খবর৭১: শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন হলে আবারও আন্দোলনে যাবে বিএনপি-দলের উপদেষ্টাদের সঙ্গে বৈঠকেও বিষয়টি জানিয়ে দিলেন চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এ জন্য তাদের প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার রাতে উপদেষ্টাদের সঙ্গে প্রায় তিন ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করেন খালেদা জিয়া। বৈঠকে আগামী নির্বাচনে দলের করণীয় নিয়েও খোলামেলা কথা হয়। এ সময় খালেদা জিয়া এমন আহ্বান জানান বলে ঢাকাটাইমসকে জানিয়েছেন বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা।
২০১৪ সালে নির্বাচন ঠেকানোর আন্দোলন এবং এক বছর পর সরকার পতনের আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার পর বিএনপি আগামী নির্বাচনকে ঘিরে নমনীয় অবস্থান নিয়েছে বলে রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রচার ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে আবারও সেই পুরনো দাবিতে ফিরে যাওয়ার বিষয়ে ইঙ্গিত দিচ্ছেন খালেদা জিয়া। এর মধ্যে এক বছর আগে তিনি নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের দাবি তুলে জানান, যথা সময়ে এই সরকারের রূপরেখা দেয়া হবে। কিন্তু বিএনপি নেতারা জানান, এই রূপরেখা দেবেন না তারা, আগের তত্ত্বাবধায়কের দাবিতে ফিরে গেছেন তারা।
খালেদা জিয়ার সঙ্গে মঙ্গলবার রাতের বৈঠকে উপস্থিত একজন নেতা বলেন, ‘ম্যাডাম আমাদেরকে নির্বাচনের জন্য যেমন প্রস্তুত থাকতে বলেছেন, তেমনি ওই নির্বাচন যদি ২০১৪ সালের মতো শেখ হাসিনার অধীনে হয়, তাহলে আন্দোলনে নামার জন্য প্রস্তুত থাকতেও বলেছেন।’
গত কয়েক মাস ধরে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতারা এলাকায় যোগাযোগ বাড়িয়েছেন। মনোনয়নের জন্য কেন্দ্রে চেষ্টা তদবিরও শুরু হয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে কেউ কেউ যে কোনো পরিস্থিতিতে নির্বাচনে অংশ নেয়ার, কেউ কেউ শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার কথা বলছেন।
এই বিষয়গুলো নিয়ে উপদেষ্টাদের কথাবার্তা শোনার পর খালেদা জিয়া বিএনপির অবস্থান নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাবে না বিএনপি। নির্বাচনকালীন সংসদ ভেঙে দিতে হবে। শেখ হাসিনাকে রেখে কোনো নির্বাচন নয়। এজন্য নির্বাচনের পাশাপাশি আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে হবে। জনসম্পৃক্ত কর্মসূচি বাড়াতে হবে।
উপদেষ্টাদের খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমি নিজেও বিভাগীয় পর্যায়ে সমাবেশ করব। সবাইকে সংগঠনের শৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে।’
জানতে চাইলে খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু বিস্তারিত কিছু না জানিয়ে বলেন, ‘বৈঠকে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিসহ সাংগঠনিক বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। চেয়ারপারসন সার্বিক বিষয়ে আমাদের মতামত নিয়েছেন।’
তিন মাস চিকিৎসা শেষে ১৮ অক্টোবর লন্ডন থেকে দেশে ফেরার পর স্থায়ী কমিটি, ভাইস চেয়ারম্যান ও ২০-দলীয় জোটের নেতাদের সঙ্গেও বসেন বিএনপি প্রধান।
এর আগে গত ১৫ নভেম্বর ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকেও নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান শেখ হাসিনার থাকলে ভোটে না যাওয়ার কথা জানান খালেদা জিয়া। শরিক দলের নেতারাও এই অবস্থানকে সমর্থন করেন।
সাংগঠনিক দুর্বলতার প্রতি উপদেষ্টাদের দৃষ্টি আকর্ষণ
বৈঠকে খালেদা জিয়ার আন্দোলনের প্রস্তুতির জবাবে বিএনপির সাংগঠনিকভাবে ‘দুর্বলতার’ বিষয়টি নিয়ে নেত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টারা।
২০১৪ সালে নির্বাচন ঠেকানোর আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার পর বিএনপির সাংগঠনিক দুর্বলতার বিষয়টি সামনে আসে। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকায় আন্দোলন গড়ে তোলার কিছু করতে না পারায় নেতাদের ওপর ক্ষুব্ধ হন খালেদা জিয়া। ভেঙে দেয়া হয় মহানগর কমিটি।
এরপর গত প্রায় চার বছরে দেশের বিভিন্ন জেলা, মহানগর ও বিভাগীয় কমিটি পুনর্গঠনের কাজ চলেছে বিএনপিতে। এই পুনর্গঠন নিয়ে আবার বিভেদ, সংঘর্ষ হয়েছে বিভিন্ন এলাকায়। ফলে সাংগঠনিক দুর্বলনাগুলো এখনও রয়ে গেছে। আর নানা সময় দেশব্যাপী কেন্দ্রঘোষিত কর্মসূচি বাস্তবায়ন হয়েছে অল্প কিছু এলাকায়।
বৈঠকে যারা উপস্থিত ছিলেন
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টার ৭৬ পদের মধ্যে হারুনার রশীদ মুন্নু, ফজলুর রহমান পটল ও আখতার হামিদ সিদ্দিকী মারা গেছেন। বাকিদের মধ্যে ৫৩ জন এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
এরা হলেন: উকিল আবদুস সাত্তার, লুৎফুর রহমান খান আজাদ, সাবিহউদ্দিন আহমেদ, আমানউল্লাহ আমান, মিজানুর রহমান মিনু, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, গাজী মাজহারুল আনোয়ার, আ ন হ আখতার হোসেন, মাজেদুল ইসলাম, জয়নুল আবদিন ফারুক, জয়নাল আবেদিন ভিপি জয়নাল, মনিরুল হক চৌধুরী, মেজর (অব.) কামরুল ইসলাম, সৈয়দ মেহেদি আহমেদ রুমি, এম এ কাইয়ুম, জহুরুল ইসলাম, ইসমাইল জবিউল্লাহ, আবদুর রশিদ, হায়দার আলী, জিয়াউর রহমান খান, তাজমেরী এস ইসলাম, শাহিদা রফিক, গোলাম আকবর খোন্দকার, কাজী আসাদ, কবির মুরাদ, অধ্যাপক শাহজাহান মিয়া, একরামুজ্জামান, ফজলুর রহমান, হাবিবুর রহমান হাবিব, আতাউর রহমান ঢালী, নজমুল হক নান্নু, তাহমিনা রুশদীর লুনা, এনামুল হক চৌধুরী, সিরাজুল ইসলাম, সুকোমল বড়ুয়া, বিজনকান্তি সরকার, আবদুল হক, তৈমূর আলম খন্দকার, কামরুল মুনির, বোরহান উদ্দিন, আবদুল বায়েছ ভুঁইয়া, আবদুস সালাম, শাহজাদা মিয়া, এস এম ফজলুল হক, এম এ লতিফ, আবদুল কুদ্দুস, আবদুল মান্নান তালুকদার, ফরহাদ হালিম ডোনার, খন্দকার মুক্তাদির আহমেদ, মামুন আহমেদ, সৈয়দ শামসুল আলম, হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু, মাহবুবুর রহমান প্রমুখ।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
খবর৭১/জি: