খবর ৭১: বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, বর্তমানে দুই সিটিতে লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড বলে কিছু নেই। আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা দুই সিটিতে সশস্ত্র মহড়া দিচ্ছে।
রোববার (৮ এপিল) সকাল ১১টায় নয়াপল্টনস্থ দলীয় কার্যালয়ের এক সংবাদ সম্মেলন এসব কথা বলেন তিনি।
রিজভী বলেন, গাজীপুর ও খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সেনা মোতায়েন হবে না, গত দুদিন ধরে ঘোষণা দিচ্ছে নির্বাচন কমিশনার। ইলেকট্রনিক ভোটের মেশিন ব্যবহারে জনগণের আগ্রহ না থাকলেও নির্বাচন কমিশন অনেক সেন্টারে ইভিএম ব্যবহারের ঘোষণা দিয়েছে। সুতরাং নির্বাচন কমিশন আদৌ দুই সিটির নির্বাচন সুষ্ঠু চায় কি না তা নিয়ে যথেস্ট সন্দেহ ঘনীভূত হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের অনেক উর্ধ্বতন কর্মকর্তার বক্তব্যে সরকারি ইচ্ছার প্রতিফলন দেখা যায়।
তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বর্তমানে সরকারের দলীয় বাহিনীর মতো কাজ করছে তাদের পক্ষে একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ভয়মুক্ত ভোটের পরিবেশ নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। ভোটাররাও তাদের ওপর আস্থাশীল হতে পারবেন না। বর্তমান বিরাজমান পরিস্থিতিতে নিরপেক্ষ, অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোট নিশ্চিত করতে হলে সেনা মোতায়েন অত্যাবশ্যক। আমি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের পক্ষ থেকে অবিলম্বে সিটি কর্পোরেশন এলাকায় লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা, ইভিএম বাতিল, সেনাবাহিনী মোতায়েন করা এবং বিএনপি নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার বন্ধ করে নির্বাচনী পরিবেশ তৈরির জোর দাবি জানাচ্ছি।
নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি না করে, সরকারি ফর্মূলায় নির্বাচন করতেই ইসি আগাম মন্তব্য দিলেন কি না সে প্রশ্নটি এখন ক্রমাগত সম্প্রাসারিত হচ্ছে।
বিএনপির এ নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ ও সন্ত্রাসীদের হাতে বৈধ-অবৈধ অস্ত্রের ছড়াছড়ি। বৈধ অস্ত্র জমা ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। দুই সিটিতে সরকার দলীয় নেতা-কর্মীরা মিছিল করছে, মিটিং করছে, সমাবেশ করছে বীরদর্পে। অন্যদিকে বিএনপি নেতা-কর্মীদের সভা-সমাবেশ দূরের কথা বাড়িতে ঘুমাতে পর্যন্ত পারছে না। বিএনপি নেতা-কর্মীদের জীবন কাটছে হয় জেলখানায় না হয় আদালতের বারান্দায়। পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে মিথ্যা মামলা মাথায় নিয়ে দিনের পর দিন পুলিশের দৃষ্টি এড়িয়ে ক্ষুধায় তৃষ্ণায় পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থী হতে ইচ্ছুক নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে কমপক্ষে ৩০ এর উর্ধ্বে শতাধিক রাজনৈতিক মামলা। সারাক্ষণ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের তাড়া করছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার গতকাল বলেছেন সব দল না এলে নির্বাচন ভাল হয় না। তাহলে সিইসির প্রধান দায়িত্ব যে কোন নির্বাচনে সব দলকে নির্বাচনে নিয়ে আসার জন্য সুষ্ঠু নির্বাচনি পরিবেশ সৃষ্টি করা। এটা তারই প্রধান দায়িত্ব, এ ক্ষেত্রে যদি সরকার বাধা হয়ে দাঁড়ায় তাহলে সংবিধানের অর্পিত ক্ষমতায় তিনি সকল বাধাকে অতিক্রম করে সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারেন। সেক্ষেত্রে সরকার যদি সিইসির প্রতি সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার মতো আচরণ করতে চায় তাহলে তিনি নিজ নীতিতে অটল থেকে শুধু বাংলাদেশ নয় সারা বিশ্বে সাহসি দৃষ্টান্ত স্থাপন করবেন। প্রয়োজনে সরকারের অন্যায়ের চাপের প্রতিবাদে পদত্যাগ করবেন তাতে দেশের জনগণ এবং আর্ন্তজাতিক সম্প্রাদায় আপনার পাশে এসে দাঁড়াবে।
রিজভী বলেন,প্রায় দু মাস ধরে কারারুদ্ধ জনতার ভালবাসায় সিক্ত বিএনপি চেয়ারপারসন সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে প্রকৃত পরীক্ষা-নিরীক্ষা দ্বারা চিকিৎসা না দিয়ে গতকাল সম্পূর্ণ প্রহসন করতে পিজি হাসপাতালে আনা হয়েছিল। তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকরাও সুযোগ পাননি তাকে চিকিৎসা দেওয়ার। পুলিশী হিংসাত্মক আচরণ ও নির্বিচারে গ্রেফতারের আতঙ্কজনক পরিবেশেও আপোষহীন নেত্রী কেমন আছেন সেটুকু দেখার জন্য উদগ্রীব ছিল দেশের আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা। অসুস্থতা সত্ত্বেও গণমাধ্যমের কল্যাণে জাতি দেখল দৃঢ়তর এক উন্নত মম শির। মুহুর্তে তার অন্তবার্তা পৌঁছে গেছে কোটি কোটি জনগণের হৃদয়ে- আপনারা প্রস্তত হোন গণতন্ত্র পূনরুদ্ধারের তীব্র আন্দোলনে। দুর্নীতিপরায়ণ কলুষ থেকে মুক্ত করুন দেশমাতৃকাকে। হিংসার কারণে কারাদন্ড দিয়ে শাসকগোষ্ঠী ভেবেছিল আমি অসহ্য় যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে টলে পড়বো বা রোগে শোকে কাতর হয়ে যাবো। কিন্ত সরকারের সে আশা কখনই সফল হবে না। বন্ধুরা, পিজি হাসপাতালে গাড়ি থেকে নামার পর জনতা দেখল সাহসী দৃঢ়চেতা আর আস্থায় অবিচল দেশনেত্রীকে। মানুষ উপলব্ধি করলো গণতন্ত্র পূনরুদ্ধারের সংগ্রামে আপোষহীন নেত্রীর অকুতভয় দুর্জয় সাহস। কারাগারের উদ্দেশ্যে গাড়িতে তোলার সময় কেবিন ব্লকের বারান্দাগুলোতে রোগী, নার্স ও চিকিৎসকসহ উৎসুক হাজারো জনতা গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সংগ্রামী এই নেত্রীকে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান। কারাগারের স্যাঁতস্যাঁতে অন্ধকার প্রকোষ্ঠে নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার পরও এতটুকু দমে যাননি বেগম খালেদা জিয়া। গতকালের হাসোজ্জ্যল অভিব্যক্তির সে বার্তাই জানান দিল।