খবর৭১: বাংলাদেশ থেকে সরাসরি আকাশপথে কার্গো নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়ে ফের ১০টি শর্ত দিয়েছে ব্রিটেন। যদিও ডিসেম্বর মাসেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ঘোষণা আসতে পারে- এমন প্রত্যাশা করছিল বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রনালয়।
সম্প্রতি দেশটির তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করে। এছাড়া, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়ে ইউকে ডিপার্টমেন্ট অব ট্রান্সপোর্ট (ডিএফটি) কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বৈঠকও করেন। এরপরই এসব শর্ত দেয় ব্রিটেন। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সম্প্রতি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার ক্ষেত্রে ১০টি শর্ত দিয়েছে ইউকে ডিপার্টমেন্ট অব ট্রান্সপোর্ট (ডিএফটি)। এর মধ্যে রয়েছে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা বিষয়ে দীর্ঘমেয়াদে দুজন পরামর্শক নিয়োগ, এভিয়েশন সিকিউরিটিতে ইউকে মডেল অনুসরণ করা, ইউকের একক নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ ইত্যাদি। ৩১ ডিসেম্বর ব্রিটেনের শর্তের বিষয়ে জবাব দেয়ার কথা ছিল মন্ত্রণালয়ের।
তবে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন মিডিয়াকে জানিয়েছেন, ‘শর্ত না; কিছু অবজারভেশন দিয়েছে। তারা (ব্রিটেন) মনে করে এগুলো মিট-আপ করা দরকার। সেভাবে আমরা তাদের জবাব দিচ্ছি। আমরা তাদের কাছে কিছু ক্ল্যারিফিকেশন চেয়েছি। তাদের বলেছি আগে নিষেধাজ্ঞা তুলে নাও। এছাড়া, ব্রিটেনে আমার সফরের সময় ডিএফটিকে আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নয়ন বিষয়ে অবহিত করা হয়েছিলো।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটেনের হাইকমিশনার আমাদের আশ্বাস দিয়েছিলেন। ক্রিসমাসে না পেলেও নিউ ইয়ারে পেয়ে যাবেন। প্রত্যাহারের বিষয়ে আমরা আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি।’
জানা গেছে, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা না থাকার অজুহাতে ২০১৬ সালের মার্চ মাসে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সে দেশে সরাসরি পণ্য পরিবহণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ব্রিটেন। এ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে আলোচনার জন্য গত ২৭ নভেম্বর ব্রিটেন সফরে যান বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। অন্যদিকে, যুক্তরাজ্য ৩ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল ২২ থেকে ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত শাহজালালের নিরাপত্তাব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ ও সিভিল এভিয়েশন অথরিটির সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে বৈঠক করে।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রনালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের মার্চে সরাসরি কার্গো ফ্লাইট পরিচালনার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির পর যুক্তরাজ্যের পরামর্শে শাহজালালের নিরাপত্তার দায়িত্ব দেওয়া হয় ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান রেডলাইনকে। প্রতিষ্ঠানটি সিভিল এভিয়েশনের নিরাপত্তা কর্মীদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি যাত্রীদের ব্যাগ তল্লাশিসহ বিভিন্ন আধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজনের পরামর্শ দেয়। ব্রিটেনের পরামর্শে রফতানি কার্গো জোনে বসানো হয়েছে এক্সপ্লোসিভ ডিটেকশন সিস্টেম (ইডিএস)। এছাড়া, এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নে (এএপিবিএন) ডগ স্কোয়াডে যুক্ত হয়েছে ৮টি কুকুর। কুকুরগুলো মাদক, অস্ত্র, বিস্ফোরকসহ ক্ষতিকর বস্তু শনাক্তে পারদর্শী।
ব্রিটেনের পরামর্শ অনুযায়ী বিমানবন্দরে উড়োজাহাজের হোল্ডে রাখার মতো ভারি ব্যাগ তল্লাশির জন্য ডুয়েল ভিউ এক্স-রে স্ক্যানিং মেশিন, হ্যান্ডব্যাগ তল্লাশির জন্য ডুয়েল ভিউ স্ক্যানিং মেশিন, লিকুইড এক্সপ্লোসিভ ডিটেকশন সিস্টেম (এলইডিএস), আন্ডার ভেহিক্যাল স্ক্যানিং সিস্টেম (ইউ ভি এস এস), ফ্যাপ ব্যারিয়ার গেট উইথ কার্ড রিডার, ব্যারিয়ার গেট উইথ আরএফআইডি কার্ড রিডার, এক্সপ্লোসিভ ডিটেকশন সিস্টেম (ইডিএস), এক্সপোসিভ ট্রেস ডিটেকশন (ইটিডি) যন্ত্রপাতি বসানোর কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
কার্গো পরিবহন রাষ্ট্রায়ত্ত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের অন্যতম একটি আয়ের উৎস। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বিমান মুনাফা করলেও গত অর্থবছরের তুলনায় কমেছে নিট মুনাফা। ১৯ ডিসেম্বর বিমানের ১০ম বার্ষিক সাধারণ সভায় ২০১৬-১৭ অর্থবছরের আর্থিক বিবরণী অনুমোদিত হয়।
সেখানে উল্লেখ করা হয়, কার্গো পরিবহনে ব্রিটেনের নিষেধাজ্ঞার কারণে বিমানের মুনাফায় প্রভাব পড়েছে। কার্গো পরিবহন খাতে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বিমান ৩৩ হাজার ৫৪২ মেট্রিক টন মালামাল পরিবহন করেছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে যা ছিল ৪০ দশমিক ৯৩১ মেট্রিক টন। পূর্ববর্তী অর্থবছরের চেয়ে ১৮ শতাংশ কম কার্গো পরিবহন করেছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে কার্গো খাতে বিমানের আয় হয়েছে ২৪৪ কোটি টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এ খাতে আয় ছিল ৩১৫ কোটি টাকা।
খবর৭১/এস: