খবর ৭১:বাচ্চাদের দেখলে কে না আদর করতে চান। ওদের স্পর্শে স্বর্গীয় অনুভূতি মেলে।
শিশুদের কোলে নিয়ে বা জড়িয়ে ধরে চুমু দেওয়া আদরের অতি সাধারণ বর্হিপ্রকাশ। কিন্তু এই চুমুতেই হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে গিয়েছিল আমেরিকার এক পরিবারে। এক চুমুর কারণে সংক্রমিত রোগে মারা যায় তাদের শিশুটি। সুস্থ-সবল হয়ে জন্ম নিলেও মাত্র ১৮ দিনের মাথায় দুনিয়া ত্যাগ করে সে। ঘটনাটি এ বছরের জুলাইয়ের। কিন্তু এ ঘটনা সব সময়ের জন্যে অভিভাবকদের কাছে শিক্ষণীয় বিষয় হতে পারে।
ওর নাম দেওয়া হয়েছিল মারিয়ানা সিফরিট। জন্মের এক সপ্তাহের মধ্যে চুমুর কারণে সে মেনিনজাইটিসে আক্রান্ত হয়। যে চুমু দিয়েছিলেন তাদের দেহে ছিল এইচএসভি-১।
এটা এক ধরনের ভাইরাস। এইচএসভি-১ একেবারে সেই হার্পেস ভাইরাসের মতোই যার কারণে সাধারণ সর্দি হয়। ইউএস সেন্টার্স ফর ডিজিসেস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন জানিয়েছিল, এই ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে মেনিনজাইটিস হওয়া বিরল ঘটনা। এতে মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডের ওপর ছেয়ে থাকা টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
চুমুর কারণেই যে মারিয়ানা মেনিনজাইটিসে আক্রান্ত হয়েছিল তা বুঝতে পারেন চিকিৎসকরা। তার বাবা-মা নিকলোল এবং শেন সিফরিটের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। তাদের দেহে কোনো ভাইরাস মেলেনি। তার মানে পরিবারের অন্য কেউ কিংবা আত্মীয়-স্বজনদের কেউ আদর করে শিশুটিকে চুমু দেয়। এতে দোষের কিছু নেই। কিন্তু ওই ব্যক্তির দেহে বাস করছিল এই ভাইরাস।
শিশুটি তার জীবনের শেষ সপ্তাহ কাটায় ইউনিভার্সিটি অব লোয়া চিলড্রেন্স হসপিটালে। তার দেহে আরো নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিয়েছিল। সব কিছুর নেপথ্যে ছিল ওই চুমু।
নিকোল সিফরিট তার ফেসবুক পোস্টে পৃথিবীর সবকল বাবা-মাকে সাবধান করতে চেয়েছিলেন। শিশুদের চুমু খাওয়া থেকে বিরত হতে সচেতন থাকতে বলেছেন সবাইকে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে নিকোল জানান, জুলাইয়ের এক তারিখে পৃথিবীতে আসে মারিয়ানা। কিন্তু এক সপ্তাহ পরই দুঃস্বপ্নের শুরু। সে খাচ্ছিল না। ঘুম থেকে উঠতো না। জ্বর, আলোতে সংবেদনশীলতা, মাথাব্যথা বা ঘাড় শক্ত হয়ে আসার মতো লক্ষণগুলো প্রকাশ পাচ্ছিল। এসব তথ্য তাকে জানিয়েছিলেন চিকিৎসকরা।
ক্যালিফোর্নিয়ার কালাবাসাস পেডিয়াট্রিক্সের বিশেষজ্ঞ ড. তানিয়া আল্টমান জানান, বড়দের স্পর্শ বা চুমু থেকে শিশুর দেহে সহজেই ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটতে পারে। কিন্তু তা মেনিনজাইটিস অবধি যাওয়া সচরাচর দেখা যায় না। জন্মের প্রথম দুই মাস শিশুর জন্যে খুবই জটিল সময়। তাদের যেকোনো অবস্থা বা যে সে চাইলেই স্পর্শ করা উচিত নয়। এ সময়টাতে ভাইরাস সংক্রমণসহ আরো অন্যান্য রোগ দেখা দিতে পারে।
স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ড. ন্যান্সি স্নাইডারম্যান জানান, সুস্থ হয়ে জন্মানোর পরও বড়দের অচেতনতার কারণে শিশুর জীবন হুমকির মুখে পড়ে। বিশেষ করে পরিবারের সদস্য বা অন্যদের চুমু এক ভয়ানক বিষয়। প্রথম তিন সপ্তাহ তাদের দেহে রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতা সেভাবে বিকাশ লাভ করে না। তাই বাবা-মায়েদের সাবধান থাকতে হবে। তাদেরও শিশুটাকে চুমু খাওয়া উচিত নয়। অন্যদেরও বিনয়ের সঙ্গে এ কাজটি না করতে অনুরোধ করতে হবে।
পৃথিবীতে এসে শেষ পর্যন্ত আদরই তার জন্যে মরণ হয়ে দেখা দিলো। তাকে একটা ছোট্ট গোলাপী কফিনে কবরস্থ করা হয়। এই অবর্ণনীয় ক্ষতি থেকে শিক্ষা পেয়েছেন তার বাবা-মা। সেই শিক্ষা ছড়িয়ে পড়ুক সবার ঘরে ঘরে।
সূত্র : সিএনএন
খবর ৭১/ এস: