খবর ৭১ঃ কোটা সংরক্ষণ নিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা সৃষ্টিতে ছাত্রলীগকে ব্যবহার করছে (এনগেজড) বাংলাদেশ সরকার। এমন তথ্য পেয়েছে এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন। বেশ কিছু শিক্ষার্থী এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশনকে বলেছেন, রোববার রাত থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক এলাকায় বিক্ষোভ প্রতিবাদে অংশগ্রহণকারীদের সনাক্ত করছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদেরকে আবাসিক ভবনে (ডরমেটরি) অবরুদ্ধ করে রেখেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। চলমান ছাত্র আন্দোলন নিয়ে এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেছে এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন। এতে বলা হচ্ছে, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আন্দোলনরতদের ওপর নির্যাতন করছে। ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়ার জন্য তাদেরকে শাস্তি দিচ্ছে। বেশ কিছু ছাত্র ও ছাত্রী তাদের হাতে আহত হয়েছেন। এসব ছাত্রছাত্রীর বিভিন্ন অংশ কেটে গেছে। তবে তাদেরকে কোনো চিকিৎসা নিতে দেয়া হচ্ছে না। ১০ই এপ্রিল পর্যন্ত প্রতিবাদকারীদের ওপর রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়েছে পুলিশ। এতে বেশ কিছু বিক্ষোভকারী আহত হয়েছেন। বিবৃতিতে বলা হয়, এটা বলা অপ্রয়োজনীয় যে, ঘটনার শিকার ব্যক্তিরা আরো পুলিশি হয়রানির মুখে রয়েছেন। ওই বিবৃতিতে আরো বলা হয়, সরকারি চাকরি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার শতকরা ৫৬ ভাগ আসন কোটা পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করেছে। এ নিয়ে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে যারা চাকরি প্রত্যাশী তারা এর প্রতিবাদ করছেন। কোটা পদ্ধতিতে দেখা যায়, একজন মুক্তিযোদ্ধার ছেলে বা তাদের ছেলেমেয়ের জন্য শতকরা ৩০ ভাগ আসন, জেলা পর্যায়ে শতকরা ১০ ভাগ, নারী কোটায় শতকরা ১০ ভাগ, জাতিগত সংখ্যালঘুরা শতকরা ৫ ভাগ ও শারীরিক বিকলাঙ্গদের জন্য শতকরা এক ভাগ আসন সংরক্ষিত রাখা হয়। কিন্তু এর মধ্য দিয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠানকে রাজনীতিকীকরণ করা হচ্ছে বলে সমালোচনা রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। কোটা সংরক্ষণের মাধ্যমে সরকার ক্ষমতার অপব্যবহার করছে বলেও অভিযোগ করছেন সমালোচকরা। এই কোটা পদ্ধতি সংরক্ষণ করা হয় জনগণের আবেগকে ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সম্মানকে ব্যবহার করে। মুক্তিযোদ্ধারা ১৯৭১ সালে নিজেদের জীবন বাজি রেখে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এ দেশ স্বাধীন করেছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিদ্যমান কোটা পদ্ধতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বিক্ষোভ শুরু করেন। ৮ই এপ্রিল রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তিপূর্ণ ক্যাম্পাসে তাদের বিক্ষোভ সমাবেশে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। ব্যবহার করা হয় কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট ও জলকামান। এ সময় তাদের সঙ্গে যোগ দেয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ছাত্র বিষয়ক সংগঠন ছাত্রলীগ। তারা বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা চালায়। রোববার দিনের শেষে ও সোমবারের প্রথম প্রহরে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ ও ছাত্রলীগের যৌথ দমনপীড়নমূলক অভিযানে ঢাকায় আহত হয়েছেন বহু ছাত্র ও ছাত্রী। তবে মাঠ পর্যায়ে যা পরিস্থিতি তাতে তাদের প্রকৃত সংখ্যা নির্ধারণ করে বলা সম্ভব নয়। খেয়ালখুশি মতো পুলিশ আটক করেছে শিক্ষার্থীদেরকে। ভবিষ্যতে আর কখনো এমন বিক্ষোভে অংশ নেবে না এমন শর্তে তাদের অনেককে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। ঢাকায় এই বিক্ষোভ শুরু হয় ৭ই এপ্রিল। এটা এমন এক সময়ে ঘটেছে যখন ২০১৬ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে বাংলাদেশে বেকারের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ৮০ হাজার। এ বছর ২০ শে মার্চ বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো প্রকাশিত তথ্যে এ কথা বলা হয়েছে। এই যখন অবস্থা তখন কোটা সংরক্ষণের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া শিক্ষার্থীরা দাবি তুলছেন কোটা পদ্ধতি শতকরা ১০ ভাগে কমিয়ে আনতে। এই আন্দোলন এখন অন্যান্য সরকারি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়েছে। এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন যখন এই বিবৃতি প্রকাশ করে। গত দু’দিনে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা একই দাবিতে মাঠে নেমেছেন। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কঠোর শক্তি প্রয়োগের অভিযোগ উঠেছে আইন প্রয়োগকারী এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে। এর প্রেক্ষিতে এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন বাংলাদেশ সরকারের প্রতি শিক্ষার্থীদের এই বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে দমনপীড়ন অবিলম্বে থামানোর আহ্বান জানিয়েছে। এতে প্রতিবাদী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা অবশ্যই বন্ধ করার আহ্বান জানানো হয়েছে। এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন বলেছে, সভা সমাবেশ করার স্বাধীন অধিকার অব্যাহতভাবে প্রত্যাখ্যান করতে পারে না বাংলাদেশ সরকার।
খবর ৭১/ইঃ