খবর৭১:মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর নিরাপত্তা বাহিনীর নিপীড়ন আইনগতভাবে ‘গণহত্যা’ বা ‘জাতিগত নিধনের’ সংজ্ঞায় পড়ে কি না সে বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র মন্তব্য না করলেও নৃশংসতার প্রমাণ দেখার কথা জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের সহকারী মন্ত্রী সাইমন হ্যানশ। গত সপ্তাহে মিয়ানমার ও বাংলাদেশ সফর করা ওই মন্ত্রী গত মঙ্গলবার রাতে যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্র দপ্তরে ব্রিফিংয়ের সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘জাতিগত নিধনের’ মতো বিষয় নির্ধারণের দায়িত্ব তাঁর নয়।
এদিকে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ সর্বসম্মত এক বিবৃতিতে রাখাইন রাজ্যে সহিংসতা ও সামরিক বাহিনীর মাত্রাতিরিক্ত বল প্রয়োগ বন্ধ করে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানানোয় নাখোশ হয়েছে দেশটির স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চির দপ্তর। ওই বিবৃতি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের আলোচনায় বিরূপ প্রভাব ফেলবে বলেও সু চির দপ্তর আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। সুচির দপ্তর বলেছে, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের ইস্যুগুলোর সমাধান কেবল দ্বিপক্ষীয়ভাবেই সম্ভব। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বিবৃতিতে বিষয়টিকে অগ্রাহ্য করা হয়েছে।
সুচির দপ্তরের বিবৃতিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলীকে ১৬ থেকে ১৮ নভেম্বর মিয়ানমার সফরে আমন্ত্রণ জানানোর কথা বলা হলেও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওই সময়ে যেতে পারছেন না। কারণ ওই সময়ই রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য চীন, জাপান, জার্মানি ও সুইডেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাংলাদেশে আসার কথা রয়েছে।
রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে মিয়ানমারের ওপর বৈশ্বিক চাপ বাড়াতে কূটনৈতিক তৎপরতার অংশ হিসেবে গতকাল বুধবার মিয়ানমারের প্রতিবেশী দেশ ভারত, চীন, থাইল্যান্ড ও লাওসের রাষ্ট্রদূতদের পরিস্থিতি নিয়ে ব্রিফ করার সময়ও বিষয়টি তুলে ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। মাহমুদ আলী জানান, ২০ ও ২১ নভেম্বর আসেমের বৈঠক শেষে ২২ ও ২৩ নভেম্বর মিয়ানমারে অবস্থান করে রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলোচনা করতে তিনি রাজি আছেন।
ধারণা করা হচ্ছে, রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলোচনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ চার দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বাংলাদেশ সফর ঠেকাতেই মিয়ানমার ওই সময়ে মাহমুদ আলীকে নেপিদো সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছে।
এদিকে আগামী ১৫ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসনের মিয়ানমার সফরে যাওয়ার কথা রয়েছে। এর প্রাক্কালে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখতে গত সপ্তাহে মিয়ানমার ও বাংলাদেশ সফর করে পররাষ্ট্র দপ্তরের জনসংখ্যা, শরণার্থী ও অভিবাসনবিষয়ক ভারপ্রাপ্ত সহকারী মন্ত্রী সাইমন হ্যানশের নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল। যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্র দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সাইমন হ্যানশ গত মঙ্গলবার রাতে ওয়াশিংটনে পররাষ্ট্র দপ্তরে তাঁর সফর নিয়ে ব্রিফ করেন।
তিনি বলেন, মিয়ানমারে তাঁরা সরকারি কর্মকর্তা, রোহিঙ্গা ও রাখাইন সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং সাম্প্রতিক সময়ে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুতদের একটি শিবির পরিদর্শন করেছেন। মিয়ানমার সরকারকে তাঁরা আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠা, স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নিপীড়নের অভিযোগগুলো তদন্ত এবং দায়ীদের বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছেন।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের শিবিরগুলো পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, শিবিরগুলোতে আমরা যা দেখেছি তা বেদনাদায়ক। শরণার্থী সংকটের মাত্রা ব্যাপক। ২৫ আগস্ট থেকে ছয় লাখেরও বেশি বাস্তুচ্যুতির ঘটনা ঘটেছে। তিনি বলেন, পরিস্থিতি কঠিন। মানুষ কষ্ট করছে। অনেক শরণার্থী কাঁদতে কাঁদতে তাদের গ্রামগুলো জ্বালিয়ে দেওয়ার বর্ণনা দিয়েছে। স্বজনদের তাদের সামনেই হত্যা করা হয়েছে। এটি সহ্য করা কঠিন। প্রবল মানসিক আঘাত সত্ত্বেও অনেকে নিরাপত্তা, সুরক্ষা ও অধিকারের নিশ্চয়তা পেলে তাদের বাড়িঘরে ফিরে যেতে জোরালো আগ্রহ দেখিয়েছে।
খবর৭১/জি: