খবর ৭১:আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি এখন আত্মস্বীকৃত দণ্ডিত দল, আত্মস্বীকৃত উন্মাদের দল। কেউ দুর্নীতিবাজ হতে চাইলে বিএনপিতে যোগ দিন। দেওলিয়া হতে চাইলে বিএনপিতে যোগ দিন।
বৃহস্পতিবার বিকালে নরসিংদীর মোসলেহ উদ্দিন ভূঞা স্টেডিয়ামে এক জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সফর উপলক্ষে জেলা আওয়ামী লীগ এই জনসভার আয়োজন করে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় আসার মানেই হচ্ছে আবারও দেশ দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ান হবে। আজ তারা আন্দোলন করে দুর্নীতির দণ্ড পাওয়া নেত্রীর জন্য। আজকে দুর্নীতির পথে তারা আন্দোলন করছে। এই দল ক্ষমতায় গেলে দুর্নীতি করবে।
তিনি বলেন, তারা গঠনতন্ত্র থেকে ৭ ধারা বাদ দিয়েছে। এই ৭ ধারা ছিল কোনো দণ্ডিত ও দুর্নীতিবাজ ব্যক্তি বিএনপির নেতা হতে পারবেন না। কিন্তু তারা হঠাৎ খালেদা জিয়ার মামলার রায় হওয়ার ১০ দিন আগে ৭ ধারা গঠনতন্ত্র থেকে তুলে দিয়েছে। বিএনপি এখন আত্মস্বীকৃত দুর্নীতির দল।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপিকে নিয়ে বিচলিত হওয়ার কারণ নেই। খালেদা জিয়া জেলে গেল। বিএনপি ভাবল এবার আন্দোলন হবে, মরা গাঙ্গে জোয়ার আসবে। ৯ বছর ধরে আন্দোলনের ডাক শুনছি। এই মাস না ওই মাস, এই বছর না ওই বছর, দেখতে দেখতে ৯ বছর, আন্দোলন হবে কোন বছর। মরা গাঙ্গে জোয়ার আর আসে না।
সেতুমন্ত্রী বলেন, এই নির্বাচনে আমাদের জিততে হবে। আমাদের বিকল্প হচ্ছে বিএনপির নেতৃত্বে সাম্প্রদায়িক জঙ্গিবাদী শক্তি। এই শক্তি যদি বিজয়ী হয় দেশ আবার অন্ধকারে যাবে। দেশ আবার সেই ভয়াবহ অমানিষার অন্ধকারে ডুবে যাবে। আবারও পেট্রলবোমা, আগুন দিয়ে মানুষ হত্যা, সেই বিভীষিকাময় দিন ফিরে আসবে। আমরা কেউ সেই বিভীষিকায় ফিরে যেতে চাই না।
তিনি বলেন, বাংলাদেশকে বাঁচাতে হলে আওয়ামী লীগকে বাঁচাতে হবে। মুক্তিযুদ্ধকে বাঁচাতে হলে আওয়ামী লীগকে বাঁচাতে হবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার আদর্শকে বাঁচাতে হলে, আওয়ামী লীগকে বাঁচাতে হবে। আর আওয়ামী লীগের ত্যাগী অগণিত কর্মী বাহিনীই আওয়ামী লীগের প্রাণ। এই কর্মীরাই রক্ত ও জীবন দিয়ে আজকে বিশাল রূপ দিয়েছে। এরাই বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে লড়েছে, শেখ হাসিনার সঙ্গে লড়ছেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, দুঃসময়ে দুর্যোগে অন্ধকারে কর্মীরা আওয়ামী লীগকে ছাড়ে নাই। যে কারণে ওয়ান ইলেভেনের অন্ধকার ভেদ করে কারাগারের অন্ধকারের কুঠরি থেকে মুক্তি পেয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। তাই দুঃসময়ে নেতাকর্মীদের দূরে ঠেলে দেবেন না।
তিনি বলেন, ক্ষমতার সঙ্গে মৌসুমি পাখিরা ভিড় করে। দল ক্ষমতায় এলে মৌসুমি পাখিরা দলে দলে ঝাঁকে ঝাঁকে ভিড় করে। মনে রাখবেন ক্ষমতা যখন থাকবে না এই শীতের মৌসুমি পাখিরা উড়ে চলে যাবে। তখন আর দুঃসময়ে তাদের খুঁজে পাওয়া যাবে না। দুঃসময়ের নেতাকর্মীরা আপনাদের সবচেয়ে আপনজন। এদের দূরে ঠেলে দিলে আওয়ামী লীগ দুর্বল হয়ে যাবে। কারণ ত্যাগী কর্মীরাই আওয়ামী লীগের আসল শক্তি, প্রাণশক্তি।
নেতাকর্মীদের হুশিয়ারি উচ্চারণ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, কোনো দাগি সন্ত্রাসী আওয়ামী লীগের সদস্য হতে পারবে না। কোনো চিহ্নিত চাঁদাবাজ আওয়ামী লীগের সদস্য হতে পারবে না। সাম্প্রদায়িক অপশক্তি কোনো লোক আওয়ামী লীগের সদস্য হতে পারবে না। যারা বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের নাম ব্যবহার করে সাধারণ ও নিরীহ মানুষের জমি দখল করবে তারা আওয়ামী লীগের সদস্য হতে পারবে না।
তিনি বলেন, পৃথিবীর সবচেয়ে গরীব দেশের এক দেশ ছিল বাংলাদেশ। গলিত লাশের দেশ, ভিক্ষুকের দেশ, দুর্ভিক্ষের দেশ, খরার দেশ, বন্যার দেশ। আজ বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ সারা বিশ্বের বিস্ময়। বাংলাদেশ আজ আর গরিবের দেশ নয়, ভিক্ষুকের দেশ নয়, বাংলাদেশ আজ বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশ। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের মহাসড়ক ধরে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী নেই। জনমতের ভিত্তিতে আমাদের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছয় মাস পরপর মাঠ জরিপ করছেন। এই জরিপে জনমতে যিনি এগিয়ে থাকবেন, তিনিই হবেন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম হিরুর (বীরপ্রতীক) সভাপতিত্বে জনসভায় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মোজাফফর হোসেন পল্টু, মুকুল বোস, শ্রমবিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও নরসিংদী-০৪ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, আখতারুজ্জামান, অ্যাডভোকেট এবিএম রিয়াজুল কবির কাওছার, সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ও যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মতিন ভূঞা, নরসিংদী-৩ আসনের সংসদ সদস্য সিরাজুল ইসলাম মোল্লা, পলাশ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা. আনোয়ারুল আশরাফ খান দিলীপ, নরসিংদী পৌরসভার মেয়র কামরুজ্জামান কামরুল, মাধবদী পৌরসভার মেয়র মোশাররফ হোসেন প্রধান মানিক, ঘোড়াশাল পৌরসভার মেয়র শরিফুল হক, শিবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সামসুল আলম ভূঞা রাখিল, মনোহরদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট ফজলুল হক, সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াশীষ রায় ও মনোহরদী পৌরসভার মেয়র আমিনুর রশিদ সুজন প্রমুখ বক্তব্য দেন।
খবর ৭১/ ই: