম ইয়াসির, পীরগঞ্জ উপজেলা সভাপতি নুরে আলম যাদু, বদরগঞ্জ উপজেলা সভাপতি আসাদুজ্জামান সাবলু চৌধুরী, গঙ্গাচড়া উপজেলা সভাপতি সামসুল আলম। কাউনিয়া উপজেলা সভাপতি শাহ মাহবুবুর রহমান, কাউনিয়া উপজেলা সেক্রেটারী মোশাররফ হোসেন প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ করেন সম্মেলন প্রস্তুত কমিটির যুগ্ম আহবায়ক হাজী আব্দুর রাজ্জাক। সম্মেলনে রংপুর জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি হিসেবে প্রেসিডিয়াম সদস্য মসিউর রহমান রাঙ্গা এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ভাইস চেয়ারম্যান এস.এম. ফখর-উজ-জামান জাহাঙ্গীরের নাম ঘোষনা করে তাদেরকে ৩ মাসের মধ্যে পুর্নাঙ্গ কমিটি করার নির্দেশ দেন এরশাদ।
সম্মেলন উপলক্ষ্যে অন্তত ৩০ হাজার নেতাকর্মীর শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে পাবলিক লাইব্রেরী মাঠ ও আশেপাশের রাস্তাঘাট। নেতাকর্মীরা সকাল থেকে গেঞ্জি, ক্যাপ, ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে কাউন্সিলস্থলে সমেবত হন।
প্রধানমন্ত্রীর কড়া সমালোচনা করে এরশাদ বলেন, একটা কথা আছে আল্লাহর হুকুম ছাড়া কিছুই নড়ে না। কিন্তু বাংলাদেশের অবস্থা এখন এমন, ‘হাসিনার কথা ছাড়া একটা গাছের পাতাও নড়ে না। কিছুই হয় না। প্রশাসন চলে না। এখন সর্বত্র শুধু দলীয়করন। ব্যাংক খালি। ব্যাংকে টাকা নাই। লুটপাট করা হয়েছে। পানামা পেপারে সব নেতার নাম আছে। দেশের টাকা পাচার করা হয়েছে। তাদের কোন বিচার নাই’।
বাংলাদেশের ইতিহাসে সব চেয়ে এই সরকারের আমলে বেশী নারী নির্যাতন হচ্ছে দাবী করে এরশাদ বলেন, দেশে এখন নারী নির্যাতন একটা খেলায় পরিনত হয়েছে। যেন দেশে মহিলা হয়ে জন্ম গ্রহন করাই অপরাধ। গত দুই মাসে ২৮৭ জন নারী ধর্ষিতা হয়েছে। শিশুরা ধর্ষিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমরা সবাই ধর্ষিত হচ্ছি। স্কুলে যাওয়ার পথে শিশু ও কিশোরীদের ধর্ষন করা হচ্ছে। বাধ্য হয়ে পিতামাতারা বাল্য বিয়ে দিচ্ছেন। যে সরকার মা-বোনদের ইজ্জত করতে পারে না। তাদের ক্ষমতায় থাকার কোন প্রয়োজন নেই। বাংলাদেশের ইতিহাসে এধরনের নারী নির্যাতন ও ধর্ষনের ঘটনা কখনও ঘটে নি।
এরশাদ বলেন, বিএনপি না আসলে আমরা ৩০০ আসনে নির্বাচন করবো। দেশের মানুষ দুই দলকে চায় না। জাতীয় পার্টি ছাড়া কিছুই হবে না।
এরশাদ বলেন, রংপুর জাতীয় পার্টির দুর্গ। সেখান থেকে কয়েকটা পাথর সরে গেছিল। আবার সে পাথর নিয়ে আসা হয়েছে। আমরা ছাড়া কেউ সরকার গঠন করতে পারবে না। ৯১ সালে আমাদের সহযোগিতা নিয়ে বিএনপি ৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করেছিল। কিন্তু তারা জাতীকে দুর্নীতি আর দুঃশাসন উপহার দিয়েছে। বৃহত্তর রংপুরের ২২ টি আসন আপনারা আমাকে উপহার দেন। আমরা ক্ষমতায় যাবো।
জাতীয় পার্টি জরুরী পাটি দাবি করে এরশাদ বলেন, জাতীয় পার্টি এখন বাংলাদেশের রাজনীতির জরুরী পার্টি। আমি যেখানে যাই, সেখানে মানুষের উত্তাল তরঙ্গ, উৎসাহ, উদ্দীপনা দেখি। মানুষ জাতীয় পার্টিকে আনতে প্রস্তুত। নির্বাচন সুষ্ঠু হলে আমরা জিতবো। আমাদের কেউ হারাতে পারবে না। ক্ষমতায় যাবো। মানুষ আর দুই দলকে দেখতে চায় না।
এরশাদ বলেন, আমার উপর অত্যাচার কেউ টিকতে পারে নি। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগকে আমরা ক্ষমতায় বসিয়েছিলাম। ৬ বছর জেলে ছিলাম। একলা ছিলাম। ১২ টি ঈদ করতে পারি নি। হাসপাতালে নেয়া হয় নি। আমি মারা যাবো বলা হয়েছিল। কিন্তু আমি মরি না। আমার এই বয়সে কেউ নেই। এটা আল্লাহর রহমত।
এবারের আমাদের নির্বাচনে থাকতে হবে। এবারের নির্বাচন আমাদের বাঁচা মরার লড়াই। ভুল করলে চলবে না। ক্ষমতায় যাবো। পারিবর্তন আসবে। ৬০ টাকার চাল খাওয়া লাগবে না।
এরশাদ বলেন, মেট্রো রেল, ফ্লাইওভার দিয়ে যানজন নিরসন হবে না। ঢাকা এখন বসবাসের উপযোগি নয়। দেশের ১৩৭ টি বিশ্ববিদ্যালয়। এরমধ্যে ১০০ টি বেসরকারী। সেখানে টাকা দিয়ে সনদ কেনা যায়। সেখান থেকে বিবিএ এমবিএ পাশ করে বেকার থাকছে তরুন রা। তাদের চাকরি নাই। তারা মাদক খায়। ইয়াবা খায়। আমাদের সময় ভালো শিক্ষা ছিল। চাকরি ছিল। কাজ ছিল। উন্নয়ন ছিল।
শ্রমিকদের প্রসঙ্গ এনে এরশাদ বলেন, দেশের এখন ৬ কোটি ৩০ লাখ শ্রমিক। তাদের শিক্ষা নেই। বিদেশে যারা শ্রমিক হিসেবে যায় তারা রাস্তায় ঝাড়ুদারের কাজ করে। লজ্জা লাগে আমাদের। প্রতিটি উপজেলায় একটি করে টেকনিক্যাল স্কুল করা দরকার। যাতে টেকনিক্যাল জ্ঞান নিয়ে শ্রমিকরা দেশের বাইরে যেতে পারে।
এরশাদ নিজের আমলে করা উন্নয়নের চিত্র তুলে দরে বলেন, আমি ৪৬০ টি উপজেলা করেছিলাম। উপজেলায় আদালত করেছিলাম। ডিভিশনে হাইকোর্ট করেছিলাম। সব খালেদা জিয়া বাতিল করেছেন। আমি ঋনের সহজ নীতি করেছিলাম।
১০ হাজার কিলোমিটার রাস্তা করেছিলাম। যমুনা সেতু করেছিলাম। ১ ফ্রেব্রুয়ারী ১৯৮৮ সালে ভিত্তি প্রস্তুর দিয়েছিলাম। বিশ্ব ব্যাংকে বলেছিলাম, টাকা দাও, ওরা বলেছিল তোমরা গরীব মানুষ টাকা শোধ করতে পারবে না। তার পর আমি সারসার্জ ধার্য করে টাকা সংগ্রহ করেছিলাম।
অথচ উদ্বোধনের সময় আমাকে দাওয়াত পর্যন্ত দেয়া হয় নি। এখন গ্রামেও গরুর গাড়ি নেই। গরুর গাড়ি যাদুঘরে। এখন চরের সবজি যমুনা সেতু হয়ে ঢাকা যায়। কৃষকরা দাম পায়।
এরশাদ বলেন, আমরা প্রাদেশিক ব্যবস্থার শাসন চাই। একজনের হাতের শাসন চাই না। সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। সিল মারার নির্বাচন চাই না। বেকারমুক্ত দেশ চাই।
এরশাদ বলেন, এবার আমাদের শ্লোগান- আমরা ভাংবো দুর্নীতির প্রাচীর। আমরা ভাঙ্গবো নিপীড়নের প্রাচীর। আমরা ভাঙবো দুখের প্রাচীর। আমরা ভাঙবো দু.শাসনের প্রাচীর। হাসিনার আমলে গ্যাস আসলো সিরাজগঞ্জ, খালেদা আনলো বগুড়ায়। আমরা গ্যাস পেলাম নো। আমরা মফিজ থাকলাম। আমারা ক্ষমতায় গিযে রংপুরে গ্যাস আনবো। কলকারখানা বানাবো।