চৌগাছার আক্তার হোসেন ঘরের ছাদে কোয়েল পাখির খামার করে লাভবান

0
2009

মুকুরুল ইসলাম মিন্টু চৌগাছা (যশোর) : যশোরের চৌগাছায় নিজ বাড়ির ছাদে কোয়েল পাখি পালন করে বেশ স্বাবলম্বি হয়েছেন এক ব্যক্তি। মাত্র ৫০ টি কোয়েল পাখি নিয়ে তার কার্যক্রম শুরু হলেও বর্তমানে ওই ফার্মে কোয়েল পাখি সংখ্যা বেড়ে দাড়িয়েছে সাড়ে ৬শ’র মত। পাখি পালনের সাথে সাথে তিনি বিদেশী বিভিন্ন জাতের মুরগীও পালন করছেন। মাত্র এক বছরে সব খরচ খরচা বাদ দিয়ে তিনি প্রায় ২৫ হাজার টাকা লাভ করেছেন। সমাজের বেকার শিক্ষত যুবকদের নিকট পাখি পালনকারী আক্তার হোসেন একটি দৃষ্টান্ত বলে মনে করছেন অনেকে।
যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার মোরাগাছা গ্রামের মৃত আমির আলীর ছেলে আক্তার হোসেন বাবু (৪০)। প্রায় ১০ বছর আগে তিনি চৌগাছা পৌর এলাকার হুদাপাড়ার মতিয়ার রহমানের মেয়ের সাথে বিবাহ বন্ধনে অবদ্ধ হন। সংসার জীবনে তিনি এক কন্যা সন্তানের জনক। আয়শা আক্তার মিমমা (১৩) স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেনীর ছাত্রী। মুলত বিয়ের পর পরই তিনি নিজ পিতৃলয় ঝিকরগাছা ছেড়ে চলে আসেন শ্বশুরালয় চৌগাছার হুদাপাড়ায়। সেখানে জমি কেনার পর নির্মান করে একটি এক তালা বসত বাড়ি। শ্বশুর বাড়িতে আসার পর তিনি এক প্রকার বেকার অবস্থায় জীবন যাপন শুরু করে। হঠাৎ করেই তিনি একদিন মনস্থির করেন বাড়ির ছাদে পাখি পালন করা যেতে পারে। যে ইচ্ছা সেই কাজ, আর কাল বিলম্ব না করে ২০১৬ সালের শেষের দিকে তিনি ছাদে পাখি পালনের জায়গা তৈরী করে মাত্র ৫০টি কোয়েল পাখি নিয়ে পালন করতে শুরু করেন। অল্প দিনেই সেই ৫০টি পাখি থেকে তিনি রোজগারের পথ পেয়ে যান। এরপর সংখ্যা বাড়াতে থাকেন বর্তমানে তার ওই ফার্মে সাড়ে ৬শ টি কোয়েল পাখি আছে। প্রতিদিন এই ফার্ম থেকে তিনি ৩শ থেকে সাড়ে ৩শ’র মত ডিম পান। যা বাজারে বিক্রি করে খরচ বাদ দিয়ে তার প্রতি দিন রোজগার হচ্ছে ২শ থেকে আড়াইশ টাকা। কোয়েল পাখির পাশাপাশি ফার্ম মালিক আক্তার হোসেন বাবু ছাদের বাকি জায়গাতে আরও সেট নির্মান করেছেন। সেই সব সেটে পালন করা হচ্ছে সোনালী, পাকিস্থানীসহ নানা জাতের মুরগী। দিনের বেশির ভাগ সময় তিনি এই ছাদে তার পালন করা পাখি ও মুরগীর পিছনে সময় দেন। গতকাল সরেজমিন গেলে দেখা মেলে এক সময়ের বেকার মানুষ পশু পাখি পাগল বলে পরিচিত আক্তার হোসেন বাবুর সাথে। এ সময় তিনি ফার্ম পরিচর্জায় বেশ ব্যস্ত সময় পার করছিলেন। কাজের ফাকে তিনি জানান, এসএসসি পাশ করার পর আর পড়ালেখায় সামনের দিকে আর যেতে পারেনি। সংসার জীবনে এসে বেশ কিছু দিন বেকার জীবনে হতাশার মধ্যে পার করেছি। এরপর নিজের ভাবনায় বাড়ির ছাদে পাখি পালনের সিদ্ধান্ত নিই। এর জন্য তিনি কোন প্রশিক্ষন বা কারো কাছে কোন পরামর্শ গ্রহন করেনি। মাত্র ২৫ হাজার টাকা ব্যয়ে তিনি এই ব্যবসা শুরু করেন। বর্তমানে তার মুল পুঁজি ব্যয়ের অনেক গুন ছাড়িয়ে গেছে। মাত্র ১ বছরে তিনি শুধু কোয়েল পাখির ডিম বিক্রি করে প্রায় ২৫ হাজার টাকা রোজগার করেছেন। পাখি পালনের পাশাপাশি তিনি একই ছাদে পালন করছেন পাকিস্থানি ও সোনালী জাতের মুরগী। প্রতিটি মুরগীর বয়স মাত্র দেড় মাস। দুই থেকে আড়াই মাস বয়স হলে এ সব মুরগী ৭শ থেকে ৮শ গ্রাম করে ওজন হবে। তখন তিনি সমুদয় মুরগী বাজারে বিক্রি করবেন। তিনি আশা করছেন মুরগী পালনেও বেশ সাফল্য পাবেন। ছাদে জায়গা সংকলনের কারনে ইতোমধ্যে সে বাড়ির পাশে খালি জায়গাতে সেট তৈরীর কাজে হাত দিয়েছেন। এক মাস পরেই নতুন সেটেও তিনি নানা জাতের মুরগী পালন করবেন বলে জানান। তিনি বলেন, কোয়েল পাখি ও মুরগী পালনে তার খুব বেশি পরিশ্রম করতে হয়না। সকাল ও সন্ধ্যায় নিয়মিত তিনি খামার পরিচর্জা করেন। এ কারনে তার খামারে রোগ বালই নেই বললেই চলে। পাখি ও মুরগীর জন্য বাজারে কিছ ভাল ব্রান্ডের ওষুধ আছে সেগুলো নিয়মিত সেবন করালে কোন রোগ হওয়ার আশংকা থাকেনা। এ ছাড়া খামারে পালন করা পাখি ও মুরগীর সেট নিয়মিত পরিস্কার রাখলে কোন জীবানু সৃষ্টি হয় না ফলে রোগ হওয়ার কোন ঝুকি থাকে না। পালন করা এই সব পাখি ও মুরগীর খাবার সম্পর্কে তিনি বলেন, লেয়ার ফিড ও সোনালী ফিড খাওয়ানো হয়। দিনে নিয়মিত দুই বার খামারে খাবার দিলেই যথেষ্ট বলে তিনি মনে করেন। পাখি ও মুরগীর খামার নির্মানে তিনি কোন প্রশিক্ষন গ্রহন করেননি। তিনি বলেন, ইচ্ছা শক্তি ও কাজের প্রতি মনোযোগী হলেই কেবল ক্ষুদ্র থেকে বড় কিছু করা সম্ভব। এক সময়ের বেকার আক্তার হোসেন বাবু সমাজের বেকার যুবকদের কাছে একটি দৃষ্টান্ত বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

খবর ৭১/ ই:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here