খবর ৭১: বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতি ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, আগামী দিনে যে কর্মসূচি আসবে সে কর্মসূচির জন্য প্রস্তুত হতে হবে। আন্দোলন ও নির্বাচন সবকিছুর জন্য প্রস্তুতি নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হতে হলে আমাদেরকে আরেকবার জেগে উঠতে হবে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। অন্যান্য রাজনৈতিক দল যারা আছে তাদেরকেও আহ্বান জানাই আসুন, আপনারা আমরা সবাই ঐক্য করি। ঐক্যবদ্ধ হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করি। গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করি। নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করি।
রোববার সন্ধ্যায় মহানগর নাট্যমঞ্চে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন ও মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে এসব কথা বলেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ মাঠে গিয়ে ভোট চাচ্ছে আর আমরা ঘরে বসেও সমাবেশ করতে পারব না এটাতো কখনও হতে পারে না। স্বাধীন দেশ আওয়ামী লীগের জন্য আজকে আমরা পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ। কাজেই আওয়ামী লীগের শৃঙ্খলমুক্ত হতে হবে।
খালেদা জিয়া বলেন, আমাদের মাধ্যমেই দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র এসেছিল, জিয়াউর রহমানের হাত ধরে। আবারও বিএনপির মাধ্যমে এ দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে।
মুক্তিযোদ্ধা ও বিএনপির কথা শুনলে সরকারের মাথা খারাপ হয়ে যায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা (সরকার) মুক্তিযোদ্ধাদের সমাবেশের অনুমতি নিয়েও গড়িমসি করেছে। এই হলো মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি আওয়ামী লীগের প্রীতি ও সম্মান। তারা আসলে মুক্তিযোদ্ধাদের ভয় পায়। মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান অনেক বেশি। আওয়ামী লীগ কাউকে সম্মান দিতে জানে না তাই জনগণও তাদেরতে সম্মান দেয় না।
রাষ্ট্রীয় কর্মসূচিতে বিএনপি দাওয়াত পায় না জানিয়ে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধাদেরও এসব প্রোগ্রামে দাওয়াত করা হয় না। বিএনপি জোটের অন্যতম শরিক বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম বীর প্রতীককে দেখিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, এই যে আমাদের ইব্রাহিম সাহেব। তিনি যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা। তাকে ১৬ ডিসেম্বর প্যারেড গ্রাউন্ডে দাওয়াত দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি দাওয়াত পাওয়ার পরও ভেতরে প্রবেশ করতে পারেননি।
পাকিস্তানি কায়দায় দেশ চলছে মন্তব্য করে বিএনপি প্রধান বলেন, আওয়ামী লীগ ছাড়া সবার দাবি সবার অংশগ্রহণে আমরা নির্বাচন চাই। আমাদের দাবি নির্বাচন হতে হবে অবাধ ও সুষ্ঠু নিরপেক্ষ। শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে তা হবে না।
গুম-খুন পরিস্থিতিসহ নানা ইস্যুতে সরকারকে দায় করে খালেদা বলেন, প্রধান বিচারপতিকে তার এজলাসে আর বসতে দেয়া হলো না। বাড়িতেও বন্দি করে রাখা হয়েছিল। তার অপরাধ এই সরকারের অপরাধ নিয়ে তিনি সত্য কথা বলেছেন। এই সংসদ অকার্যকর কোনো জবাবদিহিতা নাই বলেছিলেন। তাই তাকে অপসারণ করল। তাকে দেশের বাইরে যেতে বাধ্য করা হল। তার স্ত্রীকে যেতে দেয়া হল না। বিদেশেও তাকে নানাভাবে হয়রানি করা হল। প্রধান বিচারপতি হিসেবে যে সম্মানটুকু পাওয়ার তাও দেয়া হয়নি। তিনি দেশে আসতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাকে জোর করে ইস্তফা দেয়া হয়েছে।
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, সচিবালয়ে রাতের অন্ধকারে পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে। কিন্তু ভালো ভালো অফিসারদের দিনের পর দিন বছরের পর বছর ওএসডি করে রাখা হচ্ছে। একসময় তাদেরকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। একই অবস্থা পুলিশেও। ভালো অফিসারদের পদোন্নতি না দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে।
মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রতিবেশি ভারতের অনেক অবদান ছিল উল্লেখ করে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আমাদের আশ্রয় দিয়েছে। নানাভাবে সহযোগিতা করেছে। যুদ্ধ শেষে আমাদের জনগণ দেশের টানে ফিরে এসেছিলেন।
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি ইসতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে বক্তব্যে রাখেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, ড আব্দুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম।
এছাড়াও বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরীক লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ারম্যান ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম (বীর প্রতীক) প্রমুখ।
মুক্তিযোদ্ধা দলের এই সম্মেলনে ইসতিয়াক আজিজ ইলফাত ও সাদেক আহমেদ খান যথাক্রমে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পুনর্নির্বাচিত হন। খালেদা জিয়া তাদের নাম ঘোষণা করে দ্রুত পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার নির্দেশ দেন।