খবর৭১: ডিজিটাল বাংলাদেশ মানে শুধু ডিজিটাল সেবা দেওয়া নয়, বরং দেশের ১৬ কোটি মানুষ প্রতিনিয়ত ডিজিটালি যেসব তথ্য সংরক্ষণ করছেন সেগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। আগামী দিনে জাতীয় স্বার্থে তথ্য সুরক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন সেবা প্রদানের নামে অনেক প্রতিষ্ঠান প্রযুক্তি ব্যবহারকারীর তথ্য হাতিয়ে নিচ্ছে, যা দেশের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। তথ্য সুরক্ষা আইন হলে তারা বিতাড়িত হবে। তাই দ্রুত আইন প্রণয়নের উদ্যোগের আহ্বান জানিয়েছেন তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা।
আন্তর্জাতিক তথ্য সুরক্ষা দিবস উপলক্ষে রবিবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আলোচনা সভায় তারা এসব কথা বলেন। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশন আয়োজিত ‘প্রাইভেসি টক’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের আহ্বায়ক কাজী মুস্তাফিজ। সঞ্চালনা করেন সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ হাসান।
আলোচনায় অংশ নেন সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের কন্ট্রোলার অব সার্টিফাইং অথরিটিজের (সিসিএ) নিয়ন্ত্রক (যুগ্ম-সচিব) আবুল মানসুর মোহাম্মদ সারফ উদ্দিন, সংগঠনের উপদেষ্টা প্রযুক্তিবিদ একেএম নজরুল হায়দার, যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড ইউনিভার্সিটির সাইবার নিরাপত্তা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. এম পান্না ও যুক্তরাষ্ট্রের ইউনাইটেড স্টেটস অব ডিজিটাল সার্ভিসেসের (ইউএসডিএস) কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স ডিরেক্টর শেখ গালিব রহমান প্রমুখ।
আলোচনায় আবুল মানসুর মোহাম্মদ সারফ উদ্দিন বলেন, বর্তমানে সরকার ১২৫ ধরনের ডিজিটাল সেবা দিচ্ছে। দেশে ৯ কোটি ইন্টারনেট সংযোগ রয়েছে। কোমলমতি মেয়েরা অল্পতেই সাইবার অপরাধের শিকার হচ্ছে। প্রত্যেক ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর জন্য তথ্য সুরক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ডিজিটাল বাংলাদেশের অংশ হিসেবে সরকার ডিজিটাল ব্যবস্থাপনায় কাজ করছে। সচেতনতা কর্মসূচিও হচ্ছে, এগুলো আরো বাড়ানো হবে।
প্রযুক্তিবিদ একেএম নজরুল হায়দার বলেন, মোবাইল ফোনে অ্যাপস ব্যবহার করার সময় ৯৯ শতাংশ ব্যবহারকারী সব তথ্যে প্রবেশাধিকারের অনুমোদন দিয়ে দেন। আপনার এসব তথ্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো চড়া দামে বিক্রি করছে। এ বিষয়ে সবার সতর্ক হওয়া উচিত।
তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ মানে শুধু ডিজিটাল সেবা দেওয়া নয়, বরং দেশের ১৬ কোটি মানুষ প্রতিনিয়ত ডিজিটালি যেসব তথ্য সংরক্ষণ করছেন সেগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। আগামী দিনে জাতীয় স্বার্থে তথ্য সুরক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন সেবা প্রদানের নামে অনেক প্রতিষ্ঠান প্রযুক্তি ব্যবহারকারীর তথ্য হাতিয়ে নিচ্ছে, যা দেশের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। তথ্য সুরক্ষা আইন হলে তারা বিতাড়িত হবে।
ড. এম পান্না বলেন, পৃথিবীতে কিছু মানুষ আছে। দেখা যায় তারা ময়লার স্তুপ থেকে ময়লা কুড়িয়ে নিয়ে যায়। কিন্তু ময়লা নিয়ে তারা কী করবে? আসলে তারা হ্যাকার গোষ্ঠী। সেখান থেকে বিভিন্ন কাগজে মানুষের বিভিন্ন ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করা হয়। সেসব তথ্য পরে অবৈধভাবে কাজে লাগায়। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য ব্যবহার করে আরেকজন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলল এবং ওই নামে টাকাও ঋণ করল। পরে সেটি আপনার ঘাড়ে এসে চাপবে। যেসব তথ্য পেলে আপনাকে চেনা যায়, সেগুলো ভালোভাবে সুরক্ষিত করতে হবে। এজন্য দ্রুত আইন প্রণয়ন জরুরি।
শেখ গালিব রহমান বলেন, ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের জন্য সচেতনতামূলক কর্মশালা, সভা-সেমিনার ইত্যাদি বেশি বেশি আয়োজন করা দরকার। বন্ধু-পরিবার সবাইকে সচেতন করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের জন্য উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। বিদেশে যেসব উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে সেগুলো চর্চা করতে হবে।
সভায় মূল প্রবন্ধে কাজী মুস্তাফিজ বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানের ৪৩ (খ) নম্বর অনুচ্ছেদে প্রাইভেসি রাইটস বা ব্যক্তির তথ্য সুরক্ষা ও গোপনীয়তা মৌলিক মানবাধিকার হিসেবে স্বীকৃত। একইসঙ্গে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৬৩ ধারায় অনুমতি ছাড়া কারো ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশকে অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ঘোষণা (অনুচ্ছেদ ১২) নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার বিষয়ে আন্তর্জাতিক সনদ (অনুচ্ছেদ ১৭), জাতিসংঘের কনভেনশন অন মাইগ্রেন্ট ওয়ার্কার্স (অনুচ্ছেদ ১৪) এবং শিশু অধিকার সনদ (অনুচ্ছেদ ১৬)-এ প্রাইভেসিকে অধিকার হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। অথচ বাংলাদেশের কোনো আইনে নাগরিকের তথ্য সুরক্ষার বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো দিকনির্দেশনাই নেই। এখন সময় এসেছে তথ্য সুরক্ষা আইন প্রণয়নের।
খবর৭১/এস: