দেশি পেঁয়াজের দাম বাড়ল কেজিতে ৫ টাকা

0
358

খবর ৭১:সিন্ডিকেটের কারসাজি থামছে না। সরবরাহ প্রচুর থাকলেও মোকামে ঘাটতি কথা বলে এই চক্র দেশি পেঁয়াজ পাইকারি ও খুচরা বাজারে কেজিতে ৫ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছে। তাই মৌসুমেও ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আসছে না পেঁয়াজের দাম। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, কয়েকদিন পর পর পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পাওয়া অযৌক্তিক। একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীরা নানা অজুহাতে পেঁয়াজের দাম বাড়াচ্ছে।

জানতে চাইলে কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান  বলেন, ‘কয়েকদিন পর পর পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পাওয়া অযৌক্তিক। গত বছর ব্যবসায়ীদের অজুহাত ছিল বাজারে দেশি পেঁয়াজের সংকট। তারা আমদানি করা পেঁয়াজ অতিরিক্ত দামে বিক্রি করে অতি মুনাফা করে নেয়। এখন দেখা যাচ্ছে নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসার পরও দাম তেমন কমছে না। এর মধ্যে আবার দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৫ টাকা বাড়ানো হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘পেঁয়াজের দাম কমাতে উৎপাদন ও সংরক্ষণে দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা দরকার। এজন্য কৃষককে প্রযুক্তিগত সুবিধা ও স্বল্প মূল্যে ঋণ সহায়তা দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া কৃষকদের উন্নতমানের বীজ ও সার সরবরাহ করা গেলে পেঁয়াজে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করা যাবে। এতে বাজারে পেঁয়াজের দাম স্থিতিশীল হবে।’

বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওরান বাজার, হাতিরপুল বাজার, শান্তিনগর কাঁচাবাজার ও মালিবাগ বাজার ঘুরে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতি কেজি আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা, যা গত সপ্তাহে একই দাম ছিল। অন্যদিকে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ৫০ টাকা ছিল। এদিকে সরকারি সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবেও পেঁয়াজের বাজার এখনও চড়া। সেখানে গত বছর একই সময় দেশি পেঁয়াজের দাম ছিল ২২ থেকে ২৮ টাকা। আর বৃহস্পতিবার এই পেঁয়াজের মূল্য দেখা গেছে ৪০ থেকে ৫৫ টাকা। সেক্ষেত্রে বছর ব্যবধানে দাম ৯০ শতাংশ বেশি। আর আমদানি করা পেঁয়াজের দাম গত বছর এই সময়ে ছিল ২০ থেকে ২৪ টাকা। বৃহস্পতিবার বাজারমূল্য দেয়া আছে ৪৫ থেকে ৫৫ টাকা। সেক্ষেত্রেও দেখা গেছে বছরের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ১২৭ শতাংশ।

কারওয়ান বাজারের খুচরা পেঁয়াজ বিক্রেতা মো. সোনাই আলী  বলেন, ‘এখন দেশে পেঁয়াজের ভরা মৌসুম। দাম কিছুটা কমেছে। তবে যে অনুপাতে দাম কমার কথা ছিল সে রকম কমেনি। এর মধ্যে আবার পাইকারি ব্যবসায়ীরা দেশি পেঁয়াজের ঘাটতির কথা বলে ৫ টাকা বাড়িয়েছে। তাই বেশি দামে কিনে আমাদের মতো খুচরা বিক্রেতাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। তাই দাম বাড়ার পেছনে খুচরা বিক্রেতাদের কোনো হাত নেই।’

তিনি বলেন, ‘পাইকারি বিক্রেতারা দাম বাড়ালে আমাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হয়। তবে মনে হচ্ছে কিছুদিনের মধ্যে পেঁয়াজের দাম পুরোপুরি সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে চলে আসবে।’

হাতিরপুল কাঁচাবাজারের খুচরা বিক্রেতা আমানউল্লাহ বলেন, ‘পাইকারি ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়েছে বলেই আমরা দাম বাড়িয়েছি। ৪২ টাকায় বিক্রি হওয়া দেশি পেঁয়াজ ৪৬ থেকে ৪৮ টাকায় কিনতে হচ্ছে।’

একই বাজারে পেঁয়াজ কিনতে আসা রোকনুজ্জামান বলেন, ‘পেঁয়াজের দামের কথা আর কী বলব। গত বছর থেকেই এ পণ্যটি কিনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এখন পেঁয়াজের মৌসুম। ভেবেছিলাম নতুন বছরে দাম ক্রয়ক্ষমতায় আসবে। কিন্তু আসেনি। জানি না কবে নাগাদ কম দামে পেঁয়াজ কিনতে পারব।’

এদিকে পুরান ঢাকার শ্যামবাজার ও কারওয়ান বাজারের পাইকারি পেঁয়াজের আড়ত ঘুরে ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাইকারি দরে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম না বাড়লেও দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। সেক্ষেত্রে দেশি পেঁয়াজ প্রতি পাল্লা (৫ কেজি) বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকা, যা কেজিতে দাম হয় ৪৮ টাকা। এই পেঁয়াজ গত সপ্তাহে ৪২ থেকে ৪৩ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আড়তে ভারতীয় পেঁয়াজের দাম আগের দামেই প্রতি পাল্লা (৫ কেজি) বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকা, যা কেজিতে দাম পড়ে ৪৪ টাকা। কারওরান বাজারের পাইকারি পেঁয়াজ বিক্রেতা আবদুল মালিক বলেন, ‘গত সপ্তাহ থেকে দেশি ও আমদানি করা পেঁয়াজের দাম কমতির দিকে। তবে মোকামে দেশি পেঁয়াজের ঘাটতি দেখা দেয়ায় পাইকারিতে কিছুটা দাম বেড়েছে। কিন্তু আমদানি করা পেঁয়াজের সরবরাহ ঠিক থাকায় গত সপ্তাহে যে দামে বিক্রি হচ্ছিল সেই একই দামে বিক্রি হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘আশা করা যাচ্ছে দুই-একদিনের মধ্যে বাজারে দেশি পেঁয়াজ আসতে শুরু করবে। তখন দামবে।

খবর ৭১/ ই:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here