এম শিমুল খান, গোপালগঞ্জ : গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলার সন্ত্রাসী সনেট ওরফে পিস্তল সনেট পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছে বলে জানা যায়।
পুলিশ ও স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, কাশিয়ানী উপজেলার সন্ধা বাজার এলাকার শহীদ মিয়ার ছেলে সনেট ওরফে পিস্তল সনেট সোমবার রাতে কাশিয়ানী পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়। তার বিরুদ্ধে এলাকায় চাঁদাবাজি, অপহরন, মাদক ব্যবসা, অস্ত্র ব্যবসা, নারী ধর্ষনসহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয় সুত্রে আরো জানা যায়, কাশিয়ানী উপজেলা ছাত্রলীগের সম্মেলনের দিন সন্ধায় কাশিয়ানী কলেজের ছাত্র ও স্থানীয় বাসিন্দা করম আলী সিকদারের ছোট ছেলে মাহমুদ উল্লাকে দুটি মাইক্রো বাসে ২০/২৫ জনের একটি দল অপহরন করে নিয়ে যায়। এ সময় কাশিয়ানী থানা পুলিশি অভিযান চালিয়ে মাহমুদ উল্লাকে কাশিয়ানী রেল স্টেশনের পেছন থেকে উদ্ধার করে।
এ ব্যাপারে মাহমুদ উল্লাহর সাথে কথা হলে সে জানায়, সনেট ওরফে পিস্তল সনেট ও তার বন্ধু শামীম মৃধা প্রায় ২০/২৫ জনের একটি দল দুটি মাইক্রো বাসে অস্ত্রের মুখে তাকে জিম্মি করে অপহরন করে। তাকে মেরে ফেলার জন্য কাশিয়ানী রেল স্টেশনের পেছনে নিয়ে যায়। এ সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তারা পালিয়ে যায়। তখন পুলিশ আমাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। সে বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
এ ব্যাপারে মাহমুদ উল্লাহর বড় ভাই এনামুল হক রনির সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমার ভাইকে মেরে ফেলার জন্য সনেট ওরফে পিস্তল সনেট ও তার বন্ধু শামীম মৃধাসহ প্রায় ২০/২৫ জনের একটি দল দুটি মাইক্রো বাসে অস্ত্রের মুখে তাকে জিম্মি করে অপহরন করে। তাকে মেরে ফেলার জন্য কাশিয়ানী রেল স্টেশনের পেছনে নিয়ে যায়। এ সময় পুলিশ সেখানে গেলে তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে তারা পালিয়ে যায়। তিনি আরো বলেন, সনেট ও তার বন্ধু শামীম মৃধা এলাকায় সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। তারা এলাকায় চাঁদাবাজি, অপহরন, মাদক ব্যবসা, অস্ত্র ব্যবসা, নারী ধর্ষনসহ সকল অপকর্ম করে থাকে। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠ বিচার চাই।
সনেট ওরফে পিস্তল সনেট সোমবার রাতে কাশিয়ানী পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পরে মঙ্গলবার রাতে কাশিয়ানী থানা পুলিশ ও জেলা ডিবি পুলিশের দুটি দল সনেটকে নিয়ে উপজেলার চাপ্তা এলাকায় অস্ত্র উদ্ধারে গেলে সেখানে পুলিশের সাথে সনেট গ্রুপের কথিত বন্দুক যুদ্ধ হয়। এ সময় কথিত বন্দুক যুদ্ধে সনেটসহ জেলা ডিবি পুলিশের তিন সদস্য আহত হয়। আহতরা হলেন, জেলা ডিবি পুলিশের এস আই গনেশ, কনস্টেবল ফরহাদ ও কনস্টেবল মাসুদ। তবে প্রাথমিক চিকিৎসা নেওয়ার পর পুলিশ চলে গেলেও সনেট বর্তমানে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা হাসপাতালে চিকিৎসাধীর রয়েছে।
এ ব্যাপারে চিকিৎসাধীন সনেটের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মঙ্গলবার রাত আনুমানিক ২টার দিকে কাশিয়ানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে এম আলীনুর আমাকে হাত ও চোখ বেধে গাড়ীতে করে তুলে বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাঘুরি করে এর এক পর্যায়ে চাপতা এলাকায় বালুর মাঠে আমাকে গাড়ী থেকে নামিয়ে মাটিতে শুয়ে দেয় এবং সে আমার বুকের উপরে উঠে বলে আজ তোর শেষ দিন অস্ত্র কোথায় আছে বলে দে না হলে তোকে ক্রস ফায়ারে দেব। যদি অস্ত্র দিয়ে দিস তাহলে তোর প্রান ভিক্ষা দেব। এরই এক পর্যায়ে ওসি নিজেই পিস্তল ঠেকিয়ে আমার ডান পায়ে গুলি করে এ সময় আবার তিনি আমার বাম পায়ে গুলি করতে গেলে আমি তাকে জড়িয়ে ধরি ও প্রান ভিক্ষা চাই। সে আরো বলে সেখানে বন্দুক যুদ্ধের কোন ঘটনা ঘটেনি। আমি নিজে দেখেছি করম সিকদার আমাকে মেরে ফেলার জন্য ওসি সাহেবকে টাকা দিয়েছে। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠ বিচার চাই।
এ ব্যাপারে সনেটের মা বেবি বেগম বলেন, ওসি আমার নিরীহ ছেলেকে শুধু শুধু গুলি করেছে। ওসি সাহেব করম আলী সিকদারের কাছ থেকে টাকা খেয়ে আমার ছেলেকে মেরে ফেলার চেস্টা করেছে। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠ বিচার চাই।
এ ব্যাপারে কাশিয়ানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম আলীনুর হোসেন বলেন, সনেট ওরফে পিস্তল সনেট ও তার বন্ধু শামীম মৃধার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ রয়েছে। তাদের কাছে অবৈধ অস্ত্র রয়েছে যা দিয়ে তারা এলাকায় চাঁদাবাজি, অপহরন, মাদক ব্যবসা, অস্ত্র ব্যবসা, নারী ধর্ষনসহ সকল অপকর্ম করে থাকে। তিনি আরো বলেন, তাকে নিয়ে মঙ্গলবার রাতে অস্ত্র উদ্ধারে গেলে পুর্ব থেকে ওৎ পেতে থাকা সন্ত্রাসীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় এ সময় পুলিশও পাল্টা গুলি চালালে ঘটনা স্থলে সনেটসহ জেলা ডিবি পুলিশের তিন সদস্য আহত হয়।
তিনি আরো বলেন, ঘটনাস্থল থেকে পিস্তল, ম্যাগজিন ও দুই রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। আহত সনেটকে প্রথমে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে পাঠানো হয়। সনেটের বিরুদ্ধে এলাকায় চাঁদাবাজি, অপহরণ, মাদক ব্যবসা, অস্ত্র ব্যবসা ও ধর্ষণসহ বিভিন্ন অভিযোগে ৮টি মামলা রয়েছে বলেও জানান তিনি। তিনি আরো বলেন, সনেটের বিরুদ্ধে মামলা লেখার কাজে ব্যস্ত আছি আপনাদের যদি আর কিছু জানার থাকে পরে ফোন দিবেন বলে ফোনটি কেটে দেয়।
এ ব্যাপারে মুকসুদপুর সার্কেলের এএসপি হোসাইন মোহাম্মদ রায়হানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মঙ্গলবার রাতে সনেটকে নিয়ে কাশিয়ানী থানা পুলিশ ও জেলা ডিবি পুলিশের দুটি টিম অস্ত্র উদ্ধারে গেলে পুর্ব থেকে ওৎ পেতে থাকা সন্ত্রাসীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় এ সময় পুলিশও পাল্টা গুলি চালালে ঘটনা স্থলে সনেটসহ জেলা ডিবি পুলিশের তিন সদস্য আহত হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। তবে বিস্তারিত জানতে হলে আপনারা কাশিয়ানীর ওসি সাহেবকে ফোন দিন।
এ ব্যাপারে পুলিশ সুপারের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি বর্তমানে কোটালীপাড়ায় ব্যস্ত আছি। আপনারা কাশিয়ানীর ওসি সাহেবের সাথে যোগাযোগ করেন তা হলে সব জানতে পারবেন।
খবর৭১/এস: